বাইডেনের জয়ের নেপথ্যে যে পাঁচ কারণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রায় ৫০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং প্রেসিডেন্ট হতে কয়েক দশকের প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ভয়াবহ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও সংকটকালীন পরিস্থিতিই তাকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডেলাওয়ারের গাড়ি বিক্রেতার ছেলে বাইডেনের জয়ের পেছনের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেগুলো হচ্ছে:

কভিড, কভিড, কভিড

বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সম্ভবত নভেল করোনাভাইরাস। মহামারীটি লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মার্কিনের জীবন বধের পাশাপাশি ২০২০ সালে আমেরিকান জনজীবন রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের শেষ দিনগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিলেন বলেও মনে হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের শেষ সপ্তাহে উইসকনসিনে এক নির্বাচনী সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ফেইক নিউজগুলোতে সবসময় দেখা যায় শুধু কভিড, কভিড, কভিড।

গত মাসে পিউ রিসার্চের একটি জরিপে উঠে এসেছিল, করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আস্থার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের থেকে ১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় ট্রাম্পকে নির্বাচনের দৌড়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। অনেক আমেরিকান তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মহামারী নিয়ে তার মনোযোগের অভাব, বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ঝোঁক, নীতিমালা পরিচালনা বামপন্থী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার নিয়ে উদ্বেগ ছিল।

কম কিন্তু কার্যকর বার্তা প্রদান

রাজনৈতিক জীবনে বাইডেনের কথা বলতে গিয়ে বেধে যাওয়া, অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেলাসহ নানা সমস্যায় পড়া নিয়ে খ্যাতি ছিল। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তার প্রথম ২০০৭ সালে দ্বিতীয় দৌড়েও কম কথা বলার প্রবণতা দেখা গেছে। ওভাল অফিসের জন্য তার তৃতীয় দৌড়ে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলেন। তবে খুব কম হওয়ায় সেগুলো কোনো ইস্যুতে পরিণত হয়নি। আর এবারে বড় গল্প ছিল করোনাভাইরাস মহামারী, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে। আর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এমনিতেই প্রচার সীমাবদ্ধ করতে হয়েছিল। বিষয়গুলো বাইডেনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়।

আর যে- হোক ট্রাম্প নয়

নির্বাচনের আগের সপ্তাহে বাইডেনের প্রচার শিবির টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে একটি চূড়ান্ত বার্তা তুলে ধরেছিল। বাইডেন জানিয়েছিলেন, নির্বাচনটি আমেরিকার আত্মাকে রক্ষার লড়াই এবং বিগত চার বছরের বিভেদ বিশৃঙ্খলা বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ। স্লোগানের পেছনে অবশ্য একটি সাধারণ গণিত কাজ করেছে। বাইডেন দাবি তুলেছিলেন, ট্রাম্প জনগণকে বিভক্তকারী প্রচণ্ড রাগী বা হিংস্র প্রকৃতির। কিন্তু আমেরিকান জনগণ একজন শান্ত স্থির মনোবলের নেতৃত্ব চায়। আর বাইডেনের বিজয়ী বার্তাটিও ছিল, তিনি ট্রাম্প নন। ডেমোক্র্যাটরা দুই প্রার্থীর মধ্যে পছন্দ করার পরিবর্তে ট্রাম্পকে নিয়ে একটি গণভোট তৈরি করতে সফল হয়েছেন।

পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন

খোদ ডেমোক্র্যাট শিবিরের নানা চাপের পরও বাইডেন মধ্যপন্থী কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। সর্বজনীন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, নিখরচায় কলেজ শিক্ষা সম্পদের কর ফিরিয়ে আনতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। এটা তাকে সাধারণ নির্বাচনী প্রচারের সময় মধ্যপন্থী বিপর্যস্ত রিপাবলিকানদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাইডেন বামপন্থীদের মতের সঙ্গে মিলেছিলেন। এটাই সম্ভবত তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করেছিল। যদিও এটা জ্বালানি শিল্পবেষ্টিত সুইং স্টেটগুলোতে বাইডেনের ঝুঁকি তৈরি করেছিল।

বেশি অর্থে বাইডেনের প্রচার

বছরের শুরুর দিকেও বাইডেনের প্রচার শিবিরের অর্থভাণ্ডার খালি ছিল। তহবিল সংগ্রহে ট্রাম্প থেকে অনেক পিছিয়ে থেকে লড়াই শুরু করেন। এপ্রিলে বাইডেন প্রচারাভিযানের জন্য তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দেন এবং অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের চেয়ে ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি নগদ অর্থ জমা হয়। যদিও অর্থই সবকিছু নয়। চার বছর আগেও ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ক্লিনটনের অনেক বড় প্রচার তহবিল ছিল।

তবে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচার কমিয়ে দেয়। আর সময় আমেরিকানরা বাড়িতে থেকে গণমাধ্যমে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা শুরু করে। সুযোগে বাইডেনের নগদ অর্থ তাকে গণমাধ্যমের সাহায্যে ভোটারদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মহামারীতে সরাসরি প্রচারের বিকল্প সুযোগ করে দেয় অর্থ আর বাইডেন সুবিধাটিই গ্রহণ করেছিলেন।

বিবিসি
অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন