বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে কিছু প্রস্তাবনা

এম এ হাসেম

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বা নীতি প্রণেতা হিসেবে আমি মনে করি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিচালনা, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন এর জন্য জাতীয় পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিটি থাকা একান্ত প্রয়োজন। এ কমিটিতে অর্থমন্ত্রণালয়সহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে বৈশ্বিক উন্নয়নের সাথে সংগতি রেখে জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল স্থির করা। মূলত দারিদ্র নিরসনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা করা।

BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বহুমুখী উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

১. চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর : চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার চলমান কাজ ত্বরাম্বিত করা প্রয়োজন। এতে আমাদের দেশ অনেক রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। কারণ সমুদ্রের নাব্যতার কারণে বড় জাহাজগুলো বাংলাদেশে আসে না। বর্তমানে যে সমস্ত জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করে তাহা ৫০ থেকে ৬০ হাজার মে. টন পণ্য নিয়ে বন্দরে নোঙ্গর করে। যা কিছু আসে তাহা গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে এবং উক্ত জাহাজ হতে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে সরবরাহ নিতে গিয়ে আমদানিকারকদের প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ ডলার বেশি দিয়ে দিতে হয়। এতে করে পণ্যের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়ে যায়। পাশাপাশি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারণ ভোক্তার উপর এর প্রভাব পড়ে। তাই কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন করলে ওইখানে ২ দশমিক ৫০ লাখ থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন জাহাজ নোঙ্গর করতে পারবে। উদাহরণ স্বরূপ সিঙ্গাপুরের মত চট্টগ্রামস্থ কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে আগত বড় বড় মাদার ভেসেল নোঙ্গর করতে পারবে। এই প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চায়না অথবা জাপানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোম্পানির সহিত যোগাযোগ করা যেতে পারে এবং এতে তারা রাজি হবে বলে আমি মনে করি। 

২. বাংলাদেশ বিমান : স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই বাংলাদেশ বিমান লোকসানের সম্মুখীন। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক লোক নিয়োগ, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা বাংলাদেশ বিমানের লোকসানের বোঝা ভারী করেছে। 

এ থেকে মুক্তি পেতে হলে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এয়ার লাইন্স Emirates Airlines  এর ন্যায় বিদেশী অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নিকট থেকে বাংলাদেশ বিমানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট হায়ার করা উচিত। ২০ কোটি জনগণের দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি এয়ারলাইন্স আসবে এবং যাবে। এখানে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ হবে।    

৩. বিমানবন্দর : দেশের বৃহৎ স্বার্থে এবং একটি সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসেবে নতুন এয়ারপোর্ট Priority Basis-এ নির্মাণ করার প্রস্তাব করছি যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। ব্যাংকক এর অনুরূপ বাংলাদেশ এয়ারপোর্টকে আরও আধুনিকায়ন করা উচিত।  

৪. যানজট মুক্ত ঢাকা মহানগর : এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বর্তমানে দুঃসহ ও তীব্র যানজট ঢাকা মহনগরীর জন্য বিরাট অভিশাপ। জনজীবন প্রায় স্থবির। এ থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রকাশ থাকে যে, যানজটের কারণে গাড়ি চালু অবস্থায় থামিয়ে থাকতে হয়, এতে করে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তেল খরচ হয় এবং সময় নষ্ট হয়। 

BOT ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে সারা ঢাকা মহানগরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রো বা বুলেট ট্রেন চালু করে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পুরনো ড্রেনেজ স্যুয়ারেজ এর স্থলে আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য জাপান, চীন কিংবা কোরিয়ার সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

৫. পর্যটন : প্রকৃতির লীলাভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশ্বে বৃহত্তম ও অতুলনীয়। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমাদের রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের ভান্ডার। সুতরাং, পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগ রয়েছে অপরিসীম। তাছাড়া কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি ও সেন্ট মার্টিনকেও পর্যটন নগরী হিসেবে তোলা যেতে পারে।  

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত জুড়ে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় ও আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। জাপানের সাথে ২০ বছর চুক্তি করে BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।

পর্যটন শিল্পকে আরো প্রসার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন এরিয়া গুলোকে ব্যাংকক ও পাতায়া’র মত ফ্রি জোন করা যেতে পারে। এতে করে বিদেশীরা বাংলাদেশে পর্যটনে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপ, আমেরিকার মতো আমাদের দেশেও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করবে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিদেশী যে সমস্ত কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করছে তাদেরও বিনোদনের একটি অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত হবে। এতে তাদের কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও নদী মাতৃক দেশ। এর সৌন্দর্য সারা বিশ্বে অতুলনীয়।   

৬. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বেগবান করা এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বিশ্বমানে উন্নীত করা অতীব প্রয়োজন। ঢাকার কাঁচপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিঃ মিঃ রাস্তায় বুলেট ট্রেন স্থাপনসহ ৬ লেনের মহাসড়ক BOT এর মাধ্যমে উন্নয়ন করা অতীব জরুরি। বুলেট ট্রেন স্থাপন করলে ঢাকার কাঁচপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৪০ মিনিটে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েও মানুষ অফিস এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করতে পারবে। তাতে করে ঢাকা শহরের উপর চাপ কমবে। বুলেট ট্রেনের ব্যাপারে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ যেমন জার্মানি, কোরিয়া ও চীনের বিভিন্ন কোম্পানির সহিত যোগাযোগ করা যেতে পারে। 

চট্টগ্রাম হইতে ঢাকা আসতে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দিতে হয়। তাতে করে পণ্যের খরচ অনেক বেশি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হয়। যাত্রীবাহী গাড়ির জন্য আলাদা লেন নির্মাণ প্রয়োজন। এতে করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই লেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা পৌঁছাতে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে সময় বাঁচলে অনেক কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।  

৭. সড়ক ও জনপথ: দেখা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সড়ক ও জনপথ এর কাজ অত্যন্ত নিম্মমানের। প্রধান  কারণ  হচ্ছে  দরপত্র আহবান থেকে শুরু করে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজে অনিয়ম ও প্রচুর দুর্নীতি। যার ফলে প্রতি বছর সড়ক ও জনপথ মেরামতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ অযথা ব্যয় করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে কোন সড়ক মহাসড়ক যেন আরসিসি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এতে সড়ক-মহাসড়কের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘমেয়াদী হবে এবং বছর বছর সংস্কার ও মেরামত করতে হবে না। 

এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, চীন কিংবা কোরিয়ার কোন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোম্পানিকে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজ দিলে একদিকে আর্থিক সাশ্রয় হবে, অপরদিকে কাজের মানও উন্নত হবে। ভালো উদাহরণ হচ্ছে উত্তরবঙ্গে যমুনা সেতুর পরে কোরিয়ান কোম্পানি যে রাস্তা তৈরি করেছে তা এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে, কারণ কাজের মান ছিলো অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া সড়ক, মহাসড়ক, শাখা সড়ক গুলো পিচ দ্বারা তৈরী না করে RCC ঢালাই করে নির্মাণ করলে বছরের পর বছর স্থায়ী হবে। 

৮. আবাসিক প্রকল্প : ঢাকা-চট্টগ্রাম ৬ লেনের রাস্তার মতো বাংলাদেশের যে সমস্ত ৬ লেনের সড়ক রয়েছে, উক্ত সড়কের ৫০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে একটি করে স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা যেতে পারে। 

৯. বিদেশে আমাদের দেশের রাষ্ট্র দূতদেরকে নির্দেশ দেওয়া হোক, যাতে করে বিদেশী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় বিনিয়োগকারীদেরকে নিয়ে মিটিং করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। BOT (Build Operate and Transfer against Toll) ভিত্তিতে বিনিয়োগ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হবে। 

১০. সারাদেশে BOT (Build Operate and Transfer against Toll) ভিত্তিতে সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, বড় বড় স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। 

১১. স্বাধীনতার পর হইতে সাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে নদীপথ দিয়ে ফেরি চলাচল করে বর্তমানে নাব্যতার কারণে প্রায়শই ফেরি চলাচলে অসুবিধা হয়। ২০ কোটি জনগণের বাংলাদেশের এই ফেরিঘাটটি ওই অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ফেরি বন্ধ থাকার সাথে সাথে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক আটকা পড়ে যায়। এতে অনেক পঁচনশীল পণ্য থাকে যাহা যথাসময়ে বিভিন্ন আড়তে পৌঁছাতে পারে না এবং ট্রাকের মধ্যেই অনেক পণ্য পঁচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া শত শত বাস ও প্রাইভেট পরিবহন এর যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। তাই উক্ত এলাকায় BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি বলে আমি মনে করছি। উক্ত স্থানে অনেক আগেই ব্রিজ নির্মাণ করা উচিৎ ছিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর থেকে বড় বড় নদীর উপর দিয়ে BOT এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। সেই আলোকে আমাদের দেশেও করতে কোন অসুবিধা নাই। শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ অর্জন করতে হবে।  

১২. Private Public Partnership (PPP)  এর মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পপতিদের সহিত সমন্বয় করে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার জন্য সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাস্তবে এই প্রকল্প বিভিন্ন কারণেই সম্ভব হবে না। তার মধ্যে অন্যতম হল বেসরকারি শিল্পপতিদের নিকট বিপুল পরিমাণ অর্থ নাই যে তারা সরকারের সহিত PPP এর মাধ্যমে কোন প্রকল্প কিংবা কোন কাজ যৌথ ভাবে করবে। তাছাড়া তাদের কোন equipment ও নাই।  

১৩. সারা দেশে রেল ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক ও মান সম্মত না হওয়া ও দীর্ঘ দিনের পুরনো রেল লাইন সংস্কার না করার কারণে বেশিরভাগ জেলাতেই রেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যদিও সরকার রেল লাইনের সংস্কার, নতুন লাইন স্থাপন, মিটারগেজকে ব্রডগেজে রূপান্তর, উন্নত ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের রেলকে লাভজনক ও মানসম্মত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এই ২০ কোটি জনগনের দেশ বাংলাদেশে রেল ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হওয়া উচিৎ। সেই আলোকে  BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে সারা দেশে বুলেট ট্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে। এখানে আমাদের কোন বিনিয়োগ করা লাগবে না। জাপান, কোরিয়া, চায়নাসহ আরও উন্নত দেশগুলো এই BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে আমাদের দেশর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে আগ্রহী আছে। 

১৪. বর্তমান সরকার উত্তরা থেকে মিরপুর, আগারগাঁও (জংশন), ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল এর কাজ প্রায় শেষের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত রুট ছাড়াও ঢাকা শহরে বিভিন্ন বড় বড় সড়কগুলোর উপর দিয়ে মেট্রো রেলের লাইন সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এতে করে ঢাকা শহরের জনগনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অতি সহজীকরণ হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ি যানযটে থেকে যেভাবে কাজের সময় নষ্ট হয় অন্যদিকে যানযটে বসে থেকে বিপুল পরিমাণে তেল এবং গ্যাস অপচয় হয়। তাহার ফলে দেশের অর্থনীতির উপর নীতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।  

১৫. আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের দেশে অনেক নদী রয়েছে। কিন্তু ওই সমস্ত নদীর নাব্যতা কমে গিয়েছে। তাছাড়া নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেক বাড়ীঘর, চাষাবাদের জমি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী খনন ও নদীর পাড় বাঁধ (দেওয়াল) দেওয়া উচিৎ। প্রয়োজনে জাপান, কোরিয়া, চীনের অভিজ্ঞ  কোম্পানির সহিত যোগাযোগ করা যেতে পারে। এই সমস্ত প্রকল্পগুলো আমাদের দেশের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।  প্রতিটি নদীর বাঁধে আর.সি.সি ওয়াল নির্মাণ জরুরি। তাহলে আমাদের দেশে বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে না। নদীর পানি ভালো থাকবে এবং তিস্তার পানির প্রয়োজন হবে না। আমাদের নদী গুলোতে সর্বদাই পানি থাকবে। 

প্রকাশ থাকে যে, BOT (Build Operate and Transfer against Toll) এর মাধ্যমে দেশে যে সমস্ত বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে তাতে বাংলাদেশের কোন অর্থই ব্যয় হবে না। শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্ত ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেমনটি করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়া। 

পরিশেষে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা এবং বাংলাদেশ এর প্রধানমন্ত্রী কে আমি বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি যে, আপনি এদেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপনার নিয়ত ও উদ্দেশ্য এ জাতির সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আমি আপনাকে মানবিক কারণে উল্লেখিত প্রস্তাবনাগুলো আপনার সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করলাম। 

আপনি উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশ ও জাতি সারা জীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। আপনার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কারণে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তা না হলে আমরা সারা জীবন পরাধীন থাকতাম। তাই উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো বিনয়ের সহিত বিবেচনা করার জন্য আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করছি।  

লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য,
প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং  চেয়ারম্যান, পারটেক্স গ্রুপ  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন