করোনার দীর্ঘ বিরতি শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণ আবারো মুখর হয়ে উঠছে সংস্কৃতিকর্মী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায়। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে ‘আর্ট অ্যাগেইনস্ট করোনা’
শীর্ষক মাসব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ২৭ অক্টোবর বিকাল ৪টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এর উদ্বোধন হয়।
৩২৫ জন শিল্পীর চিত্রকর্ম নিয়ে একাডেমির ১ ও ২ নং গ্যালারিতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্যালারির পাশাপাশি এসব ছবি অনলাইনে ভার্চুয়াল ডিসপ্লের মাধ্যমেও প্রচার করা হবে, যাতে সারা দেশের শিল্পী ও শিল্প রসিক দর্শকরা প্রদর্শনীটি উপভোগ করতে পারেন।
‘আর্ট অ্যাগেইনস্ট করোনা’
শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এদিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি, সচিব মো. বদরুল আরেফীন ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “করোনার সময় আমাদের শিল্পীদের দুর্দিনে ‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’
শীর্ষক এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয় এবং ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় বিষয়।”
এ রকম একটি আয়োজন করায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। শিল্পীদের নিয়ে মহতী এ উদ্যোগের জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।’
সারা দেশের মানুষের মনোবল সুদৃঢ় রাখার জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অনলাইনে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলাকে সম্পৃক্ত করে দশ সহস্রাধিক শিল্পী ‘আর্ট অ্যাগেইনস্ট করোনা’
শীর্ষক অনলাইন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন। এখানে শিশু-কিশোর, যুবা, প্রবীণ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুসহ প্রায় সব মাধ্যমের শিল্পীরা করোনাযুদ্ধে সংস্কৃতি নিয়ে শামিল হয়েছেন। জাতীয় চিত্রশালা ভবনের বিভিন্ন গ্যালারি, প্লাজা ও স্টুডিওতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পীদের ছবি আঁকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চলতি বছর ৭ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক শিল্পী তাদের পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ছবি আঁকতে আসেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রতিটি স্টুডিওতে স্বল্পসংখ্যক শিল্পীদের নিয়ে এ আর্ট ক্যাম্পটি ছিল একটি মডেল আর্টক্যাম্প। এছাড়া ঢাকার বাইরে থাকা শতাধিক শিল্পীকে তাদের বাসায় ক্যানভাস, রঙসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে দেয়া হয়। প্রত্যেক শিল্পীর জন্যই সম্মানীর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা বিশেষভাবে তরুণ শিল্পীদের জন্য ছিল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক।
করোনার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে শিল্পীরা তাদের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজেদের আশা, স্বপ্ন আর আলোর জন্য প্রতীক্ষা। শিল্পীদের তুলি-কলমে ছিল দুঃসময়ের প্রহরকে অতিক্রম করে সুস্থ-সুন্দর এক ভোরের জন্য প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘বিশ্বকে নান্দনিক ও মানবিক করার জন্য আমাদের মনীষীরা যে শক্তি আমাদের দিয়েছেন, তার কারণেই আমরা এ ধরনের আয়োজন করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
২৭ অক্টোবর উদ্বোধনী আলোচনা শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কবি পার্থ মুখার্জীর কবিতা ‘শঙ্খচিল’
ও কবি মীনার বসুনিয়ার ‘তিনি তোমাদের একার ঈশ্বর নন’
কবিতার অংশবিশেষ আবৃত্তি করেন বরেণ্য বাচিক শিল্পী লায়লা আফরোজ এবং কবি রীতা নাহারের কবিতা ‘পৃথিবীর অসুখে তুমি যে মানবতার ঢাল’
আবৃত্তি করেন বরেণ্য বাচিক শিল্পী মীর বরকত। ‘মঙ্গল হোক এ শতকে মঙ্গল সবার’
গানের কথায় আইরিন পারভীন ও সাইফুল ইসলাম ইভানের নৃত্য পরিচালনায় দুটি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। এছাড়া ফিফা চাকমার নৃত্য পরিচালনায় সম্প্রীতির নৃত্য পরিবেশন করেন চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা।
ওইদিন জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের সামনে বিকাল ৫টা-৬টা পর্যন্ত শিল্পী অসীম হালদার সাগরের পরিচালনায় পারফরম্যান্স আর্ট ‘ব্রিথিং উইথ ল্যাঙ্গুয়েজ-২’,
বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টায় ১ নং গ্যালারির সামনে শিল্পী আবু নাসের রবির পরিচালনায় ‘যদিও সুন্দর ঘিরে থাকে আমাদের তবুও তাকে খুঁজতে আমরা বাগানে যাই’
এবং শিল্পী সরকার নাসরিন টুনটুনের পরিচালনায় ভাস্কর্য গ্যালারির সামনে ‘আশার আলোর উপস্থিতি’
পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশিত হয়।
‘আর্ট অ্যাগেইনস্ট করোনা’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার জন্য উন্মুক্ত।