পাহাড়ে আধুনিকতার আভা

ড. মো. জামাল উদ্দিন

অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি তা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা যায় এবং তা কার্যকর চাহিদার সঙ্গে সংবেদনশীল হয়। দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। যার সুবাদে এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষাবিস্তার হয়েছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতে শিখেছে বা শিখছে, বিদ্যুতায়নের কারণে অনেক এলাকা আলোকিত হয়েছে, তথ্যপ্রবাহ ও যোগাযোগ বেড়েছে, সামাজিক সুবিধা বেড়েছে, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে, মা ও শিশু কল্যাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দাপ্তরিক কাজে সামর্থ্য বেড়েছে। সর্বোপরি এলাকার মানুষের মনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। যদিও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এটা অনেকটা অনুপস্থিত। 

এ অঞ্চলটি ভৌগোলিক কারণে সমতল ভূমি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল, উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা সর্পিল আকৃতির যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সঠিক সময়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ভূখণ্ডের শতকরা এক ভাগ জমি সমতল যা পাহাড়গুলোর মাঝে অবস্থিত, ২ শতাংশ জমি সামান্য উঁচু, ৫ শতাংশ জমি স্বল্প উঁচু পাহাড়ের ভ্যালি এবং ৯২ ভাগ জমি উঁচু এবং মাঝারি আকারের পাহাড়ে পরিবেষ্টিত। দেশের এক-দশমাংশ এলাকাজুড়ে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। যার মোট আয়তন ১৩২৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১.৭ মিলিয়ন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৯-এ সংবেদনশীল (রেজিলিয়েন্ট) অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষির ও পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কর্তৃক এখানে একটি কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে বেড়ে যাবে এবং রফতানির সুযোগ বাড়বে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এ অঞ্চলের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে ৭৭ নং অধ্যাদেশবলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কৃষি, শিক্ষা, যাতায়াত, অবকাঠামো নির্মাণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থেকে গ্রামীণ জনপদের আমূল পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি আঞ্চলিক জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশী সংস্থাগুলো অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভাগীদার। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়াও তাদের লাগতে শুরু করেছে। মানুষ এখন অবাধে থানচির রেমাক্রিসহ রাঙ্গামাটির সাজেক পর্যন্ত বিচরণ করছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগ শুরু হলে এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কৃষির উন্নয়নকে বেগবান করা যেমন সহজ হবে, তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

এ যাবৎ এতদঞ্চলে যেসব অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে তার মধ্যে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, হাটবাজার, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, প্রশাসনিক ভবন, হোটেল মোটেল, কটেজসহ নানা রকমের স্থাপনা উল্লেখযোগ্য। এসব অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে জনগণ এর সুফল ভোগ করছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের যোগাযোগের একটা সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। তবে দুর্গম পাহাড়ের উৎপাদনস্থলের সঙ্গে কানেক্টিভিটি রাস্তার উন্নয়ন না হওয়ার কারণে কৃষির সঙ্গে জড়িত পেশার মানুষের কষ্ট রয়েই গেছে। উৎপাদন এলাকা জোনিং করে অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে এর সুফল ভোগ করত সহজে। কৃষিকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলায় মোট চারটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত আছে। এসব কেন্দ্র থেকে এখানকার মানুষ হাতে-কলমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একদিকে যেমন তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি গ্রহণ করে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

রাঙ্গামাটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসসহ জেলা-উপজেলায় তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক ও কর্মযজ্ঞের কারণে কৃষিতে নীরব বিপ্লব ঘটছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এসব সেবা ছড়িয়ে দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষির অনেক ধরনের ভৌতিক অবকাঠামো গড়ে উঠলেও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য তা যৎসামান্য। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন দীর্ঘ সময়ের দাবি থাকলেও তা বিভিন্ন কারণে এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে আনারসের চিপস তৈরির একটি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। যার সুফল স্থানীয় চাষীরা ভোগ করছেন। কৃষি সেচ ও পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক জায়গায় বাঁধ নির্মাণ, সেচ ড্রেন নির্মাণ, সেচ নালা সম্প্রসারণ ও মেরামত ও পানির ট্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার চাষাবাদের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে রাবার ড্যাম স্থাপন করার কারণে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জন্য কৃষি, যাতায়াত, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য মোট ৫১৪৭.৫১ লাখ টাকা ব্যয় করে। যা ১৫০ ধরনের বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে খরচ করা হয়। একই অর্থবছরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জন্য খরচ হয় ২৬০১.৬৬ লাখ টাকা, যা অবকাঠামো নির্মাণসহ ১০৫টি কর্মকাণ্ডে ব্যয় করেন। অন্যদিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার জন্য ব্যয় হয় ২৯৫৬.০৫ লাখ টাকা, যা ১১৬টি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খরচ হয়। নিঃসন্দেহে এসব ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে পাহাড়ি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুবিধা বাড়বে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। পাহাড়ের উৎপাদিত কৃষিপণ্য যাতে এক জায়গায় বসে বিক্রি করতে পারে, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে বাজার শেড নির্মাণ করে যাচ্ছে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড। সাম্প্রতিক বছরে থানচি উপজেলার ১নং রেমাক্রি ইউনিয়নের রেমাক্রি বাজার শেড নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। দুর্গম রেমাক্রী বাজারে বাজারশেড নির্মাণের ফলে স্থানীয় পণ্য বাজারজাত করা সহজতর হয়েছে। যার সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। এ ধরনের শেড আরো বহু এলাকায় প্রয়োজন। 

পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্যাঞ্চলে ১ হাজার ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টির বেশি ছাত্রাবাস ও বিজ্ঞানাগার নির্মাণ এবং সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা দরকার। উপজাতি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলো উপজাতি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতিকে লালন করছে। রাঙ্গামাটি জেলার কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকার স্বল্পশিক্ষিত যুবকদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ, বৌদ্ধবিহার নির্মাণ, নাটমন্দির নির্মাণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করার কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সামাজিক অনুষ্ঠানের মান বেড়েছে। কুটির শিল্প স্থাপন ও বান্দরবানের মেঘালয় লুম্বিনী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থানীয় দরিদ্র ও বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। একসময় পার্বত্য অঞ্চল ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হতো। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে আর কমিউনিটি ক্লিনিকের সুবাদে এটা অনেকটা দূর করা সম্ভম হয়েছে। যদিও দুর্গম এলাকায় এখনো তা বিদ্যমান আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণ জরুরি।

পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটলেও দুর্গম এলাকার কিছু কিছু চিত্র এখনো সনাতনী ব্যবস্থাকেও হার মানায়। এমনি একটি গল্প দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই। তবে গল্প নয় এটা একটা বাস্তব চিত্র। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি রাস্তার পশ্চিমে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে ছংগরাছড়ি (মগপাড়া), রোয়াজাপাড়া ও গোলকপাড়ায় বেশকিছু কৃষকের বাতাবি লেবু (জাম্বুরা) বাগান রয়েছে। মারমা ভাষায় তারা একে কন্দাল বলে। ওখানে যাতায়াতের জন্য তেমন রাস্তা গড়ে না ওঠায় কৃষিপণ্য বাজারজাত করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মহালছড়ির মেইন রাস্তা থেকে আঁকাবাঁকা সর্পিল আকৃতির একটি প্রাকৃতিক পাহাড়ি ঝিরি বা ছরা (স্ট্রিম) প্রবহমান আছে। পাশে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মেঠো পথ। ওই পথ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। বড়জোর মেঠো পথে কিছুদূর মোটরবাইকে যাওয়া যায়। বাগান পর্যন্ত যেতে হলে ১২ বার ওই ঝিরি পার হতে হয়। আর ওই ঝিরিটিই বাতাবি লেবু সরবরাহের খরচবিহীন একমাত্র মাধ্যম। বাতাবি লেবু সংগ্রহের সময় হলে বাগানিরা বেপারি ঠিক করে নেয়। দরদাম ঠিক হলে বেপারিরা মহালছড়ির বাস্তায় বড়ব্রিজের কাছে ট্রাক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। 

বাগানি পাঁইচাও মারমাসহ দুই-তিন বাগানি মিলে ঝিরিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে তিন-চারটি মাটি দিয়ে নিজেরাই অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে। এরপর পানি জমতে জমতে যখন বাঁধ বরাবর হয় তখন বাগান থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাতাবি লেবু সংগ্রহ করে ঝিরির পানিতে ফেলে। এরপর অস্থায়ী বাঁধটি ভেঙে দিলে পানির স্রোতের সঙ্গে বাতাবি লেবুগুলো সাঁতার কাটতে কাটতে পরবর্তী বাঁধের গোড়ায় চলে যায়। তখন সে বাঁধটিও ভেঙে দেয়া হয়। এভাবে পরপর সব বাঁধ ভেঙে দিলে পানির স্রোতের তোড়ে বাতাবি লেবুগুলো সাঁতার কাটতে কাটতে সে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছে। বাতাবি লেবু পাহাড়ি ঝরনাতে আনন্দে সাঁতার কাটতে কাটতে যায়। আর তাদের সঙ্গে সামনে, মাঝে ও পেছনে তিন-চারজন বাগানি হাঁটতে থাকে। কোথাও বাতাবি লেবু আটকে গেলে সেটা ছুটিয়ে দেয়। চুরি-চামারিরও কোনো ভয় নেই। এভাবে সব বাতাবি লেবু তিন-চার কিলোমিটার সাঁতার কাটতে কাটতে অবশেষে মহালছড়ির প্রধান সড়কের বড় ব্রিজের গোড়ায় পৌঁছলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা বেপারির ট্রাকে উঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর নির্দিষ্ট গন্তব্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে যায়। এভাবে তারা ওই বাগান থেকে বাতাবি লেবু সরবরাহ করে, যার কোনো খরচ নেই। তবে অন্যান্য কৃষিপণ্য পেঁপে, কলা ইত্যাদি কাঁধে বহন করে বেশকিছু দূর নিয়ে আসার পর মোটরবাইকে প্রধান সড়কে বা বাজারে নিয়ে আসে। কৃষকদের লাভ হিসেবে প্রতি বাতাবি লেবুর দাম গড়ে মাত্র ৬-৭ টাকা করে পায়। আর সেই বাতাবি লেবু চট্টগ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় প্রতিটি গড়ে ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

বান্দরবানের রুমা থেকে বাঁশের বেলিতে করে সাঙ্গু নদীপথে অনেক কৃষিপণ্য বান্দরবান শহরের সাঙ্গু ব্রিজ পর্যন্ত নিয়ে আসতে দেখা যায়। কেননা সড়কপথে খরচ বেশি ও সময় লাগে। তাছাড়া বর্ষাকালে অনেক সময় পাহাড়ধসের কারণে যোগাযোগ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্গম উৎপাদনস্থলগুলোর সঙ্গে কানেক্টিভিটি রোড করা গেলে সহজে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত হতো। সে সঙ্গে উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে বেশকিছু কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করা জরুরি। এতে পণ্য নষ্ট হওয়া বা অপচয় হতে কিছুটা রেহাই পাবে। তিন পার্বত্য জেলায় সুবিধাজনক স্থানে ন্যূনতম তিনটি বৃহৎ আকারে ফার্মারস মার্কেট (কৃষক বাজার) স্থাপন অত্যাবশ্যক। যেখানে কৃষকরা তাদের পণ্য নিজেরাই সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন। পরিশেষে মানুষের শরীরের হাড় রোগে আক্রান্ত হলে যেমন গতি থেমে যায়, ঠিক তেমনি অবকাঠামো যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার সেবা বা পরিষেবার মান ভালো না হলে তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাই অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি তার সেবা ও পরিষেবার মান বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।


ড. মো. জামাল উদ্দিন: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন