৫ বছরের মধ্যে আমরা ব্লু-চিপ কোম্পানিতে পরিণত হব

অনিবাসী বাংলাদেশী (এনআরবি) ব্যবসায়ী ও তাওফিকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাতো’ প্রকৌশলী মো. একরামুল হক। গ্রুপটির আওতায় দেশের নির্মাণ খাত, ব্যাংক ও খাদ্যপণ্যের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। আইপিওতে আসার কারণ, বিদেশী বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান রাহাত

সম্প্রতি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন পেয়েছে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পুঁজিবাজারে আসার কারণ জানতে চাই?

আমি একজন সফল এনআরবি। নিজেকে সফল বলছি এ অর্থে যে আমার উদ্যোগে দেশের নির্মাণ ও ব্যাংকিং খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আনার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান, যেখানে বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে পারবে। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি যে আমি যদি আমার নিজের প্রতিষ্ঠানকেই আইপিওতে নিয়ে আসি, তাহলে এটি একটি গোছালো কোম্পানি হবে। এটি যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সেখানে বিনিয়োগে বিদেশীরাও আগ্রহী হবে। এটিই আইপিওতে আসার প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যেসব এনআরবি দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়া। আর তৃতীয় কারণ হচ্ছে এটি একটি পারিবারিক কোম্পানি। আমার স্ত্রী ও মেয়ে এর শেয়ারহোল্ডার। পড়াশোনা শেষ করে আমার মেয়েরা যখন দেশে ফিরবে তারা যেন একটি সুন্দর প্লাটফর্মে ব্যবসা করতে পারে। মূলত এসব কারণেই লাভেলো ব্র্যান্ডের আইসক্রিম প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজকে আইপিওতে নিয়ে আসা। 

দেশের আইসক্রিমের বাজার সম্পর্কে জানতে চাই? কভিড-১৯-এর কারণে এ খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে খাতটির সার্বিক অবস্থা কেমন যাচ্ছে?

বৈশ্বিকভাবে আইসক্রিমের বাজার বেশ বড়, ৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশে এ খাতের আকার ২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের দখলে রয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বাজার। প্রতি বছর এ খাতে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্যের কারণে বর্তমানে গ্রামেগঞ্জেও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এবং সেখানকার দোকানগুলোতে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ‘ভালোবাসার আইসক্রিম’ হিসেবে লাভেলোর পথচলা শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা ভোক্তাদের মধ্যে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ হচ্ছে স্বাদের পাশাপাশি আমরা প্যাকেজিং, মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশন ও ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় ভিন্নতা নিয়ে আসতে পেরেছি। প্রতি বছরই আমাদের ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মার্কেট শেয়ারের দিক দিয়ে এখনো আমরা শীর্ষে পৌঁছতে পারেনি। তবে ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচনা করলে আমি বলব লাভেলো সবার ওপরে রয়েছে। আইসক্রিমের ভোক্তাদের কাছে লাভেলো একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা শীর্ষস্থানে পৌঁছতে পারব বলে আশা করছি। আইসক্রিম খাতে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ কাজ করছে। তবে এর বাইরে পরোক্ষভাবে আরো মানুষের কর্মসংস্থান এ খাতের সঙ্গে জড়িত। আগামী দিনে দেশের আইসক্রিমের বাজারের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। কভিড-১৯-এর কারণে আইসক্রিম খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে করোনার কারণে ঠাণ্ডা জিনিস খাওয়া যাবে না। যদিও এটি একটি ভুল ধারণা। উন্নত বিশ্বে কিন্তু মানুষ ঠাণ্ডার সময়েও আইসক্রিম খায়। আইসক্রিমের পিক মৌসুম হচ্ছে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত। করোনার কারণে এ বছর পিক মৌসুমে আমাদের ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। তবে দুই মাস ধরে ব্যবসায় কিছুটা গতি ফিরে এসেছে। সামনে শীতকাল আসছে। ফলে এ বছরটা আমাদের ব্যবসা সেভাবে হবে না। আমরা আগামী বছরকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি সামনের বছরে আইসক্রিম খাত ঘুরে দাঁড়াবে।

আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ আপনারা কী কাজে ব্যয় করবেন?

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধিমালা অনুসারে আইপিওর মাধ্যমে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে হয়। এর আগে এটি ছিল ১৫ কোটি টাকা। নতুন নিয়মে আমরা প্রথম কোম্পানি হিসেবে আইপিও অনুমোদন পেয়েছি। আমরা ন্যূনতম সেই মূলধনই উত্তোলন করছি। এর মধ্যে ৯ কোটি টাকায় আমরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করব। ব্যবসা সম্প্রসারণে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আমাদের বড় ধরনের একটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যমান সক্ষমতা অনুসারে আমরা বছরে ২ কোটি লিটার আইসক্রিম তৈরি করতে পারি। এটি আরো বাড়াতে চাই। আর বাকি টাকা আইপিও প্রক্রিয়ায় ব্যয় করা হবে। এ মুহূর্তে পুঁজিবাজার থেকে আমরা বেশি অর্থ নিতে চাই না। যত কম অর্থ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বেশি রিটার্ন দেয়া যায় সেটিই আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যতে যদি আবারো ব্যবসা সম্প্রসারণে যাই তখন পুঁজিবাজার থেকে আরো অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি চিন্তা করব।

তাওফিকা ফুডস এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের পোর্টফোলিওতে আইসক্রিমের বাইরে আর কী পণ্য রয়েছে?

এ মুহূর্তে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রডাক্ট লাইনে শুধু লাভেলো ব্র্যান্ডের আইসক্রিম রয়েছে। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে সামনের বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি লাভেলো ডে-তে আরো নতুন কিছু পণ্য বাজারে নিয়ে আসব। একটু আগে আমি ব্যবসা সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনার কথা বলছিলাম, সেটির আওতায় আমাদের হিমায়িত খাদ্যের লাইন করব। আপনারা জানেন, বর্তমানে দেশে হিমায়িত খাদ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। দেশের বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভালো কোনো চকোলেট ও ক্যান্ডি নেই, যা কিছু রয়েছে সেগুলো সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা। আমাদের ইচ্ছা আছে দেশেই উন্নতমানের চকোলেট ও ক্যান্ডি তৈরি করার।

খাদ্যপণ্যের ব্যবসাই তাহলে আপনাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাই?

তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসা খাদ্যপণ্যকে ঘিরেই। আমি মূলত একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং ২৬ বছর ধরেই মালয়েশিয়ায় আছি। তাই আমার মূল ব্যবসা হচ্ছে নির্মাণ খাত। বাংলাদেশে আমরা অনেকগুলো কনস্ট্রাকশন, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কনসালট্যান্সি করেছি। আমাদের দেশে ১৮ কোটি মানুষ। এখানে খাদ্যপণ্যের বিশাল একটি বাজার রয়েছে এবং এ খাতের ব্যবসা যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। আইসক্রিমকে নিয়ে আমার বিশাল স্বপ্ন রয়েছে। আমি মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ের বিভিন্ন আইসক্রিম উৎপাদকের সঙ্গে দেশে যৌথ উদ্যোগে কারখানা করার বিষয়ে কথা বলেছি। তারা একটি কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে চায়। সেজন্যই কিন্তু আমাদের আইপিওতে আসা। লন্ডন ডেইরি দুবাইয়ের বিখ্যাত আইসক্রিম ব্র্যান্ড। তাদের সঙ্গে আমাদের যৌথ উদ্যোগে ব্যবসার বিষয়ে কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা হয়তো সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে আমাদের কারখানায় পণ্য তৈরি করে একই সঙ্গে লাভেলো ও তাদের ব্র্যান্ডের মাধ্যমে এ দেশের বাজারে ব্যবসা করতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে তারা আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে এখানে কারখানা করে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করতে পারে। আবার আরেকটি সম্ভাবনাও রয়েছে, সেটি হচ্ছে ভারতের বাজার। অর্থনীতি ও জনসংখ্যার বিচারে ভারত অনেক বড় বাজার হলেও সেখানকার আইসক্রিম শিল্পের আকার বর্তমানে ৯ হাজার কোটি রুপি। লন্ডন ডেইরি ভারতের বাজারেও প্রবেশ করতে চায়। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে মিলে সেখানে আমাদের ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। 

আপনি ২৬ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে আছেন। একসময় মালয়েশিয়ায় অবস্থা বাংলাদেশের মতোই ছিল। সে অবস্থা থেকে দেশটির বড় ধরনের একটি রূপান্তর ঘটেছে। আপনার দৃষ্টিতে দেশটির সাফল্যের কারণ কী?  মালয়েশিয়ার মডেল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষণীয় কিছু আছে কি?

আমি মালয়েশিয়ায় যাই নব্বইয়ের দশকে। দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের পুরোটাই আমার চোখের সামনে হয়েছে। মালয়েশিয়ার উন্নয়নের রূপকার বলা হয়ে থাকে মাহাথির মোহাম্মদকে। তিনি সেদেশে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি করেছিলেন, যারা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাছাড়া তিনি রাস্তাঘাট, সড়ক, সেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, এয়ারপোর্ট, টুইন টাওয়ার, অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। পুত্রজায়াতে প্রশাসনিক রাজধানী স্থাপন করেছেন। তার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সময় সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আজকে আমরা তার নেয়া উদ্যোগগুলোর সফলতা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের সরকারও অনেকাংশে মালয়েশিয়ার মডেলের মতো করেই উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। আমাদের এখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান হয়েছে এবং এতে কিন্তু ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় এখানে নীতিগত দিক দিয়ে এক ধরনের স্থিতিশীলতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে করে কিন্তু এনআরবি যারা রয়েছেন, তারা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ইকুইটিনির্ভর। এখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাইরে বিনিয়োগযোগ্য পণ্য নেই বললেই চলে। মালয়েশিয়ায় ইসলামিক বন্ড সুকুক বেশ জনপ্রিয়। আপনি এ বিষয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা বলছিলেন...

আইপিও ইস্যুতে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছে। আমি যেহেতু মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন আছি, সেখানে আমার ব্যবসা রয়েছে এবং সেখানকার ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তাই তিনি আমাকে ইসলামিক বন্ড বিশেষ করে সুকুক নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। করোনা মহামারীর প্রকোপ কমার জন্য অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আগামী বছরের মার্চে মালয়েশিয়ায় একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে বিএসইসি চেয়ারম্যান মূল বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। আমার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের দেশে সুকুকের মতো বন্ড চালু ও জনপ্রিয় করে তুলতে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখার। সেখানকার বিনিয়োগকারীদের আমাদের এখানে বন্ডে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করারও চেষ্টা করব।

দেশে আরো বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কী করা প্রয়োজন?

বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রথমেই যেটা দেখেন সেটা হচ্ছে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ কিনা? তারপর তারা যে বিনিয়োগ করেছেন, সেটি মুনাফাসহ কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ফেরত নিয়ে যেতে পারছেন কিনা সেটিও তারা বিবেচনা করে থাকেন। আমাদের এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। এখনো আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। এ ধরনের বেশকিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা এখনো রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের ১৮ কোটি জনগণ, এটি বেশ বড় একটি বাজার। এখান থেকে রিটার্নও বেশ আকর্ষণীয়। ফলে যারা একবার এখানে বিনিয়োগ করতে এসেছেন তারা কিন্তু এখান থেকে চলে যাচ্ছেন না, বরং নতুন করে আবার বিনিয়োগ করছেন। আর এনআরবি যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি দ্বিধা কাজ করে যে তারা অনেক বছর বিদেশে আছেন তাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম সেখানেই বেড়ে উঠেছে, ফলে তারা বাংলাদেশে গিয়ে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা? এক্ষেত্রে আমরা যারা দেশে বিনিয়োগ করেছি আমাদের দেখে তারা অনুপ্রাণিত হতে পারেন। আমাদের এখানে ব্যবসার যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটি সম্পর্কে বিদেশীদের অবগত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আমাদের দূতাবাসের সহায়তায় রোড শো, সেমিনারের মতো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। তাহলেই তারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।

আইপিওতে আসার আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো কোম্পানিগুলোর একটি সহজাত প্রবণতা। পুঁজিবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনাও রয়েছে। তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওতে আসার আগে কোনো প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করেনি কেন জানতে চাই?

আমি শুরু থেকেই আইপিওতে আসার পরিকল্পনা করছিলাম। এ-সংক্রান্ত আইন-কানুনগুলোও আমার জানা। আমার অধিকাংশ বিনিয়োগ কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এসেছে। প্লেসমেন্ট শেয়ারের ধারণাটি আমার কাছে নেতিবাচক মনে হয়। যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন আমার কোম্পানির বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার মাধ্যমেই মূলধন বাড়িয়েছি, এজন্য বাইরের কারোর কাছ থেকে আমাকে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়নি।

বিনিয়োগকারীরা কোন সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করে আপনাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন?

আইসক্রিমের বাজারে আমাদের পথচলা খুব বেশিদিনের নয়। এ অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বাজারে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতেও আমরা ভালো করব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা একটি পরিচ্ছন্ন ও গোছালো কোম্পানি হতে চাই। বিনিয়োগকারীদের আমরা কী দিতে চাই, সেটি কথায় নয় কাজেই প্রমাণ করব। সামনের দিনগুলোতে তারা সেটি দেখতে পাবেন। তাছাড়া আমাদের ১০০ বিঘা জমির মধ্যে ৪৮ বিঘার ওপর আমাদের আইসক্রিম কারখানা। এখনো অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে চাইলেই আরো অনেক কিছু করা সম্ভব। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ব্লু-চিপ কোম্পানিতে পরিণত হব ইনশা আল্লাহ। একথা বলছি এজন্য যে ব্লু-চিপ কোম্পানি হতে পারলে বিদেশী বিনিয়োগকারী নির্দ্বিধায় আমাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন