ওমরাহ অনিশ্চিত, তবুও প্যাকেজ বিক্রি করছে অর্ধশতাধিক এজেন্সি

মনজুরুল ইসলাম

মহামারীর প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমার কারণে বিদেশী নাগরিকদের ওমরাহ হজে অংশ নেয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার মুসল্লি কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে ওমরাহ পালন করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ থেকে মুসল্লিরা কবে নাগাদ ওমরাহ পালনে যেতে পারবেন, সে ঘোষণা এখন আসেনি। এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্যাকেজ বিক্রি করছে অর্ধশতাধিক এজেন্সি।

জানা গেছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে পবিত্র মসজিদুল হারামে প্রতিদিন ২০ হাজার মুসল্লি ওমরাহ ও ৬০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর থেকে প্রথম ধাপে ওমরাহ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ অক্টোবর থেকে চলছে দ্বিতীয় ধাপের ওমরাহ। তৃতীয় ধাপে আগামী নভেম্বর থেকে বিদেশী ওমরাহ পালনকারীদের গ্রহণে প্রস্তুত সৌদি আরব। সীমিত পরিসরে ওমরাহ চালুর তৃতীয় ধাপে এখন পর্যন্ত অ্যাপের সাহায্যে ওমরাহ পালনের অনুমোদন পেয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ওমরাহযাত্রী। তবে এখনো কোন কোন দেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীরা যেতে পারবেন, তা চূড়ান্ত হয়নি। যদিও বেশকিছু এজেন্সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। 

শুধু তা-ই নয়, হজ এজেন্সিগুলো রীতিমতো প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে মাঠপর্যায় থেকে ওমরাহ যাত্রী সংগ্রহে নেমেছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জেলা শহরগুলোর স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক, কাজী, মসজিদের ইমামসহ পঞ্চাশোর্ধ্ব মুসল্লিরা। 

হজ এজেন্সিগুলোর দাবি, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে কালো তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলোই মূলত এ ধরনের প্রতারণা চালাচ্ছে। এজন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা কালো তালিকাভুক্ত এজেন্সিগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে। একই সঙ্গে ওমরাহ পালনের জন্য ওমরাহযাত্রীদের প্রতি এখনই কোনো এজেন্সির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করারও আহ্বান জানিয়েছে হাব।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে কবে থেকে যাওয়া সম্ভব হবে, এ বিষয়ে এখনো সৌদি আরবের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। হাবের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত সৌদি আরবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কোনো এজেন্সির সঙ্গে ওমরাহ প্রসেসিংয়ের চুক্তি করলে ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন কাফেলা ও নামসর্বস্ব এজেন্সি ওমরাহর জন্য মুসল্লি সংগ্রহে নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে। ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় ভুইফোঁড় সেসব তথাকথিত এজেন্সি মূলত ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে হাবের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও ওমরাহর বিজ্ঞাপন না দেয়ার জন্য এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ওমরাহ পালনের সুযোগ করে দেয়ার প্রচারণা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, কভিড-১৯-এর কারণে সৌদি সরকারের কাছ থেকে পবিত্র ওমরাহ পালন শুরুর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক পত্র এখনো পাওয়া যায়নি। তার পরও কতিপয় ব্যক্তি ও এজেন্সি ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্দিষ্ট দিন উল্লেখ করে পবিত্র ওমরাহ পালনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনসাধারণের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিধিমতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সৌদি সরকারের কাছ থেকে পবিত্র ওমরাহ পালনের অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তার আগে কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তিকে এ ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া ওমরাহ করতে ইচ্ছুক সবাইকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার আগে কারো সঙ্গে এ-সংক্রান্ত লেনদেন না করার জন্যও অনুরোধ করা হচ্ছে।

ওমরাহ হজ নিয়ে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এরই মধ্যে ৩৫টির বেশি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সারা দেশে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ-র্যাবসহ মসজিদ-মাদ্রাসায় এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। 

এদিকে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমিত পরিসরে ওমরাহ চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ওমরাহ সম্পন্ন করেছেন। ৬০ হাজারের বেশি মুসল্লি গ্র্যান্ড মসজিদে নামাজ আদায় করেছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত কমতে না থাকলে এত বিপুল পরিমাণ লোকের ওমরাহ পালনের সুযোগ থাকত না। পরিবেশ পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে চতুর্থ ধাপ শেষে পবিত্র দুই মসজিদে আগের মতো সবার প্রবেশের অনুমোদন থাকবে। 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই ওমরাহ ভিসা বাতিলের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। মূলত প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই ওমরাহ পালন ও মসজিদে নববিতে জিয়ারত স্থগিতের ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। ওই ঘোষণার পর সেদিন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পাঁচ শতাধিক ওমরাহ যাত্রী। সে সময় হাব নেতারা জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে। ৯ কোটি টাকার টিকিট কাটা আছে। তবে পরবর্তী সময়ে সৌদি সরকার ভিসা ফি ফেরত দেয়ার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি এয়ারলাইনসগুলোও টিকিটের অর্থ ফেরত দেয়ার ঘোষণা দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন