ফাইজার-বায়োএনটেক ও কিউরভ্যাকের ভ্যাকসিন

অর্ধশতাধিক কোটি ডোজের জন্য হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ ইইউর

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় জোয়ারে ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে ইউরোপের অর্থনীতি জনস্বাস্থ্য। অবস্থায় সারা বিশ্বের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সম্ভাব্য যেসব ভ্যাকসিন বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটি ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ফাইজার-বায়োএনটেক কিউরভ্যাকের দুটি ভ্যাকসিনের ৭০ কোটি ৫০ লাখ ডোজ পেতে হাজার কোটি ডলারের বেশি বরাদ্দ রেখেছে ইইউ। খবর রয়টার্স।

জোটটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফাইজার বায়োএনটেক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ২০ কোটি ডোজের জন্য ৩১০ কোটি ইউরো (৩৭০ কোটি ডলার) দিতে সম্মত হয়েছে ইইউ। এক্ষেত্রে প্রতি ডোজের জন্য জোটটিকে খরচ করতে হবে ১৫ দশমিক ইউরো (১৮ দশমিক ৩৪ ডলার) এছাড়া চুক্তিতে আরো ১০ কোটি ডোজের অপশনাল ক্লজ রাখা হয়েছে। এই ১০ কোটি ডোজ কিনলে ইইউর মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪৬৫ কোটি ইউরো।

চুক্তি অনুসারে, ফাইজার বায়োএনটেক যদি শেষ পর্যন্ত ডোজগুলো ইইউকে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়, তবে জোটটির সদস্য দেশগুলো তার ক্ষতিপূরণ পাবে। বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র তথ্য জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এই ভ্যাকসিন কিনতে প্রাথমিকভাবে ডোজপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছুটা কম খরচ করতে হচ্ছে ইইউকে।

এদিকে ডোজপ্রতি ১০ ইউরোয় (১১ দশমিক ৮৪ ডলার) ২২ কোটি ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে কিউরভ্যাকের সঙ্গে পৃথক একটি চুক্তি করেছে ইইউ। এক্ষেত্রেও ডোজপ্রতি দরে কিছুটা ছাড় পেয়েছে জোটটি। কিউরভ্যাক প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দর ১২ ইউরো নির্ধারণ করেছে। সব মিলিয়ে কিউরভ্যাকের কাছ থেকে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে ইইউ। এর মধ্যে ১৮ কোটি ডোজ অপশনাল হিসেবে রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিউরভ্যাক। যে ১৮ কোটি ডোজ অপশনাল হিসেবে রাখা হয়েছে, সেগুলো ডোজপ্রতি ১০ ইউরো নাকি ১২ ইউরো দরে কেনা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে ১০ ইউরো দর হিসাব করলে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডোজের জন্য ইইউকে খরচ করতে হবে মোট ৪০৫ কোটি ইউরো।

ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইইউর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। বিষয়ে জানতে ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এদিকে বায়োএনটেক কিউরভ্যাকও বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে ফাইজারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এবং বায়োএনটেক কয়েক স্তরের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করছে। কী পরিমাণ ভ্যাকসিন নেয়া হচ্ছে এবং সেগুলো কবে নাগাদ সরবরাহ করতে হবেসে অনুযায়ী প্রতি ডোজের দাম কম-বেশি হতে পারে। কোম্পানিটি আরো জানিয়েছে, ইইউর সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়েছে, এখন পর্যন্ত সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাথমিক কার্যাদেশ। বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে অপারগতা জানিয়েছে তারা।

এর আগে গত জুলাইয়ে ডোজপ্রতি ১৯ দশমিক ডলার দরে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ফাইজারের সঙ্গে চুক্তি করে মার্কিন সরকার। এছাড়া আরো ৫০ কোটি ডোজ কেনার অপশনাল ক্লজও রাখা হয়েছে সে চুক্তিতে, যেগুলোর দর নির্ধারণে আলাদাভাবে আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ।

ফাইজার-বায়োএনটেক কিউরভ্যাকের দুটি ভ্যাকসিনই নভেল ম্যাসেঞ্জার আরএনএ প্রযুক্তিভিত্তিক। জনপ্রতি উভয় ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ দিতে হবে। এর অর্থ হলো, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিতে গেলে ইইউ দেশগুলোয় বসবাসরত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩১ ইউরো করে খরচ করতে হবে।

ফাইজার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি। আর বায়োএনটেক কিউরভ্যাক দুটোই জার্মান কোম্পানি। বুধবার ফাইজার বায়োএনটেক জানায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, তাদের ভ্যাকসিন নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন