স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্যের সহায়তা না নিয়ে আর্থসামাজিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিতে বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা কেন অন্যের কাছে হাত পেতে, মাথা নিচু করে চলব?

গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন, যে চেতনায় লাখো শহীদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন, তাদের এবং আমার লাখো মা-বোনের সেই আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা যেন স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, এটা মুজিববর্ষ, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। মুজিববর্ষে আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত করব, উন্নত-সমৃদ্ধ করব, দেশের কোনো মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়; সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা কিন্তু আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আজকে এখানে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত তাদের আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কারণ আপনারা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃৃতিপ্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনাদের অবদান রয়েছে।

সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই ভার্চুয়ালি স্বাধীনতা দিবসের পদক প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু স্বাধীনতা পুরস্কার সবার হাতে তুলে দেয়া আমাদের কর্তব্য। যে কারণে এভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ যখন একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য অবদান রাখে, তাদের সম্মান করা, গুণীজনের সম্মান করা, এটা মনে করি আমাদের কর্তব্য।

প্রতি বছর ২৫ মার্চ সরকার পুরস্কারটি প্রদান করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার মার্চেই এমনভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেল যে বাধ্য হয়ে আমরা সব অনুষ্ঠান স্থগিত করলাম। এমনকি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যেটি ১৭ মার্চ ব্যাপক হারে করার কথা ছিল সেটাও লোক সমাগম না করে রকম ভার্চুয়ালি করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ করোনাভাইরাস তখন সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে ফেলেছে এবং অনেকেই মারা গেছে। এমনকি আমাদের একজন স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ বিজয়ী আজিজুর রহমানও মারা গেছেন।

বছর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত কমান্ডার আবদুর রউফ শহীদ বুদ্ধিজীবী মুহম্মদ আনোয়ার পাশা। স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বস্ত্র পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) আজিজুর রহমান; চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রাখায় অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী এবং অধ্যাপক ডা. একেএমএ মুকতাদির; সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কালীপদ দাস অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার এবং শিক্ষায় অবদান রাখায় ভারতেশ্বরী হোমসকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

স্বাধীনতা পদক দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে পুরস্কার প্রদান করে এলেও আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বহুলাংশে বাড়িয়েছে। তবে বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি ৫০ গ্রাম ওজনের পদক, সনদ এবং লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন