পিজিসিবির গ্রিড উন্নয়ন

জমি অধিগ্রহণ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

আবু তাহের

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বেশকিছু জেলায় নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, সংস্কার, নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ, গ্রিডের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। যার লক্ষ্য ছিল সংশ্লিষ্ট বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন উন্নয়ন করে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। প্রকল্পটির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে চার বছর। কিন্তু এরই মধ্যে চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

২০২১ সালের জুন নাগাদ এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে পিজিসিবি। সময়সীমা বাড়লে প্রকল্পের খরচও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাবস্টেশন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউর নানাবিধ শর্ত, ঠিকাদার নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতায় এ প্রকল্পের বেশির ভাগ সময় চলে গেছে। পরবর্তী সময়ে করোনা মহামারীসহ নানা কারণে প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে গ্রিডভিত্তিক জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায় ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পিজিসিবির ১৩২ কেভি এবং ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন মেরামত ও সম্প্রসারণ, নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ, গ্রিডের সক্ষমতা বাড়ানোই ছিল এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পটিতে সরকারের পাশাপাশি জার্মানির একটি ব্যাংক বিনিয়োগ করবে বলে উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে সরকারি অর্থ সহায়তার পরিমাণ ধরা হয় ১ হাজার ২৫৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাকি ১ হাজার ২৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকা জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক (কেএফডব্লিউ) দেবে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু গত চার বছরে এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। প্রকল্পের বাকি ছয় মাসে ঠিক কীভাবে কাজ সম্পন্ন হবে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি।

সময়সীমা ঘনিয়ে এলেও প্রকল্পটি ঠিক কী কারণে অগ্রগতি হয়নি জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিউল্লাহ (পিজিসিবি) বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্প নিয়ে শুরুতেই অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউর বেশকিছু শর্ত ছিল। সেসব শর্ত পূরণে লম্বা সময় ধরে চিঠি আদান-প্রদান করতে হয়েছে। এছাড়া যেসব জায়গায় সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে সেসব জমি অধিগ্রহণে বহু সময় লেগেছে। তবে এরই মধ্যে এ প্রকল্প এগিয়ে নেয়ার জন্য মালয়েশিয়া ও চীনের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে।

পিজিসিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ, মেরামত এবং পূর্ণ সংযোগ কাজ করবে চীন ও মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানি। করোনা মহামারীসহ বেশকিছু জটিলতায় এসব কোম্পানির শ্রমিকরা প্রকল্পে আসতে পারছে না। অন্যদিকে প্রকল্পের সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য দেশীয় একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে আমেরিকান দুজন প্রকৌশলীকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। করোনার কারণে তারা এ প্রকল্প থেকে ছিটকে পড়েছে। এখন নতুন করে পরামর্শক নিয়োগের কথা চিন্তা করছে সংস্থাটি। 

এ প্রকল্প ছাড়াও পিজিসিবি বর্তমানে দুই ডজনেরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। করোনার কারণে বেশির ভাগ কাজে বিদেশী শ্রমিক এবং ঠিকাদার থাকায় এ প্রকল্পগুলোর ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সঞ্চালন লাইনগুলোর বড় প্রকল্পে বিদেশী শ্রমিক কাজ করায় বেশকিছু প্রকল্প নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয়ার জন্য পিজিসিবি কর্মকর্তারা পূর্ণ পরিকল্পনা করছেন। 

চলমান এসব প্রকল্প নিয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের অনেক ধরনের কাজ চলছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের আধুনিকায়নে ট্রান্সমিশন লাইন, স্মার্ট গ্রিড সংযোগ, গ্রিড সাবস্টেশনসহ নানা প্রকল্প চলছে। এগুলো যথাযথ তদারকির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়কে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন