অন্য রোগগুলোতেও মনোযোগ দিতে হবে

ফ্রান্সিন তুউমি

বছরজুড়ে কভিড-১৯ পুরো বিশ্বের মনোযোগ ধরে রেখেছে। বিষয়টি এমন যে অন্য কোনো রোগ এতটা গুরুত্বপূর্ণ, আরো বেশি সংক্রামক কিংবা মারাত্মক নয়। ২০০৮ সালে আমরা কঙ্গোর একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মলিকিউলার-বায়োলজি পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করি। আমরা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, যক্ষ্মা ও চিকুনগুনিয়া সৃষ্টি করা প্যাথোজেনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করি। 

এ রোগগুলো প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষকে সংক্রমিত করে এবং ২৫ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে। চিকিৎসাগুলো কার্যকর রাখতে আমরা অ্যান্টিম্যালেরিয়াল, অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি মূল্যায়ন করি।

আমাদের গবেষণা প্রোগ্রামগুলো চলমান ছিল। তাই কঙ্গোতে কীভাবে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ছিল এবং কীভাবে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সুরক্ষিত রাখা যায়, তা বোঝার জন্য আমরা দ্রুত ডায়াগনস্টিক টেস্টিং ও রক্তভিত্তিক এপিডেমিওলজিক্যাল স্টাডি করতে থাকি। তার মানে আমি অন্য রোগগুলোকে অবহেলা করছি। আর এটা কেবল আমার পরীক্ষাগারেই নয়, বিশ্বজুড়েই এমনটা হচ্ছে। অক্টোবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মহামারীর কারণে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে অগ্রগতি থমকে যেতে পারে। এ রোগের সর্বাধিক হার থাকা দেশগুলোতে রোগীদের শনাক্তকরণ ও সেবা দেয়া গত বছরের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়েছে। কারণ লকডাউনের কারণে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে।

উগান্ডায় জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুহার ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কভিড মহামারীর কারণে এইচআইভি শনাক্তকরণের হার ও যক্ষ্মা প্রতিরোধের চিকিৎসাগুলো ৭৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। সক্রিয় প্রচারের মাধ্যমে চিকিৎসাগুলো চালু রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সেপ্টেম্বরে ডব্লিউএইচওর ও অন্য গবেষকরা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ ও শয্যা বিতরণে ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেলে কী ঘটতে পারে তার মডেলিং করেছিলেন। যদি এটা কার্যকর হয় তবে গত ২০ বছরে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল, তা হারিয়ে যেতে পারে। 

যদিও আমার বার্তাটি এ নয় যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা বিপথগামী। তবে আমি হতাশ হয়েছি, এ ধরনের প্রচেষ্টা অন্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে দেখা যায়নি এবং দেখা গেলেও টেকসই হয়নি। এ ধরনের প্রচেষ্টা ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে দেখা গেলে ফলাফলটি ভিন্ন হতে পারত। 

বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর ৯০ শতাংশেরও বেশি আফ্রিকায় ঘটে। প্রতি ২ মিনিটে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একটি শিশু মারা যায়। রোগটি একটি দুষ্টচক্রের সঙ্গে জড়িত। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা অসুস্থতাকে বিকশিত হতে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত লোকের পক্ষে রোগটির বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালানোর সংস্থান নেই। এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকা ও বিশেষত কঙ্গোতে গবেষণার সক্ষমতা জোরদার করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

নেচার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন