মার্কিন ইতিহাসে প্রথম, তবে শেষ নন

বণিক বার্তা ডেস্ক

এই মুহূর্তে বিশ্বে যে নারীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তিনি কমলা দেবী হ্যারিস। যার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেকগুলো প্রথমের সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কমলা। একই সঙ্গে তিনি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট। অভিবাসী মা-বাবার ঘরে জন্ম নেয়া আইনজীবী ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক কমলার নাম-যশ-খ্যাতি এখন মার্কিন মুলুক ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জয়ের পর কমলার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণআমিই প্রথম, তবে শেষ নই।

কমলার মা শ্যামলা গোপালন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ সিভিল রাইটস কর্মী। তার জন্ম ভারতের তামিলনাড়ুতে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শ্যামলা। সেখানে জ্যামাইকা থেকে আসা ডোনাল্ড জে হ্যারিসকে বিয়ে করে থিতু হন তিনি। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক।

১৯৬৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে জন্ম কমলার। দুই বোনের মধ্যে বড় তিনি। অভিবাসী পরিবারে বেড়ে ওঠা কমলা বরাবর বলেছেন, আইন পেশা রাজনীতিতে সফলতার পেছনে মা-বাবার অনুপ্রেরণা কাজে লেগেছে। বিশেষত শৈশব থেকে নিজের ভেতরে গড়ে ওঠা ন্যায়ভিত্তিক মানবিক মূল্যবোধের পুরোটাই মায়ের কাছ থেকে পাওয়া।

ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে আইন পেশায় যুক্ত হন কমলা। সানফ্রান্সিসকো ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে সেখানেই ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি হিসেবে নির্বাচিত হন। পরপর দুই মেয়াদে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে এসে ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হন অভিজ্ঞ আইনজীবী।

সিনেটে বরাবরই ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সমালোচক হিসেবে নজর কেড়েছেন কমলা। অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ সমকামীদের অধিকার রক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার, গর্ভপাতবিরোধী ইস্যুতে তিনি ট্রাম্পবিরোধী বলয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংঘটিত বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের পরিচিত মুখ ছিলেন কমলা। ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু জো বাইডেন চূড়ান্ত মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। প্রার্থী নির্বাচনের দলীয় বিতর্কে জো বাইডেনকে তুলোধুনো করে সবার নজর কেড়েছিলেন বাকপটু কমলা।

প্রেসিডেন্ট পদে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী হতে না পেরে অনেকটাই আড়ালে চলে গিয়েছিলেন কমলা। তখন কে জানত এক বছরের কম সময়ের মধ্যে নতুন ইতিহাস গড়বেন তিনি। বাইডেন নির্বাচনী লড়াইয়ে রানিংমেট হিসেবে তার নাম ঘোষণা করলে রাজনীতির মাঠে সদর্পে ফিরে আসেন কমলা। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। করোনা মহামারীর মধ্যেও নির্বাচনী প্রচারণায় সরব ছিলেন তিনি। নির্বাচনী বিতর্কে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কমলার বক্তব্যের সময় কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। আত্মবিশ্বাসী কমলা পেন্সকে থামিয়ে দেন। ঘটনা ভোটের মাঠে কমলার দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলার মনোনয়নে অনেকগুলো রাজনৈতিক কৌশল কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ডেমোক্র্যাটদের প্রধান ভোট ব্যাংক অভিবাসী, নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গরা। বিশেষত ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোয় এসব ভোট ডেমোক্র্যাটদের এগিয়ে রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কারণে বাইডেন রানিংমেট হিসেবে একজন অভিবাসী বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে বেছে নেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে এর ইতিবাচক ফল পেয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই নারী অভিবাসীবিদ্বেষী ইমেজ তৈরি করেছিলেন। এর বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের এমন একটি মুখ দরকার ছিল, যিনি দেশে-বিদেশে ট্রাম্পের বিরূপ ইমেজ নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে পারবেন। এক্ষেত্রে কমলার বিকল্প ছিল না। আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা বাকপটুতা তাকে কাজে এগিয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তি জীবনে ৫৬ বছর বয়সী কমলা দুই সন্তানের জননী। নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। আড্ডার ছলে নাতনিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার তামিল দেন। কমলার স্বামী ডগলাস এমহফ পেশায় একজন অ্যাটর্নি। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সেকেন্ড জেন্টেলম্যান হতে যাচ্ছেন।

ভোটের মাঠে অনেকগুলো প্রথমের ইতিহাস গড়ে ওভাল অফিসে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছেন কমলা। নির্বাচনে জয়ের পর টুইটার বার্তায় লিখেছেন, আমি প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে শেষ নই। আশা করছি আজ রাতে প্রতিটি মেয়েশিশু দেখছে এটা (যুক্তরাষ্ট্র) সম্ভাবনার দেশ।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদে কমলার অংশ নেয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। হয়তো নতুন কোনো ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

 

ব্লুমবার্গ, বিবিসি পলিটিকো অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন