সংসদে বিল পাস

বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন বিল সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২০’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

গত ২৩ জুন বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

২০০৩ সালে প্রণীত বিদ্যমান আইনে বিধান ছিল, কমিশনের নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটে।

বিলে এটা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে কমিশনের একক বা পৃথক আদেশ দ্বারা, প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিকবার পরিবর্তন করতে পারবে। নতুন আইন কার্যকর হলে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বছরে এক বা একাধিকবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডিজেল, পেট্রোলসহ জ্বালানির দাম পরিবর্তন করতে পারবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি জ্বালানি সরবরাহ কাঠামোতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন কথার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নয়, এটা বিনিয়োগ। এটা প্রধানমন্ত্রী না করলে প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন হতো না। বিদ্যুতের কারণে শুধু এলাকা আলোকিত হয়নি। তাদের জীবনমান আলোকিত হয়েছে। ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। এখানে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কথা উঠেছে। আমি স্বীকার করি। কভিড সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কর্মীরা বিল আনতে পারিনি। বেশ সমস্যা হয়েছে। আমরা পরে তিন মাস সময় নিয়ে সেগুলো সমন্বয় করেছি।

কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাস: ‘এক ব্যক্তি কোম্পানি’ খোলার সুযোগ দিতে ১৯৯৪ সালে প্রবর্তিত কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল ‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল-২০২০’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

সংসদে উত্থাপিত বিলে পরিশোধিত মূলধন অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। সংসদীয় কমিটি এ ধারায় পরিবর্তন আনে, যেটি সংসদে পাস হয়েছে। এছাড়া বিলে বলা ছিল, অব্যবহিত পূর্ববর্তী অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার অন্যূন ২ কোটি টাকা এবং অনধিক ১০০ কোটি টাকা হবে। সংসদীয় কমিটি তার স্থলে ১ কোটি ও ৫০ কোটি টাকা করেছে, যা সংসদে পাস হয়েছে। পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভার এর বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা ক্ষেত্রমতো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এখন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি পরিচালিত হয় পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। এ পর্ষদ বা বোর্ডের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।

আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি’ হলো সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন। বিলে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ২৫ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা।

এক ব্যক্তির কোম্পানিকে বছরে কমপক্ষে একটি পরিচালক সভা করতে হবে বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে। পরিচালক ও প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানি পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পাবে। একমাত্র সদস্য মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তি সব শেয়ারের স্বত্ববান হবে বলে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে। এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং কমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে বিলে। 

এতে আরো বলা হয়েছে, কোম্পানি উঠে গেলে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোম্পানি আইন সংশোধন করে অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমান আইনে ১৪ দিনের নোটিসে বোর্ড মিটিং করার বিধান আছে। প্রস্তাবিত আইনে এটাকে ২১ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলার পর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সুনামগঞ্জে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি গত ৭ সেপ্টেম্বর সংসদে তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। পাস হওয়া বিলটি অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে ৫৫টি ধারা রয়েছে। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন ও সংজ্ঞা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ধারাগুলোর মধ্যে ৯ ধারা চ্যান্সেলর, ১০-১১ ধারা ভাইস চ্যান্সেলর, ১২ ধারা প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ১৩ ধারা কোষাধ্যক্ষ, ১৮-২০ ধারা সিন্ডিকেট, ২১-২২ ধারা একাডেমিক কাউন্সিল, ২৯-৩০ ধারা অর্থ কমিটি সম্পর্কিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন