একদা পৃথিবীকে শাসন করা দৈত্যাকার পাখি

বণিক বার্তা অনলাইন

১৯৮০’র দশকে ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের সিউমার দ্বীপ পরিদর্শন করেছিলেন। সেসময় তারা দুইটি প্রাগৈতিহাসিক পাখির পায়ের হাড়, চোয়ালের আংশিক হাড় সহ অনেকগুলো জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছিলেন। কয়েক দশক ধরে জীবাশ্মগুলো ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জাদুঘরে রাখা ছিল। 

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পিটার ক্লয়েস নামের একজন স্নাতক শিক্ষার্থী জীবাশ্মগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সোমবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ক্লয়েস পাখিগুলোকে পেলাগোর্নিথিড হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এই শিকারী পাখির দল অন্তত ৬ কোটি বছর ধরে দক্ষিণ মহাসাগরে ঘুরে বেড়াত। ধারালো দাঁত ও দীর্ঘ ঠোটের কারণে এগুলো হাড়-দাঁতওয়ালা পাখি হিসেবেও পরিচিত। এই ধারালো দাঁত ও দীর্ঘ ঠোট তাদেরকে সমুদ্র থেকে মাছ ও স্কুইড শিকার করতে সহায়তা করতো। 

সমীক্ষাটিতে পাওয়া গেছে, পাখিগুলো বিশালাকার ছিল। এদের ডানাগুলো সর্বোচ্চ ২১ ফুট (৬.৪ মিটার) পর্যন্ত লম্বা ছিল। জীবাশ্মের এই পাখিগুলো পেলাগোর্নিথিড পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হতে পারে। 

জীবাশ্মের আকার ও পরিমাপ ব্যবহার করে গবেষকরা বাকী পাখিরও আকারের অনুমান করতে সক্ষম হন। পায়ে হাড়যুক্ত পাখিটি বিলুপ্ত হওয়া পেলাগোর্নিথিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নমুনা। গবেষণাটি বলছে, অ্যান্টার্কটিকার জীবাশ্মগুলো সম্ভবত সাড়ে ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৩ কোটি বছর আগের ইওসিন যুগের বৃহত্তম উড়ন্ত পাখি ছিল। পাশাপাশি এটা এখন পর্যন্ত বসবাসকারী কয়েকটি বৃহত্তম উড়ন্ত পাখির প্রতিনিধিত্ব করে। 

ক্লয়েস ও অন্যান্য গবেষকরা একমত হয়েছেন, পায়ের হাড়টি ৫ কোটি বছর আগের এবং চোয়ালের হাড়টি প্রায় ৪ কোটি বছর পুরানো। তথ্য-প্রমাণ বলছে, পৃথিবীতে গ্রহাণু আঘাত হানার পরে এবং প্রায় সমস্ত ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর সেনোজোয়িক যুগে এই দ্বৈত্যাকার পাখিগুলোর উত্থান হয়েছিল। 

একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লয়েস বলেন, আমাদের জীবাশ্ম আবিষ্কারে পাখিগুলোর ডানা ৫ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা পেয়েছি। ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হওয়ার পর পাখিগুলো সত্যিকার অর্থেই বিশাল আকারে বিকশিত হয়েছিল এবং কয়েক লাখ বছর ধরে সমুদ্রের ওপর রাজত্ব করেছিল। 

বড় ধরনের সামুদ্রিক পাখি অ্যালবাট্রোসের মতো পেলাগোর্নিথিডও বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত ভ্রমণ করেছিল এবং এরা কয়েক সপ্তাহ একাধারে সমুদ্রের ওপর উড়তে পারতো। সেসময়ও সাগরগুলোতে তিনি ও সীলের আধিপত্য ছিল। এর অর্থ এগুলো দৈত্যাকার পাখির সহজ শিকার ছিল। 

গত এপ্রিলে সুইডিশ মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির সিনিয়র কিউরেটম টমাস মুরস বলেছিলেন, আমার অনুমান অ্যান্টার্কটিকা একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রময় জায়গা ছিল। সেখানে যা বসবাস করতো, তার শতাংশ মাত্র পেয়েছি আমরা। 

সূত্র : সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন