কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে একে অন্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে জাপান ও নিউজিল্যান্ড। বিভিন্ন দেশের রক্ষণবাদে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে শুক্রবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ দুটির নেতারা। এপেক সম্মেলনের প্রাক্কালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটির সিইওদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ প্রস্তাব রাখেন তারা। খবর এপি।
টোকিও থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইওশিহিদে সুগা বলেন, উদার ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর হবে অঞ্চলটির সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।
গত রোববার জাপান ও ১৪ এশীয় প্রতিবেশী দেশ বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) রিজিওনাল কম্প্র্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তিতে পৌঁছে। গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করা সুগা বলেন, জাপানের এখন দায়িত্ব হচ্ছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) ২১ সদস্য দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর করা।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শ্লথগতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণে প্রলুব্ধ হতে পারে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অবাধ ও মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংস্কারের পাশাপাশি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি এফটিএ কার্যকরের জন্য কাজ করে যাবে জাপান।
মালয়েশিয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত এপেক সম্মেলনের আগে এ মন্তব্য রাখেন জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর কারণে অবশ্য এবারের এপেক সম্মেলন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এবারের এপেক সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে এপেক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত এ রিপাবলিকান। অবশ্য গত সপ্তাহের পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছিলেন ট্রাম্প।
এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটির বিভিন্ন কোম্পানির সিইওর সামনে বক্তব্য রাখেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন। তিনি আশাবাদ পোষণ করেন, এপেক নেতারা আগামী ২০ বছরের জন্য নতুন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেবেন। এর লক্ষ্য থাকবে মুক্ত বাণিজ্য, ডিজিটাল উদ্ভাবন, টেকসইতা ও সবার অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সদ্য অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়া আরডার্ন বলেন, আমরা যখন আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি, সে সময়টায় আমাদের অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করা যাবে না এবং রক্ষণবাদিতার নীতি গ্রহণ করা যাবে না। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা জোটকে অবশ্যই বাজার উন্মুক্ত ও উদার বাণিজ্য বহাল রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
আগামী বছরের জন্য এপেকের সভাপতি হতে যাওয়া আরডার্ন আহ্বান রাখেন, দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এপেক অর্থনীতিগুলোকে। মহামারীর কারণে নিউজিল্যান্ডও পরবর্তী এপেক সম্মেলন ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজন করবে বলে জানান জাসিন্দা।
২১ সদস্যবিশিষ্ট এপেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, পেরু, ফিলিপাইন, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।
