পুঁজিবাজার নিয়ে ওয়েবিনারে বক্তারা

কারসাজি বন্ধে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চোখের সামনেই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। বিশ্বের সব দেশেই পুঁজিবাজারে কারসাজির বিরুদ্ধে স্টক এক্সচেঞ্জ সবার আগে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ডিএসইর ব্রোকাররা কারসাজি করলেও স্টক এক্সচেঞ্জ নীরব। গতকাল পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের এমডি মো. মনিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কম। আর মিউচুয়াল ফান্ডের অংশ শতাংশ বলা হলেও লেনদেন আরো কম। আইসিবি ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই বললেই চলে। কিন্তু একটি বাজার তো একমাত্র আইসিবি দিয়ে চলতে পারে না। ডিএসইর সামনেই উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হচ্ছে। কিন্তু ডিএসই কিছুই করছে না। সবাই দেখছে একটি কোম্পানির কারখানা ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়তই ধরনের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ডিএসইর ব্রোকাররা কারসাজি করছে। ডিএসইর সামনেই বন্ধ থাকা এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। তারা তো লুকিয়ে করছে না। কারা এসব কোম্পানির শেয়ার কেনে এবং কারা বিক্রি করে, তা স্টক এক্সচেঞ্জ জানে। কিন্তু তার পরও ডিএসই এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ডিএসইকে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারে যদি কোনো কারসাজি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে পুরো বিশ্বেই সবার আগে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে সেটি ধরা পড়ে। বিএসইসি তো অনেক পরের বিষয়। প্রথমেই ধরবে স্টক এক্সচেঞ্জ। তাদের প্লাটফর্মে প্রতিদিন লেনদেন হয়। লেনদেনে কোনো অনিয়ম দেখলে বোঝা যায়। অথচ পুঁজিবাজারে পতন হলেই রাস্তায় লোকজন নেমে সরকারকে দোষারোপ করে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, তিন-চার বছর ধরে জমে থাকা আইপিওর আবেদনগুলো প্রায় শেষ। নতুন করে যেসব কোম্পানি আবেদন করবে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে তিন মাস নয়, কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হবে। পুঁজিবাজারে ভালো আইপিও আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আইপিও অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির বিগত বছরগুলোর ব্যবসা পর্যালোচনা করছি। বিশেষ করে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন কত এবং পাঁচ বছরের কর প্রদানের রেকর্ড বিশ্লেষণ করছি।

পুঁজিবাজারকে যাতে সহায়তা করতে পারে সেজন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সংস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আইসিবিকে ফান্ড দিয়ে আরো শক্তিশালী করতে হবে। বাজারের নেগেটিভ ইকুইটি দূর করতে বিশেষ ফান্ড আসছে। শেয়ার বাইব্যাক পদ্ধতি চালু করা হবে। এক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের কাজ করা হচ্ছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, দেশের ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানকে সুশাসন, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়। আমরা চাই কর জিডিপি রেশিও বাড়াতে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বিভিন্ন সুবিধা দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড এবং বিএসইসিকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, লভ্যাংশ দেয়া বাধ্যতামূলক করায় অনেক কোম্পানি ঋণ নিয়ে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সাময়িকভাবে এটি ভালো হলেও দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা হতে পারে। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন