নেটফ্লিক্স ও আফ্রিকান সিনেমা

‘মেড বাই আফ্রিকানস’

ফিচার ডেস্ক

আফ্রিকার সিনেমা নিয়ে নেটফ্লিক্সের উদ্যোগ—‘মেড বাই আফ্রিকানস, ওয়াচড বাই দ্য ওয়ার্ল্ড উদ্যোগকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে নাইজেরিয়ার অভিনেতা/পরিচালক জেনেভিয়েভ এননাজি বলেন, কখনো আপনার গল্প বলার জন্য কি কাউকে পেয়েছেন, নিজের কথা নিজেই বলতে শুরু করুন... উদ্যোগে থাকছে নতুন অরিজিনাল কন্টেন্ট এবং পুরনো আফ্রিকান ক্ল্যাসিক। এসব ক্ল্যাসিক বা অন্য কন্টেন্টগুলো আগে কখনো কোথাও স্ট্রিমিং হয়নি। স্ট্রং ব্ল্যাক লিড (২০১৮) ছবির মতো এসব কন্টেন্টে কৃষ্ণাঙ্গদের গল্পই তুলে ধরা হবে। তবে স্ট্রং ব্ল্যাক লিডে এমন কিছু ছিল না যা এবার হবে। সব কন্টেন্ট যেমন আফ্রিকানদের নিয়ে তেমনি সেগুলো নির্মাণও করবেন তারাই।

নেটফ্লিক্সের উদ্যোগ এমন সব গল্পের পথ উন্মোচন করছে যেগুলো আফ্রিকার অভিজ্ঞতার বিভিন্ন অংশকে নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরবে। আফ্রিকানদের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে বড়পর্দায় তাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করাটা একটা নিয়ম হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নেটফ্লিক্সের উদ্যোগ অফ্রিকার দর্শক শিল্পীদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।


মেড বাই আফ্রিকানস, ওয়াচড বাই দ্য ওয়ার্ল্ড বিশ্বের দর্শকদের কী উপহার দিতে যাচ্ছে? নেটফ্লিক্স একদিকে যেমন আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানীয় কন্টেন্ট কিনে নিয়েছে, তেমনি অনেক কন্টেন্ট নির্মাণও করছে। টিভি শো চলচ্চিত্র। কাজিসো লেডিগা পার্ল থুসি ২০১৮ সালে তাদের রোমান্টিক ড্রামা ক্যাচিং ফিলিং ছবির টিভি শো নির্মাণ করবেন। বছরের শুরুতে প্রচারিত হয়েছে নেটফ্লিক্স সিরিজ কুইন সোনো। গত অক্টোবর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সিনসিয়ারলি ডেইজি। এটি কেনিয়ার ছবি। কেনিয়ার আরো ছবিটশ গিটোংগর রোমকোম ডিসকানেক্ট টম হোয়াইটওর্থের পোচারও নেটফ্লিক্সে তাদের জায়গা খুঁজে পেয়েছে।


আফ্রিকার নির্মাতা ফ্রেড ওনিয়াংগোর মতে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে যে যা- বলুক না কেন তার মতো আফ্রিকান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য নেটফ্লিক্স হচ্ছে লাইফলাইন। কেনিয়ার নাইরোবিতে চলচ্চিত্র নির্মাতার সবসময় চলচ্চিত্র পরিবেশকদের অভাবে ভোগেন। ছবি নির্মাণের পর তারা সেটা প্রদর্শনের সুযোগ পান না, হলে নিয়ে হাজির করতে পারেন না। নিজের পকেট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেই কেবল ছবির জন্য সিনেমা হলের ব্যবস্থা করা সম্ভব। আফ্রিকাজুড়েই চলচ্চিত্র শিল্পের একই অবস্থা। তবে ভিন্ন অবস্থা দেখা যায় নাইজেরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকায়। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকায় স্টার-কিনোকোর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল পিকচারসের মতো পরিবেশকদের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিবেশনা গতি পেয়েছে। তবে এদের গুরুতর একটি সংকট রয়েছে। এরা মূলত বড় হলিউড স্টুডিওগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। তার কখনো আফ্রিকার তৈরি ছবি বিদেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেয় না। নাইজেরিয়ার ছবি দেশের বাইরে গেলে যায় পাইরেসির মাধ্যমে।

ফ্রেড ওনিয়াংগো বলেন, আফ্রিকান পরিচায়টা সিনেমায় যেন একটা খেলার বস্তু। হলিউড আফ্রিকাকে একটা নির্দিষ্ট, আরোপিত স্থান হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা আফ্রিকানরা বিয়ন্সে পরিচালিত ছবি ব্ল্যাক ইজি কিং বা রায়ান কুগলারের ব্ল্যাক প্যান্থার ছবিকে আমরা আফ্রিকানার প্রশংসা করতে পারি, কিন্তু এটা পশ্চিমে আফ্রিকার পুরো গল্প তুলে ধরে না। বিষয়টা আফ্রিকার মানুষও জানে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব ছবিতে দেখানো হয় আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের অভিজ্ঞতা। কিন্তু এতে আফ্রিকার মানুষকে বোঝা যাবে না। কিন্তু বিশ্বের দর্শকরা এসব ছবিকেই আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতিনিধি ভেবে নেয়।

নেটফ্লিক্সেও কিছু সমস্যা আছে। এটা খুবই বড় প্লাটফর্ম। এখানে বিখ্যাত শিল্পী বা পরিচালকের কাজ না হলে সেগুলো দর্শকদের মনোযোগ টানতে সক্ষম হয় না।

আমেরিকার পরিচালক লুলু ওয়াং বলেন, স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো তাদের ব্র্যান্ড তৈরি করে নিয়েছে। যখন আপনি প্রতিষ্ঠিত একজন পরিচালক হয়ে উঠবেন তখন তারা আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাইবে এবং আপনাকে ব্যবহার করে তাদের ব্র্যান্ড তৈরি করে নেবে। কিন্তু নতুন নির্মাতা বা শিল্পীদের জন্য কোনো ব্র্যান্ড খুঁজে পাওয়া যায় না।

আফ্রিকার ছবির পরিবেশনার সমস্যা কাটাতে এগিয়ে এসেছে নেটফ্লিক্স এবং এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের দর্শকদের কাছে সরাসরি পৌঁছতে পারবেন বলে আশা করছেন।

 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন