ফ্রান্সে গির্জায় ছুরি হামলায় নিহত ৩

জেদ্দার ফরাসি কনস্যুলেটেও হামলা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফ্রান্সের নিস শহরে গির্জার ভেতরে ছুরি হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিস মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এস্ত্রোসি টুইট করে জানিয়েছেন, নটর ডেম প্রাসাদের একেবারে কেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একজনকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়েছে। এটিকে তিনি সন্ত্রাসী হামলা এবং ইসলামী ফ্যাসিবাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে হামলা হয়। একই সময় আরো দুটি স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফ্রান্সের আভিনিওঁ শহরের কাছে মন্তফাভেতে এক বন্দুকধারী পথচারী পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।

এছাড়া সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসি কনস্যুলেটে এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে হামলা করে। এতে এক রক্ষী আহত হন। হামলাকারী সন্দেহভাজনকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। আহত রক্ষী শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম।

গির্জায় হামলার বিষয়ে ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় এক নারীর গলা কেটে ফেলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী রয়েছেন। গির্জার ভেতরে নিহত একজনকে ওয়ার্ডেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন আক্রমণকারীকে গুলি করে আটক করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ফ্রান্সের জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী কৌঁসুলিরা এরই মধ্যে ব্যাপারে হত্যা তদন্ত শুরু করেছেন।

ব্যাপারে মেয়র এস্ত্রোসি সাংবাদিকদের বলেছেন, সন্দেহভাজন আটকের আগে পরে অনেকক্ষণ ধরে একটানা আল্লাহু আকবর বলে চিত্কার করছিল। তিনি বলেন, অনেক হয়েছে। আমাদের অঞ্চল থেকে ইসলামী ফ্যাসিবাদ মুছে ফেলার জন্য এবার শান্তির আইন থেকে ফ্রান্সের সরে আসার সময় হয়েছে।

এদিকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ জনগণকে ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরালদ দারমানিওঁ বলেছেন, তিনি প্যারিসে মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

এদিকে নতুন করে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রাত থেকে ফ্রান্সে নতুন করে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। ব্যাপারে গতকাল পার্লামেন্টকে বিস্তারিত অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাস্তেক্স। সময় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি ঐক্য সংহতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুহূর্তে দেশ সত্যি সত্যিই নতুন এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মধ্যে নিস শহরেই সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটছে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দিবস উদযাপনের সময় ৩১ বছর বয়সী তিউনিসিয়ার এক অভিবাসী ভিড়ের মধ্যে ট্রাক চালিয়ে দিলে ৮৬ জন প্রাণ হারান।

রুয়েনের একটি গির্জার ভেতরে ফাদার জ্যাকস হ্যামেল নামে এক পাদ্রিকে গলা কেটে হত্যার কয়েক দিন পরই ঘটনা ঘটে।

ফ্রান্সে গত কয়েক বছর ধরেই জঙ্গিরা দফায় দফায় সহিংস হামলা চালিয়ে আসছে। গত মাসেই ফ্রান্সের রম্য ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর পুরনো কার্যালয়ের কাছে দুই সাংবাদিক ছুরিকাহত হয়েছেন।

বিতর্কিত কার্টুন ছাপার জেরে ২০১৫ সালের জানুয়ারি প্যারিসে শার্লি এবদো কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে উগ্রপন্থী মুসলিম দুই ভাই। ওই সময় নিহত হন ফ্রান্সের বিশিষ্ট কার্টুনিস্টসহ ১২ জন।

গতকাল হামলাটি এমন সময় ঘটল যখন চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর-পশ্চিম প্যারিসের একটি স্কুলের কাছে স্যামুয়েল প্যাটি নামে এক শিক্ষককে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্ব বিক্ষোভে উত্তাল।

গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলিতে ৪৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।

ওই শিক্ষক ক্লাসরুমে নবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন বলে ফ্রান্সের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছিল। প্যাটিকে হত্যার পর তার ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

মাখোঁর বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের নিন্দা করেছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশ।

নিয়ে কয়েকদিন ধরে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই ফ্রান্সে ফের নতুন হামলা হলো।

তবে নিস শহরে হামলায় মহানবীর (সা.) কার্টুন প্রদর্শনের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে চাইছে না ফ্রান্স পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন