নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত মহামারীতে টালমাটাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। অন্যদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে স্বর্ণের দামে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আর্থিক চাপ সামাল দিতে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে স্বর্ণ উত্তোলক দেশগুলো এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বেশি করে। ২০১০ সালের পর এই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়ের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বেশি দাঁড়িয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বুলিয়ন বিক্রির নিট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১ টন, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট ক্রয় ছিল ১৪১ দশমিক ৯ টন। সবচেয়ে বেশি বুলিয়ন বিক্রি করেছে উজবেকিস্তান ও তুরস্ক। আর রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৩ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে স্বর্ণ বিক্রি করল।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। চলতি বছরে তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। সিটিগ্রুপ গত মাসে এক পূর্বাভাসে জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার চাহিদা আগের অবস্থানে ফিরে আসতে আগামী বছর লেগে যেতে পারে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের লিড অ্যানালিস্ট লুই স্ট্রিট বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর তাদের স্বর্ণের রিজার্ভে হাত দেয়াটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তৃতীয় প্রান্তিকে যে স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে, তার বেশির ভাগই বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। তারা স্থানীয় উৎস থেকে স্বর্ণ কিনে সেগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করেছে। করোনা মহামারীর এই সময়ে যে আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতেই মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ বিক্রি করছে।’
ডব্লিউজিসি জানিয়েছে, তৃতীয় প্রান্তিকে তুরস্ক ও উজবেকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছে যথাক্রমে ২২ দশমিক ৩ ও ৩৪ দশমিক ৯ টন। এর মধ্যে উজবেকিস্তান কেবল স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল না থেকে তাদের আন্তর্জাতিক রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সার্বিকভাবে বুলিয়নের চাহিদা বছরওয়ারি ১৯ শতাংশ কমে ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। তা সত্ত্বেও এ সময়ে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যেতে দেখা গেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতে স্বর্ণালংকারের চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। স্বর্ণালংকারের চাহিদায় মন্দা ভাব দেখা গেছে চীনেও।
ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদার এই পতনের প্রভাব কিছুটা কাটানো গেছে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা ২১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায়। সার্বিকভাবে তৃতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণের সরবরাহ বছরওয়ারি ৩ শতাংশ কমেছে। মূলত কভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকার কারণে খনিগুলো থেকে স্বর্ণ উত্তোলন ব্যাহত হওয়ার কারণেই সরবরাহে এ পতন। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কিছু উত্তোলক দেশে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলেও সরবরাহে সংকোচন ঠেকানো যায়নি।