এলজিইডি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান

ড. কিউ আর ইসলাম

জাতীয় অর্থনীতিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় শস্যজাত খাদ্যের পুরোটাই উৎপাদিত হয় গ্রামে। প্রাণিজাত খাদ্যও আসে গ্রাম থাকে। হস্ত, ক্ষুদ্র, কুটির ও ম্যানুফাকচারিং শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। খাদ্য ও শিল্প উৎপাদন, উপকরণ সংগ্রহ, পণ্য সরবরাহ, খামার-গ্রাম-নগর সংযোগ স্থাপন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উৎপাদনশীল জীবনযাত্রার জন্য গ্রামে টেকসই ও নির্ভরশীল অবকাঠামোর প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত কৃষি ও গ্রামীণ পরিসংখ্যান জরিপ ২০১৮ প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে দেশে গ্রামীণ জনসংখ্যা বারো কোটির ওপর। গ্রামে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা পৌনে তিন কোটির মতো। গ্রামীণ এই জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অবদান বেড়েছে। গ্রামে পারিবারিক উপার্জন বৃদ্ধি পেয়েছে ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দারিদ্র্যের গভীরতা ও তীব্রতা কমেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে শহর ও গ্রামের মধ্যে পারিবারিক গড় আয়ের ব্যবধান কমের দিকে। অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারের মোট গড় আয়ে মজুরি ও বেতন বাবদ আয়ের অংশ বেড়ে গেছে। কৃষি উপকরণ ও পণ্য পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধিতে সামগ্রিকভাবে কৃষি উৎপাদন বহুমুখী হয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবাদি জমির নিবিড় ব্যবহার এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে কৃষকেরা প্রণোদিত হচ্ছেন। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁস, মুরগি ও মত্স্য খামারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় এ বৃদ্ধি লক্ষণীয়। গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস ও ডিমের পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামের পরিবার এসব খাদ্য বাবদ ব্যয় করতে আগের থেকে বেশি সক্ষম। কাপড়চোপড়, ঘরবাড়ি ও ভাড়া, গৃহ সরঞ্জাম ইত্যাদি বাবদ খরচের প্রবণতা এখন বেশি। গ্রামে উন্নয়ন প্রযুক্তি বিস্তার লাভ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের যাতায়াত সহজ হয়েছে এবং নাগরিক সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ জীবনে এসব পরিবর্তনে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রভাব লক্ষ করা যাবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

এলজিইডি হিসেবে সর্বপরিচিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, গুদাম ও হাট-বাজার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ অন্যান্য কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন এবং সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এলজিইডি ২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন জোরদার হয়েছে। এলজিইডির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-২০১৯-এ দেয়া তথ্য অনুযায়ী পল্লী সড়ক নেটওয়ার্ক তিন লাখ তিপ্পান্ন কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি পাকা। সড়কের ওপর প্রয়োজনীয় ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এলজিইডি গত বছরের শুরু পর্যন্ত চার হাজার তিন শতাধিক গ্রোথ সেন্টার/গ্রামীণ মার্কেট উন্নয়ন, তিন হাজার তিন শতের কাছাকাছি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, দুই শতাধিক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও নয় হাজার দুই শতের ওপর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া সাড়ে পাঁচ শতাধিক দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক, গ্রামীণ রাস্তা এবং বাঁধের পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে পুরুষের পাশাপাশি দুস্থ নারীদের সম্পৃক্ত করা হয়। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব বেড়েছে। 

গ্রামে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে পারিবারিক আয়বর্ধন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ, পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ছয় দশক ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচ পানি সরবরাহ ও খরা প্রতিরোধে বাঁধসহ অন্যান্য পানি নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ কাঠামো নির্মাণ করে আসছে। খাল-বিল, নদী-নালার এ দেশে আবাদি জমি ব্যবহার ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে এসব অবকাঠামোর কার্যকারিতা অপরিসীম। নদীভাঙন থেকে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ও হাট-বাজার রক্ষা করেছে। নদী পুনঃখননে নাব্যতা বৃদ্ধি করে নৌযান চলাচলে সুবিধা প্রসারে গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, নদীখননসহ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যন্ত নয়শর কাছাকাছি প্রকল্প বাস্তবান করেছে। এতে প্রায় পঁয়ষট্টি লাখ হেক্টর জমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন বা সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে এলজিইডি এগারো শতাধিক উপপ্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ সম্পূর্ণ করেছে। উপপ্রকল্প চিহ্নিতকরণ, পরিকল্পনা, ডিজাইন, মানসম্মত নির্মাণ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে উপকারভোগীসহ স্থানীয় জনগণ বা অংশীজনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকে। এসব উপপ্রকল্প এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা বাঁধ তৈরি বা সংস্কার, ভরাট খাল খনন বা পুনঃখনন, পানি নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ কাঠামো নির্মাণ, রাবার ড্যাম স্থাপন বা ভূ-উপরস্থ পানি সেচ এলাকা উন্নয়ন এবং নির্মিত পানি সম্পদ অবকাঠামোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে উপকারভোগীসহ স্থানীয় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পারিবারিক আয়বর্ধনে সহায়ক হয়েছে। বন্যা ব্যবস্থাপনা, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও ভূ-উপরস্থ সেচ এলাকা প্রসারে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার এবং খাল খনন ও পুনঃখননসহ সব মাটির কাজে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক নিয়োগ গ্রামের দুস্থ নারী ও পুরুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। মত্স্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। একই জমিতে বছরে অধিকতর সংখ্যক ফসল আবাদ সম্ভব হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ফসল আবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। বিএডিসি হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়র সংস্থা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খাল পুনঃখননসহ ফসল রক্ষা বাঁধ, সেচ অবকাঠামো, রাবার ড্যাম, হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম, ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরস্থ সেচনালা নির্মাণ করেছে। সেচ প্রকল্প ও সেচ কর্মসূচি  গ্রহণ করেছে। গভীর নলকূপ ও শক্তিচালিত পাম্প স্থাপন করেছে। খাল পুনঃখননসহ লো-লিফট, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে পাম্প, সৌরশক্তিচালিত পাম্প ও ডাগওয়েল স্থাপন এবং ডাবল লিফটিং ও পোর্টেবল সেচ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভূ-উপরস্থ পানি সেচাধীন এলাকা সম্প্রসারিত হয়েছে। খাল পুনঃখননে জলাবদ্ধতামুক্ত হওয়ায় আবাদি জমি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কার্যক্রমে বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাইশ হাজার হেক্টর সেচ এলাকা সম্প্রসারিত হয়েছে, প্রায় সাতশ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন হয়েছে এবং ছয়শ কিলোমিটারের কাছাকাছি সেচনালা তৈরি হয়েছে। বিএডিসি দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ফার্মে ফসলের উন্নত মানের ও উচ্চফলনশীল বীজ এবং উদ্যান কেন্দ্র ও কৃষি সেবা কেন্দ্রে গাছের চারা ও কলম  উৎপাদন করে কৃষকদের সরবরাহ করে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বা বিআরডিবি সেচ সম্পসারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়া ভূগর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ করে উন্নত সেচ ব্যবস্থার আওতায় ফসল আবাদি এলাকা বৃদ্ধি করেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে গভীর নলকূপ স্থাপন, ক্রসড্যাম ও সেচনালা নির্মাণ এবং খাল পুনঃখনন করে পানি সংরক্ষণ বৃদ্ধি ও সেচ এলাকা সম্প্রসারিত হয়েছে। খাবার পানি সরবরাহ স্থাপনা ও কৃষিপণ্য বাজারজাতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মজা পুকুর খনন এবং ফসলের বীজ ক্রয়, প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গ্রামে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণোত্তর রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদকে কারিগরি সহায়তা মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হয়েছে। এ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬-১৭তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে প্রতি ৮৮ জনের জন্য একটি সরকারি নিরাপদ খাবার পানির উৎস আছে। দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ নিরাপদ পানি পান করছে। গ্রাম এলাকায় আবাসগৃহের ১৫০ মিটার বা ৫০০ ফুট আওতার মধ্যে একটি নিরাপদ খাবার পানির উৎস থাকবে। এই স্বীকৃত মানের ভিত্তিতে গ্রাম এলাকার শতকরা ৮৭ ভাগ এরই মধ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে। গ্রামে সরবরাহের জন্য স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরি করা হয়। এসব কর্মসূচির আওতায় এরই মধ্যে আরো অগ্রগতি হয়েছে। 

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে সাতাত্তর হাজারের অধিক গ্রামে প্রায় সাড়ে চার লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন বিদ্যুতায়ন করেছে। এতে সোয়া দুই কোটির ওপর আবাসিক, আড়াই লাখের বেশি সেচ, সাড়ে পনেরো লাখ বাণিজ্যিক, প্রায় পৌনে দুই লাখ শিল্প, তিন লাখের বেশি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও তেইশ হাজার অন্যান্য সংযোগ প্রদান করেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ খাদ্য ও শিল্পজাত পণ্য প্রক্রিয়া ও গুদামজাতে সহায়ক হয়েছে। 

নির্মিত গ্রামীণ অবকাঠামো টেকসই ব্যবহারে নিয়মিত ও জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এছাড়া অতিবৃষ্টি ও লোনা পানিও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনসহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ক্রমবর্ধমান জন্যসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামোর গুরুত্ব অধিকতর হবে। গ্রামে বহুমুখী উন্নয়ন এবং নগর জীবনযাত্রার মানের সার্বিক ব্যবধান কমাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আরো জোরদার করা হোক। 


ড. কিউ আর ইসলাম: উন্নয়ন গবেষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন