এশিয়ার যে দেশে শিশুর চেয়ে পোষা কুকুর বেশি

বণিক বার্তা অনলাইন

তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের একটি সাধারণ একটি দৃশ্য হলো শিশুদের বহনকারী ট্রলিতে সুন্দর করে সাজানো কুকুর নিয়ে ঘুরছেন মানুষ। শহরটির মেট্রো সিস্টেমও ট্রলি থাকলে পোষা প্রাণি নিয়ে ভ্রমণের সুযোগ দেয়। কিন্তু একে-অপরের দেখাদেখি এ প্রবণতা দেশটিতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। 

তাইওয়ানের ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের মধ্যে তথাকথিত ‘পশমি শিশুদের’ প্রতি এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বড় ধরনের সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। 

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ তাইওয়ান। দেরিতে বিয়ে করার কারণেই এমনটা ঘটছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তাছাড়া দেশটিতে বিবাহবহির্ভুত সন্তান জন্ম এখনো সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বাধাগুলোর মধ্যে যত্সামান্য মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকারও একটি বাধা হয়ে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাণী পোষার প্রবণতা এখন আকাশ্চুম্বি। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্লেষকরা অনুমান করেছিলেন, তাইওয়ানের পোষা প্রাণীর সংখ্যা ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। 

এ কারণে দেশটিতে পোষা প্রাণীর আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের খুচরা বাজারটিও দ্রুত বড় হচ্ছে। তাইওয়ানের পেট এক্সপো অনুসারে, ২০১৫ সালেই বাজারটির মূল্য ছিল ১৫২ কোটি ডলার। বাজার গবেষণা সংস্থা ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তখন থেকেই বাজারটি প্রতি বছর বড় হচ্ছে। 

পোষা প্রাণীদের বহনের জন্য বিশেষ ট্রলি প্র্যাম প্রস্তুতকারী সংস্থা আইবিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, ২০০২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্র্যামসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের বিক্রি পাঁচগুণ বেড়েছে এবং এখনো তা সমানতালে বাড়ছে। দিনকে দিন বাজারটি বড় হওয়ায় সরবরাহকারীও বাড়ছে। আর এতে গ্রাহকরা তাদের ‘পশমি শিশুদের’ জন্য পছন্দমতো জিনিস বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিকল্প পাওয়ায় এই শিল্পটি আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।

প্র্যাম বা স্ট্রোলার, রোদ চশমা, রেইনকোট এমনকি কুকুরের মোজাও এই ক্রমবর্ধমান বাজারের অন্তর্ভুক্ত। তাইওয়ানের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড অ্যানিমেল সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক উ হ্যাং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই জিনিসগুলোর প্রতি আকাঙ্ক্ষা প্রাণী সম্পর্কে চিন্তাভাবনার মানবকেন্দ্রীক পদ্ধতি থেকে আসছে এবং এগুলো প্রকৃতিতে প্রাণীর প্রয়োজনের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের অনুসঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রাণী। 

হ্যাং বলেন, প্রাণীর স্বার্থের বিষয়টি যখন উপেক্ষা করা হয়, তখন এটা মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ ও প্রাণীজগতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া দেখতে পাওয়া অবশ্যই হৃদয়গ্রাহী ছিল। স্ট্রোলারগুলো বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী প্রাণীদের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে ও ব্যস্ত শহরে চলাচলের জন্য ব্যবহার ভালো। কিন্তু প্রাণীগুলোর স্ট্রোলারগুলোতে বন্দি থাকার পরিবর্তে হাঁটাচলা অনুশীলনেরও প্রয়োজন রয়েছে।

কুকুর পালকরা বলছেন, তারা সাধারণত কুকুরের গলায় দড়ি বেঁধে পার্কের চারপাশে ঘুরে বেড়ান। এতে তাদের অনুশীলন হয়ে যায়। আর স্ট্রোলার থাকলে সুবিধা হচ্ছে, আপনি তাদের পাতাল রেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে নিয়ে যেতে পারেন। বর্তমানে প্রাণী পোষার হার বাড়ছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। 

শিশু জন্মহার কমার বিষয়ে তারা বলছেন, প্রথমে যে বিষয়টি মনে আসে, আমরা সন্তান ধারণ করতে চাই না। কারণ সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে, অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হবে। যদিও পোষা প্রাণীর পেছনেও আমাদের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এবং সেগুলোর প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তবে শিশুরা হলো...আমি জানি না। আমি শিশু নই। এটা বলতে বলতেই হেসে দেন পার্কে ভ্রমণ করা এক নারী।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন