প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২৬ লাখ কম্বল দিল ৩৭ বেসরকারি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতের আগেই অনুদান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে ২৬ লাখ ৬০ হাজার পিস কম্বল দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সংগঠনটির সদস্য ৩৭টি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুদান দেয়া হয়। কম্বল প্রদান উপলক্ষে গতকাল ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানসহ প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুদান গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শীত, বন্যাসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে নগদ অর্থ এবং কম্বল দিয়ে আসছে বিএবি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো শীত আসার আগেই কম্বল দিল ব্যাংকগুলো। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সর্বোচ্চ দুই লাখ কম্বল দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। লাখ ৫০ হাজার পিস করে কম্বল দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ন্যাশনাল ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে লাখ ২৫ হাজার পিস কম্বল। লাখ পিস করে দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক আইএফআইসি ব্যাংক। ১৬টি ব্যাংক কম্বল দিয়েছে ৭৫ হাজার পিস করে। ব্যাংকগুলো হলো আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, ওয়ান, প্রিমিয়ার, পূবালী, শাহজালাল ইসলামী, সোস্যাল ইসলামী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, দ্য সিটি ব্যাংক উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।

ত্রাণ তহবিলে চারটি বেসরকারি ব্যাংক কম্বল দিয়েছে ৫০ হাজার পিস করে। ব্যাংকগুলো হলো এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংক। দেশের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো ১৫ হাজার পিস করে কম্বল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো ইউনিয়ন ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি), এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক মেঘনা ব্যাংক।

বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারো আমরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শীতার্তদের জন্য ২৬ লাখের বেশি কম্বল প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শীত আসার আগেই কম্বল প্রদানের আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন হলো। পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আমরা ত্রাণ তহবিলে কম্বলগুলো পৌঁছে দেব।

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকারী শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মহামারী সৃষ্ট চলমান দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলো পরিচালিত হলে দুর্যোগ সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির বড় কোনো ক্ষতি হবে না।

ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ত্রাণ তহবিলে বিএবির কম্বল প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে পারলে তৃণমূলে গ্রাহক ব্যাংক উভয়ই লাভবান হবে। প্রণোদনা প্যাকেজে আমরা যেসব সুযোগ দিয়েছি, তাতে অল্প সুদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তার একটি পদক্ষেপ রয়েছে। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আরেকটু আন্তরিক হওয়ার দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যেহেতু প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাঁড়ান, এক্ষেত্রেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

দেশে একসময় বর্তমানের মতো এত বেসরকারি ব্যাংক ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বাধাবিঘ্ন ছিল, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি ছিল, বরং ব্যাংকের অলাভজনক শাখাগুলো বন্ধ করে দেয়ারও পরামর্শ ছিল, কিন্তু আমরা তা শুনিনি।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশটা আমাদের এবং আমরা জানি দেশের উন্নতি কীভাবে করতে হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ব্যাপারে সব সময়ই সচেতন। সে কারণে আমি ব্যাপকভাবে বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে দিয়েছি বলেই আমার সব থেকে লাভ যে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

এবার অনেক বৃষ্টিপাত হওয়ায় শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীত শুরু হওয়ার আগেই বিএবি শীতবস্ত্র কিছু কম্বল দিতে চেয়েছে; তারা নিয়ে এসেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা এসব কম্বল নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব, সহায়তা করতে পারব। 

করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি যথেষ্ট স্থবির জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে। তবে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা করোনার শুরু থেকেই প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, ব্যবসায়ীদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে বলেও ইঙ্গিত দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট রয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে রিজার্ভের পরিমাণ অন্তত ৫০ বিলিয়ন যেন হয়। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়নের কাজগুলো অন্যের থেকে অর্থ নিয়ে নয়, নিজেদের অর্থে এবং ব্যাংক লোনের মাধ্যমে যেন করতে পারি। সেই সঙ্গে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন