প্রায় অর্ধলক্ষ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধারের মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম আট দিন ধরে কারাবন্দি। গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোট পুলিশের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ও জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন ।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অনেকটা গোপনে কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এটি জানাজানি হয় আজ বৃহস্পতিবার।
জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, কামরুল ইসলাম আজ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ সদর থানার এএসআই মোহাম্মদ সরওয়ার্দীর বাসা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলার আসামি পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ সরওয়ার্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, এটি তারা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসির নির্দেশে করেছেন। তার নির্দেশেই টাকা ও ইয়াবা রেখে আসামিদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন শুনানিকালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলামের সম্পৃক্ততায় বিস্ময় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই মাদক মামলার সঙ্গে ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসা সত্ত্বেও তাকে আসামি না করায় অবাক হোন উচ্চ আদালত।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আজাদকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৪ মার্চ সশরীরে হাজির হয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে সিআইডির ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ওই ঘটনায় ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা পাননি উল্লেখ করে চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। গত বছরের ৪ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি কামরুল ইসলামকে। এর এক মাসের মাথায় ২ এপ্রিল আবারও একই পদে বহাল করা হয় তাকে। এরপর তিন মাস ওসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে তাকে বদলি করে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) আনা হয়।
পবর্তীতে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট ইয়াবা পাচারের মামলাটি পুনঃতদন্ত করে আগামী দুই সাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুাপার নাজিম উদ্দিন জানান, হাইকোটের নির্দেশে পুনঃতদন্তে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় গত দেড় মাস আগে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই মামলায় গত ২২ অক্টোবর কামরুল ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) মো. মাহবুবুল আলম জানান, ইয়াবা মামলায় বর্তমানে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম কারাগারেই আছেন।
তবে বর্তমানে তিনি নারায়ণঞ্জ জেলা পুলিশে নেই বলে জানান জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা (ডিআইও-১) ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্যত্র পোস্টিং পেয়েছিলেন। বর্তমানে কোথায় আছেন জানি না। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে নেই।