উন্নয়নে এনজিও

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আট মাস ২০ দিন মুক্তিযুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ওই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধসহ রাষ্ট্র পরিচালনা করে ভারত থেকে। ওই এক কোটি মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও ভারতকে। এরপর ছিল এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। অনেক বেসরকারি উদ্যোগ তখন শরণার্থী শিবিরগুলোয় বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে এগিয়ে আসে। এ সময়ই ব্যক্তি বা সমমনা কয়েকজন ব্যক্তির উদ্যোগে কিছু কিছু সংগঠন গড়ে ওঠে, যে ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অব্যাহত থাকে এবং এগুলো সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান বা এনজিও দরিদ্রদের সহায়তা দান এবং দেশের উন্নয়নের কাজে উদ্যোগী হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ভারতে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা দেশে ফিরে আসে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশে সে সময় দারিদ্র্যের হার ছিল ৮০ শতাংশ। এ সময় অনেক এনজিওকে দরিদ্রবিধ্বস্ত মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সার্বিক পুনর্বাসনের জন্য কাজ করতে দেখা যায়। তখনকার দারিদ্র্যপীড়িত ও ভঙ্গুর অবকাঠামোর দেশটিতে ওই সময় থেকেই এনজিও খাতের বিকাশ ঘটতে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অনেক এনজিওর সৃষ্টি হয় তখনই। অনেক উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও প্রতিষ্ঠান এসব এনজিওর মাধ্যমে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে সহায়তা দিতে শুরু করে। সত্তরের দশকে এ সংগঠনগুলো মূলত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করে। 

আশির দশকে এ রকম সংগঠনের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তারা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বনায়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি) পরিচালনায় যুক্ত হয়। আশির দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক এনজিও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সঞ্চয় সংগ্রহ এবং খুবই সীমিত পর্যায়ে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময়ে পিকেএসএফের মূূল কর্মসূচি ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে এনজিওগুলোকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য অর্থায়ন করা এবং এজিওগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া। ওই সময়ে বিদ্যমান এনজিওগুলোর পাশাপাশি ব্যাপকভাবে নতুন নতুন এনজিওর সৃষ্টি হয় এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতিতে কৃষি খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তখন রেমিট্যান্সের কোনো অবদান ছিল না। পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানির পুনর্বাসন শুরু হয় এবং দ্রুত এগোতে থাকে। কৃষি ও কৃষকের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার নীতি ও অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়। ওই সময়ে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

সরকারি ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। ফলে এনজিওগুলোর জন্য অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। গ্রামীণ খাতে অর্থনৈতিক, বিশেষ করে সামাজিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এনজিওগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে এ ধারা শুধু অব্যাহতই থাকেনি, বরং ক্রমে জোরদার হয় এবং নতুন নতুন এনজিও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশীয় বিভিন্ন উেসর সহায়তায় এনজিওগুলো মোট ২৫ হাজার ৮৭৯টি প্রকল্প সম্পাদন করে, যাতে খরচ হয়েছে মোট ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

এক তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী মোট এনজিও রয়েছে প্রায় ১৯ হাজারটি। প্রকৃত সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। এগুলোর মধ্যে ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এনজিওগুলোর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারটি এবং মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে সনদপ্রাপ্ত এনজিওর সংখ্যা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৭৫৯টি। আইনত এমআরএর লাইসেন্স ব্যতীত এখন কোনো এনজিও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনজিওগুলো মাঠ পর্যায়ে ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। দেশের প্রায় চার কোটি অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও অ-দরিদ্র স্বল্প আয়ের মানুষ বছরের কোনো না কোনো সময় এনজিওগুলোর আর্থিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, যাদের মধ্যে সক্রিয় ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় সোয়া তিন কোটি।

উল্লেখ্য, এ ঋণ যাদের মাধ্যমে দেয়া হয়, তাদের ৯১ শতাংশ নারী। কিন্তু গৃহীত ঋণের ব্যবহারে নারীদের ভূমিকা সীমিত। বাবা, স্বামী বা ছেলের হাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণের টাকা তুলে দেয়া হয়। ইদানীং গৃহীত ঋণের ব্যবহারে নারীদের ভূমিকা কিছুটা বেড়েছে। পিকেএসএফ এক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা জোরদার করতে সচেষ্ট রয়েছে। 

এনজিওগুলোর অধীনে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মাঠকর্মী কাজ করেন। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত বাড়ছে। এই অন্তর্ভুক্তির একটি বড় অংশ এনজিওগুলোর অর্থায়নের মাধ্যমে ঘটছে। ২০১৮-এর তুলনায় ২০১৯ সালে এনজিওগুলোর থেকে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ২৬ শতাংশ আর মোট ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এনজিওগুলো যেহেতু জামানত ছাড়া ঋণ দেয়, অতিদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষ এনজিওগুলো থেকে সহজে ঋণ নিতে পারে। ব্যাংক থেকে তাদের ঋণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এত ছোট ছোট ঋণ দিতে কোনো ব্যাংক আগ্রহী নয়। তাছাড়া রয়েছে জামানতের প্রয়োজনীয়তা। 

তবে  এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্রদের হাতে কিছু অর্থ গেলেও তাদের টেকসই দারিদ্র্য নিরসনের অবদান স্বল্পই। অবশ্য ঋণের পাশাপাশি এনজিওগুলো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে। এছাড়া এনজিওগুলো জন্মনিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, অতিক্ষুদ্র উদ্যোগ সৃষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সামাজিক ব্যাধি (বাল্যবিবাহ, বাল্যশ্রম, মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ, নারী নির্যাতন, তামাক সেবন, মাদকাসক্তি) দূরীকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা ও পয়োনিষ্কাশন সম্প্রসারণ, নারী উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসকরণ, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং প্রতিবন্ধী, কৃষি শ্রমিক, দলিত ও অন্যান্য বিশেষভাবে অসুবিধাগ্রস্ত গোষ্ঠীদের বিশেষ বিশেষ সমস্যার সমাধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এনজিওগুলোর অবদান প্রশংসার দাবিদার। 

১৯৯০-এর দশকের আগ পর্যন্ত এনজিওগুলো সাধারণত অনেক ভালো কাজ করে উপর্যুক্ত বিভিন্ন এবং অন্যান্য খাতে। তাদের মাধ্যমে বৈদেশিক সহায়তাও আসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ১৯৮০-এর দশকে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা খুবই উঁচু মাত্রার ছিল। উন্নয়ন বাজেটের পুরোটাই বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ছিল। তখন এনজিওগুলোর মাধ্যমে আসা বৈদেশিক সাহায্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

১৯৯০-এর দশকে অনুদান হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে  এনজিওগুলোর অর্থপ্রাপ্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় এবং তা চলতে থাকে ২০০০-এর দশকেও। ওই সময় ক্ষুদ্রঋণ বড় মুনাফা অর্জনের উৎস হিসেবে এনজিওগুলো সাধারণত ব্যবহার করতে শুরু করে। মূলত অন্যান্য সেবা প্রদানকারী অনেক এনজিও ক্ষুদ্রঋণ প্রদান শুরু করে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে অনেক নতুন এনজিও গড়ে তোলা হয়। যদিও কিছু এনজিও ওই পথে যায়নি, এনজিও মানেই মূলত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা—এ রকম একটা আবহ তৈরি হয়। এই ব্যবসা চলতে থাকে প্রায় দুই দশক ধরে। কোনো নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ছিল না ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ওই সালে এমআরএ গঠন করা হলেও ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। 

ওই সময়ে প্রকৃত সার্ভিস চার্জের হার মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ানো হয়। ফ্লাট রেইট ব্যবহার করা হতো, অর্থাৎ ঋণ দেয়ার সময় পুরো ঋণের ওপর সার্ভিস চার্জ হিসাব করা হতো। যদিও প্রতিটি কিস্তিতে আসলের একটি অংশ পরিশোধ করা হতো, সার্ভিস চার্জ হিসাব করার সময় তা বিবেচনায় নেয়া হতো না। ধরে নেয়া হতো পুরো বছরই ঋণগ্রহীতার কাছে গৃহীত পুরো ঋণটাই থাকে। সাধারণত প্রতি কিস্তিতে আসলের একটি পরিশোধ করা হতো বলে ঋণগ্রহীতার কাছে গৃহীত ঋণের অর্ধেক বছরব্যাপী থাকত বলে ধরে নেয়া যায়। কাজেই প্রকৃতপক্ষে সার্ভিস চার্জের হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়া বাধ্যতামূলক সঞ্চয় হিসেবে ঋণ নেয়ার সময় সাধারণত শতাংশ কেটে রাখা হতো এবং প্রত্যেক সপ্তাহে আরো অর্থ ঋণগ্রহীতাকে ঋণপ্রদানকারী এনজিওর কাছে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখতে হতো। সঞ্চয়ের ওপর সামান্য হারে সুদ দেয়া হতো, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো এই অর্থ লগ্নি করে ৩৫-৪৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায় করত। এমনকি ওই টাকা ব্যাংকে রাখলেও এনজিওগুলো ঋণগ্রহীতাকে প্রদেয় সুদ থেকে অনেক বেশি মুনাফা করত। এছাড়া ঋণের জন্য দরখাস্ত প্রক্রিয়াজাত করার চার্জ হিসেবে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করা হতো। এসব হিসাবে নিলে প্রকৃত সার্ভিস চার্জের হার ফ্লাট রেইটের দ্বিগুণ থেকে অনেক বেশি হতো। সাধারণত ফ্লাট রেইট ছিল ১৫ শতাংশ। ২০১০ সালে এমআরএর এক মূল্যায়নে উঠে আসে যে প্রকৃত সার্ভিস চার্জের হার সাধারণত ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ ছিল, কোনো কোনো এনজিওর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, এমনকি ৬০ শতাংশ ছিল। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ফ্লাট রেইট সাধারণত ১৫ শতাংশ হলেও কোনো কোনো এনজিও ১৮ শতাংশ বা তারও বেশি আদায় করত। ফলে এনজিওগুলো সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি মহলে খুবই খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়। 

এমনকি ওই সময় এনজিওগুলোর অন্যান্য ভালো কাজও অবমূল্যায়িত হয়। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এমআরএ সার্ভিস চার্জের প্রকৃত হার হ্রাসকৃত পদ্ধতিভিত্তিক ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করে, বাধ্যতামূলক সঞ্চয় কর্তন নিষিদ্ধ এবং দরখাস্ত প্রক্রিয়াজাত ফি ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সম্প্রতি সার্ভিস চার্জের হার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এমআরএ। যখন এ হার ২৭ শতাংশ ছিল তখনও পিকেএসএফ অর্থায়নের ক্ষেত্রে পিকেএসএফ নির্ধারিত সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ আদায় করা হতো।

সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনে ক্ষুদ্রঋণকে খেয়াল খুশিমতো মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ হয়। ফলে এনজিওগুলো হারানো সম্মান ফিরে পেতে শুরু করে। পিকেএসএফ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থাগুলো বছরান্তে তাদের যে সঞ্চয় হয়, তা থেকে প্রথমে ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ১৫ শতাংশ অনুদান হিসেবে স্থানীয় জনগণের সামাজিক উন্নয়নে, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করছে। এমআরএর সম্মতিতে তারা এ কাজ করছে। 

এ পর্যন্ত সাধারণভাবে এনজিওগুলোর ভূমিকার বিষয়ে কথা বলা হলো। এখন পিকেএসএফ যেসব কার্যক্রম এনজিওগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে, সেটি সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। 

পিকেএসএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেয় ২০১০ সালে। পিকেএসএফের অনেক সহযোগী সংস্থা এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। উল্লেখ্য, ব্র্যাক ও আশা ছাড়া প্রায় সব বড় ও মাঝারি এবং অনেকগুলো ছোট এনজিও পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা। এই নতুন কর্মসূচি সমৃদ্ধি নামে পরিচিত, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২০২টি ইউনিয়নে ইউনিয়নভিত্তিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি একটি  মানবকেন্দ্রিক, বহুমাত্রিক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি। ইউনিয়নে বসবাসকারী সবাইকেই এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মানুষের চাহিদার সব খাত এর অন্তর্ভুক্ত। শুরুতে জরিপের মাধ্যমে ইউনিয়নের সব পরিবারের এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে করণীয় ও চাহিদা নিরূপণ করা হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই গ্রহণ করতে পারে। বাকি সব আর্থিক ও প্রয়োজনীয় অ-আর্থিক সেবা পিছিয়ে থাকা ও পিছিয়ে পড়া এবং স্বল্প আয়ের সবার জন্য নির্ধারিত। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত সবার সক্ষমতা গড়ে তোলার প্রয়াস নেয়া হয় শুরুতেই। এসব প্রত্যেক পরিবারের জন্য তাদের মতামতের ভিত্তিতে পারিবারিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। লক্ষ্য তাদের প্রত্যেকের মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠা। সামাজিক পুঁজি গঠন, অর্থাৎ পরিবার পর্যায়ে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আবহ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যাতে একসঙ্গে কাজ করে প্রাপ্ত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে পারিপার্শ্বিকতা তৈরি করা এ কর্মসূচিতে একটি অন্যতম করণীয়। সার্বিক উন্নয়নের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতিক বিকাশেও কাজ করা হয়।

পিকেএসএফের সহযোগী একটি এনজিও একটি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ সমৃদ্ধি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা খরচের অর্ধেক সহযোগী সংস্থা বহন করে, বাকি অর্ধেক ও বিভিন্ন কর্মসূচির সব ব্যয় পিকেএসএফ নির্বাহ করে। এ কর্মসূচির দুটি বিশেষ দিক উল্লেখ করা যেতে পারে। জীবনচক্র ধরে কর্মসূচি বিন্যাস করা হয় গর্ভবতী মা, নবজাতক, কিশোর-কিশোরী, যুবসমাজ, পূর্ণবয়স্ক ও প্রবীণ সব গোষ্ঠীর জন্য তাদের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রয়োজনকে ধারণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যুবদের ব্যাপারে উল্লেখ করতে চাই যে তাদের মধ্যে মানবিক সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা প্রোথিত করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি নিজ নিজ পছন্দের বিষয়ে দক্ষতা-প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় এবং যারা উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক, তাদেরকে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং অন্যান্য সেবা দেয়া হয়। নিয়মিত নজরদারি রাখা হয়, যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিরসন করা যায়। দ্বিতীয়ত, অতিদরিদ্ররা যখন উন্নতি করতে শুরু করে, পিকেএসএফ ও সহযোগী সংস্থা তাদের পাশে থাকে তাদের অগ্রগতির বিভিন্ন পর্যায়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা নিয়ে। এ কর্মসূচি যেসব সহযোগী সংস্থা বাস্তবায়ন করছে, জনকল্যাণে কাজ করছে বলে তাদের সম্মান সর্বমহলে, বিশেষ করে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে অনেক বেড়েছে। 

এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত যাতে আরো শক্ত হয় এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, সেই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার লক্ষ্যে উদ্যোগ সৃষ্টিতে পিকেএসএফ এখন বিশেষ জোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ অতিক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ার জন্য বা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় শুরু করা উদ্যোগ যাতে টেকসই হতে পারে, সেই লক্ষ্যে পিকেএসএফ আর্থিক ও অ-আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এবং এ কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, মাঠ পর্যায়ে পিকেএসএফের সহযোগী এনজিওগুলো কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে। 

ফলে দেখা যায়, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে সাধারণভাবে এনজিওগুলো সম্পর্কে ধারণা এবং তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ স্বস্তির পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সরকারি কর্মসূচিতে অনেক এনজিও সরকারি আগ্রহে অংশগ্রহণ করছে। অবশ্য কখনো কখনো সাধারণভাবে বা কোনো কোনো এনজিওর ক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। কিন্তু এনজিওগুলো সঠিক পথে থাকলে তারা সসম্মানে তাদের দায়িত্ব পালন করে এগিয়ে চলতে পারবে বলে আমি মনে করি।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব এনজিওর বাস্তবভিত্তিক সঠিক কাজ করা উচিত। সরকারের সহযোগী হিসেবে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণের কাজে  এনজিওগুলোর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে অধিকারচালিত। 

সম্প্রতি এনজিওগুলো একটি নতুন কাজে ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে চলেছে, এমনকি এই করোনাকালেও। ২০২০ সালে সারা বিশ্বে যখন রেমিট্যান্সপ্রবাহ ১৪ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে, সেখানে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রবাহ বেড়েছে ৮ শতাংশ। গ্রামীণ জনজীবনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করা, গ্রামীণ উৎপাদন কাঠামোয় পরিবর্তন সাধনসহ নানা রকম উন্নতি হয়েছে এই রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। শুধু গ্রাম নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন খাত। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে দ্বিতীয়। মানি লন্ডারিং আইন, ২০০৬-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বৈধ পথে অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এনজিও সেক্টরও ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে ২০১৩ সাল থেকে এমআরএর অনুমোদন নিয়ে ১০টি প্রতিষ্ঠান রেমিট্যান্স কার্যক্রম শুরু করে এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০১৩ সালে এনজিওগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো আয় করে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। 

বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে এনজিওগুলোর প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখযোগ্য। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও এ দেশে এনজিওগুলোর করণীয় থাকবে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন আঙ্গিক থেকে ভিন্ন রকম দায়িত্ব পালন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও প্রায় দেড় লাখ সক্রিয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি সে কথাই বলে। উন্নয়ন এগিয়ে যখন চলে তখন কিছু সমস্যা চলমান থাকে এবং কিছু সমস্যার উদ্ভব হয় নতুনভাবে। অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে এবং করণীয় থাকবে, পরিবর্তিত হবে শুধু সেগুলোর ধরন ও প্রেক্ষিত। দ্রুত শহরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন, তরুণদের বেকারত্ব এবং অসমতাসহ বিষণ্নতা ও উদ্বেগের ফলে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে ধরা যায়। এসব ক্ষেত্রে এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে—একথা জোর দিয়ে বলা যায়। দেশের উন্নয়নে তাই এনজিওগুলো বরাবরের মতো আগামীতেও প্রাসঙ্গিক থাকবে। স্বচ্ছতা ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে জনকল্যাণ ও দেশের অব্যাহত ও ত্বরান্বিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে  এনজিওগুলো দেশের সার্বিক কাঠামোয় ন্যায্য অবস্থানের অধিকারী থাকতে পারবে বলে আমি মনে করি।

শেষ করার আগে আরো একটি বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বর্তমানে করোনা মহামারীর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে, এনজিওগুলোও এই বাস্তবতার ভুক্তভোগী। তাদের আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা প্রদান ব্যাহত হয়েছে ব্যাপকভাবে। ঋণ কার্যক্রম স্থবির হয় লকডাউন এবং যোগাযোগ বন্ধ বা সীমিত হওয়ার কারণে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে জুনের প্রথম দিক থেকে প্রচেষ্টা আবার শুরু করা হলেও এখনো করোনা পূর্বকালের পর্যায় থেকে অনেক পেছনে আছে। অতিদারিদ্র্য, দারিদ্র্য ও স্বল্প আয়ের যে কোটি পরিবার এনজিওগুলোর কাছ থেকে আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা নেয়, তাদের জীবিকায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে। ঋণ পরিশোধে ঘাটতি থাকায় এনজিওগুলোও আর্থিক সংকট পড়েছে। বিশেষ করে ছোট ছোট এনজিও। মাঠ পর্যায় থেকে যখন ঋণ পরিশোধ করা হয় না, তখন  এনজিওগুলো বিভিন্নভাবে বিপদে পড়ে। যদি নিজেদের তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হয়, তবে তহবিলে ঘাটতি সৃষ্টি হয় এবং সংশ্লিষ্ট এনজিওর ঋণ ও অন্যান্য সেবা প্রদানের সক্ষমতা কমে যায়। আরো বেশি সমস্যা হয় যখন পিকেএসএফ, ব্যাংক বা অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করা এবং অন্যান্য সেবা দেয়া হয়। কেননা এনজিওগুলোকে তাদের গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে হয়। 

তবে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ প্রক্রিয়া জোরদার হলে এই অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু এ ধাক্কায় এনজিওগুলোর সদস্য সাধারণ মানুষ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে অনেকে বিশেষ করে ছোট ছোট এনজিও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং প্রায় সব এনজিওর আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবা প্রদান সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে এনজিওগুলো সাধারণ মানুষের পুনর্বাসন ও পুনর্জাগরণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এটা খুবই জরুরি যে করোনাকালে বিধ্বস্ত অতিদারিদ্র্য দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের কোটি কোটি মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো ও এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। 

অন্যান্য খাতে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হলেও এনজিও খাত বঞ্চিত থেকে গেছে। ৩ হাজার কোটি টাকা এনজিওগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের নানা নিয়মকানুন ছাড়াও একটি এনজিও যে পরিমাণ অর্থ এই সুযোগ থেকে নেবে, তার ২০ শতাংশ স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা এবং যে সুদহারে এনজিওগুলোর ঋণ দিতে হবে, তা থেকে তাদের প্রশাসনিক, বিতরণ এবং আদায়সংক্রান্ত খরচ অনেক বেশি হওয়ায় এনজিওগুলো এই সুযোগ থেকে অর্থ গ্রহণে তেমন আগ্রহী নয়। আমার জানামতে, এ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি থেকে মাত্র ১৯ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে, যা মাত্র কয়েকটি এনজিও নিয়েছে। অবশ্য পিকেএসএফের মাধ্যমে যে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের কথা, তার মধ্যে যে ২৫০ কোটি পিকেএসএফকে দেয়া হয়েছে। এই অর্থ এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পুরোপুরি বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২৫০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেই দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া পিকেএসএফের প্রচলিত কার্যক্রমগুলোর আওতায় সহযোগী সংস্থা (এনজিও) পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। 

পিকেএসএফের এমডি, ডিএমডিসহ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন কভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্ভূত বাস্তবতা দেখা ও বোঝার জন্য। সহযোগী সংস্থা এবং সদস্য (বিভিন্ন আর্থিক ও অ-আর্থিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী) পরিবারগুলোর প্রয়োজন ও সমস্যা বুঝে করণীয় নির্ধারণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে খাতটি দ্রুত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং এগিয়ে চলতে পারে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে পিকেএসএফ তার সীমীত সামর্থ্য অনুযায়ীই কাজ করতে পারে এবং কার্যকরভাবে তা করছে। 

খাতটির পুনর্জাগরণ প্রক্রিয়ায় সরকারি নীতি এবং আর্থিক প্রণোদনা সমর্থন প্রয়োজন হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে এ খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আমার বিবেচনায় খাতটি যাতে কভিড-১৯ চলাকালে এবং পরবর্তীকালে দেশের আর্থসামাজিক পুনর্গঠন ও অগ্রযাত্রায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সেদিকে সরকারের আশু নজর দেয়া উচিত। 


ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন