ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত এবং চিকিৎসাগত সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে

দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে টানা পঞ্চম দিনের মতো দুই হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বস্তুত, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে, এমনটি আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। এ অশঙ্কার বড় কারণ ইউরোপ, আমেরিকায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধি।  ইতালি,  স্পেন,  যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশেও সংক্রমণ বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের খবরও মিলছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশে টানা বেড়ে চলা আক্রান্তের সংখ্যার মধ্য দিয়ে কভিড পরিস্থিতির অবনতির সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। 

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে এখন সার্বিক সতর্কতাই কাম্য।

লক্ষ করা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সাধারণের মাঝে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা দূরে থাক, ন্যূনতম মাস্কও ব্যবহার করছে না বিপুলসংখ্যক মানুষ। রাস্তাঘাটে দেখা যায় অনেকে মাস্ক ছাড়াই দিব্যি চলাফেরা করছে। মাস্ক না ব্যবহারের কারণে অনেককেই এরই মধ্যে জরিমানা করা হয়েছে বটে, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্কের ব্যবহার—এ তিনটি বড় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এগুলো মেনে চলায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি বাড়াতে হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, এনজিও, যুবসমাজের সহযোগিতা নিয়ে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে জনসমাগম বেড়েছে, অথচ স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ভাইরাস শীত ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে আর শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। তাছাড়া শীতে মানুষের মধ্যে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখার প্রবণতা বাড়ে। বলা বাহুল্য, আবদ্ধ ঘরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই সব দিক বিবেচনা করে শীত মৌসুমে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিতে হবে প্রশাসনের। 

সত্য যে শনাক্তকরণ পরীক্ষার দৈনিক সংখ্যা যেভাবে কমে গেছে, তাতে দেশব্যাপী নতুন করে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কম নমুনা সংগ্রহ করা হলে পরীক্ষার সংখ্যাও কম হবে, এটিই স্বাভাবিক। কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে। এটা আমলে নিয়ে পরীক্ষা অবশ্যই আরো বাড়াতে হবে। সমস্যা হলো, জনসাধারণের বেশির ভাগই চলমান মহামারীর সঙ্গে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে প্রতীয়মান। জ্বর, গলাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়ার পরও অনেকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  দিক থেকেও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর প্রতি আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। উভয় প্রবণতাই কভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতা বাড়াতে পারে বৈকি। 

কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। আগের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেটি লক্ষ রাখতে হবে। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দর থেকে শুরু করে দেশের এক্সিট-অ্যাকসেস পয়েন্টগুলোয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিদেশ থেকে আগতদের করোনা সনদ আনার পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলা হচ্ছে। এটি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করে বাড়াতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ব্যবস্থাও। সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিতের প্রস্তুতিও নেয়া চাই।  

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভাইরাসটি দ্রুত স্ট্রেন পরিবর্তন করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এমনটি হলে মৃত্যুহার বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সেজন্য পরীক্ষা করতে মানুষের আগ্রহ বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে দরকার কভিড চিকিৎসার মানসহ সামগ্রিক চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করতে মনোযোগী হওয়া। ঢাকার বাইরে কভিড রোগীদের চিকিৎসা, বিশেষত আইসিইউ সেবা ও অক্সিজেনের প্রাপ্যতায় এখনো ঘাটতি রয়েছে। এদিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরি। যেসব দেশে কভিড সংক্রমণ বাড়ছে, তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, কীভাবে করোনা মোকাবেলা করছে তা লক্ষ রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বারবারই কভিড পরিস্থিতির অবনতি বিষয়ে সতর্কবার্তা এবং সংশ্লিষ্টদের সক্রিয়তা বাড়ানো ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেবে বলে প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন