নগর পরিবহন উন্নয়ন

সারা দেশে কাজ করতে চায় ডিটিসিএ মন্ত্রীর আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমানে কেবল ঢাকা ও আশপাশের নগরগুলোয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা, নীতিমালা ও স্কিম প্রণয়নের পাশাপাশি সেগুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়ন কাজ সমন্বয় করা সংস্থাটির প্রধান কাজ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য গঠিত এ সংস্থা সামনের দিনে দেশের সব শহরেই কাজ করতে চায়। এজন্য বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ নামের নতুন একটি সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিটিসিএ। তবে ডিটিসিএর এ উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সংস্থাটিকে নিজেদের বর্তমান গণ্ডির মধ্যে থেকেই কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) ভেঙে ২০১২ সালে ডিটিসিএ গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরের জন্য একটি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সংস্থাটি, যার আলোকে ঢাকায় মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিটের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। 

ঢাকা ছাড়াও দেশের সব শহরেও কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ নামের নতুন একটি সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিটিসিএ। এরই মধ্যে নতুন সংস্থা গঠনের জন্য একটি খসড়া বিলও প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়া বিলে ডিটিসিএর আদলেই বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্থাটি পরিচালিত হবে একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। পদাধিকারবলে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। 

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, নগর এলাকার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আন্তঃকর্তৃপক্ষ সহযোগিতা প্রদান ও সমন্বয়; পরিবহন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিশেষ অবস্থায় তা বাস্তবায়ন।

নগর এলাকায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট, নৌ-পরিবহন, সার্কুলার বা কমিউটার রেল ইত্যাদি নির্মাণ, পরিচালনা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রস্তাবিত সংস্থার অন্যতম কার্যাবলি। এর বাইরে ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনা; নগর এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন; বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রবর্তন; স্মার্ট বা র্যাপিড পাসের মাধ্যমে গণপরিবহনের ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা প্রবর্তন; নগর এলাকায় সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; নগর এলাকার রাস্তা শ্রেণীবিভাজন ও ফুটপাতের মান নির্ধারণ; গণপরিবহনের সংখ্যা, গতিসীমা ও চলাচলের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ; প্রয়োজনীয় নীতি, পরিকল্পনা ও নকশা অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন কাজ তদারকি; নগর অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনা তৈরি; সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; পরিবেশ দূষণ রোধের মতো বিভিন্ন বিষয় প্রস্তাবিত বাংলাদেশ নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যাবলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নতুন এ সংস্থা গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিটিসিএর কর্মকর্তারা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ’ নামের কারণে ডিটিসিএ ঢাকা ও আশপাশ এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় কাজ করতে পারে না। সারা দেশে নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই নতুন এ সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ডিটিসিএ তাদের কার্যক্রম সারা দেশে বিস্তৃত করতে চাইলেও তাতে আপত্তি দিয়েছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিটিসিএর কার্যক্রম ও ভূমিকা সম্পর্কিত এক সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, ডিটিসিএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার অধিভুক্ত এলাকাতেই ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে সংস্থাটি তাদের মূল কাজই ঠিকমতো করতে পারবে না। এমন অবস্থায় মন্ত্রী সংস্থাটিকে তার অধিভুক্ত এলাকার মধ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন