রীতিমতো রেকর্ড গড়েই হোয়াইট হাউজে যাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষে পড়েছে ৭ কোটি ২১ লাখের বেশি ভোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে আর কোনো প্রার্থীর ঝুলিতে এত বেশি ভোট পড়েনি।
এ রেকর্ড গড়ার পথে জো বাইডেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামাকে ছাড়িয়ে গেছেন। বাইডেনের সাবেক বস ওবামা ২০০৮ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ে প্রায় ৬ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিনের সমর্থন পেয়েছিলেন, যা এতদিন রেকর্ড হয়ে ছিল।
শতাংশীয় হিসাবেও জো বাইডেন ভোট পাওয়ার দিক থেকে সব পূর্বানুমান ছাড়িয়ে গেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট যত ভোট গণনা হয়েছে, তার ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ গেছে বাইডেনের ঝুলিতে।
ভোট সংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তিনি প্রায় ৬ কোটি ৮৭ লাখ ভোট পেয়েছেন, যা গণনাকৃত মোট ভোটের ৪৮ শতাংশ। প্রতিবেদনটি লেখার সময় চারটি অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা চলছিল। সুতরাং ভোট সংখ্যার দিক থেকে বারাক ওবামার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছেন ট্রাম্পও।
দুই প্রার্থীর এ বিপুলসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তিই বলে দেয় এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার মার্কিনরা কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার গত নির্বাচনে পাওয়া নিজের ভোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মোট ৬ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮টি ভোট ট্রাম্পের অনুকূলে গিয়েছিল, যা মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। সেবারের নির্বাচনে পপুলার ভোটে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে তাকে টেক্কা দেন।
ফক্স নিউজের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জো বাইডেন ২৬৪টি ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার রেসে এগিয়ে ছিলেন। বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে রয়েছে ২১৪টি ইলেক্টোরাল ভোট। যে চারটি অঙ্গরাজ্যে ভোটগণনা চলছিল, সেগুলোর মধ্যে নেভাদায় ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ছয়টি। আর হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্য ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের শর্ত পূরণে বাইডেনেরও চাই ছয়টিই ভোট। প্রতিবেদন লেখার সময় নেভাদায় ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। সেখানকার ছয়টি ইলেক্টোরাল ভোট বাইডেনের ঝুলিতে গেলে পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার ইলেক্টোরাল ভোট পকেটে পুরেও হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হবে ট্রাম্পকে।
কলঙ্কিত নির্বাচন: এবারের মার্কিন নির্বাচন ‘আইনি অনিশ্চয়তা ও জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করার নজিরবিহীন প্রচেষ্টা’র কারণে কলঙ্কিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা মিশন দ্য অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। সংস্থাটি বলেছে, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নির্বাচনটি প্রতিযোগিতামূলক ও ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে।
সংস্থাটি আরো বলেছে, ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ, বিশেষ করে নির্বাচনের রাতে বর্তমান প্রেসিডেন্টের তোলা অভিযোগ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে জনগণের আস্থার জন্য ক্ষতিকর।’
মঙ্গলবারের ভোটের আগে ডাকযোগে পাঠানো ও আগাম ভোট নিয়ে শত শত মামলা হয়েছে। ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো, ব্যালট গ্রহণের সময়সীমা ও প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষর থাকার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মূলত এ মামলাগুলো হয়েছে।
রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজ্যগুলো বলছে, ভোটে জালিয়াতি কমানোর জন্য কড়াকড়ি আরোপের দরকার ছিল। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা বলছে, এসব পদক্ষেপ নাগরিক অধিকারচর্চায় বাধা দেয়ারই অপচেষ্টা।
নির্বাচনের রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে ভোটকে ‘মার্কিন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
পলিটিকো, বিবিসি