লি কুন-হি ছিলেন স্যামসাংয়ের ‘নিভৃতচারী রাজা’

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্যামস্যাং ইলেকট্রনিকসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে পরিণত করার নায়ক ছিলেন লি কুন-হি। কিন্তু জীবনযাপনে বেশ নিভৃতচারী ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ধনী ক্ষমতাবান শিল্পপতি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ঘোষণার জন্য সামনে এলেও বেশির ভাগ সময়ই অন্তরালে থাকতে ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু ৭৮ বছর বয়সে তার প্রয়াণের খবর পুরো দক্ষিণ কোরিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে।

স্যামসাং একটি সময় ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ এক যন্ত্রপাতি তৈরির কোম্পানি, যারা অন্যদের ডিজাইন নকলও করত। সেই সাদামাটা কোম্পানিটিকে আজকের বিশ্বখ্যাত স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে রূপান্তরের নায়ক লি। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৮৭ সালে যখন স্যামসাংয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন মাছ ফল রফতানিকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় কনগ্লোমারেট ছিল কোম্পানিটি। কিন্তু স্যামসাংকে বৈশ্বিক কোম্পানি হিসেবে দাঁড় করানোর একক কৃতিত্ব লির। তার মৃত্যুতে কোম্পানিটির একটি স্বর্ণালি অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটল। 

গতকাল সকালে মৃত্যু হয় লির। মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। স্যামসাং এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। যদিও তারা জানায়নি, ঠিক কী কারণে লি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার শেষকৃত্যে শুধু পরিবারের সদস্য ঘনিষ্ঠজনরা অংশ নেবেন বলে জানানো হয়।

২০১৪ সালে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পর অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে লিকে। এছাড়া ১৯৯০-এর দশকে তার ফুসফুসে ক্যান্সার দানা বেঁধেছিল, যার চিকিৎসাও নিতে হয় দীর্ঘদিন। হার্ট অ্যাটাকের পর থেকে শীর্ষ কোম্পানির দেখাশোনা করে আসছিলেন তার একমাত্র পুত্র। 

জাপানভিত্তিক শীর্ষ ইলেকট্রনিকস কোম্পানি সনি করপোরেশনের সঙ্গে স্যামসাংয়ের ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাদের টেক্কা দিতেই নিজ কোম্পানির কর্মীদের লি নতুন নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতেন এই বলে, তোমরা শুধু স্ত্রী সন্তান ছাড়া সবকিছুই পাল্টে ফেলবে!

লি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার সূচক অনুসারে লির নেট সম্পদ হাজার ৭০ কোটি ডলার।

এক বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, চেয়ারম্যান লি ছিলেন একজন সত্যিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি স্যামসাংকে একটি স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় উদ্ভাবক শিল্পজগতের পরাশক্তি হিসেবে রূপান্তর করে দিয়েছেন। তার উত্তরাধিকার টিকে থাকবে চিরকাল।

লি কুন-হির গড়া ঈর্ষণীয় এই প্রযুক্তি সাম্রাজ্যের একমাত্র অধিপতি এখন তারই সন্তান জে ওয়াই লি, যিনি প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সাল থেকেই মসনদে বসেছেন বাবার অসুস্থতার কারণে। তার কাঁধেই এখন ৩০ হাজার কোটি ডলারের বিশাল কোম্পানি।

গ্যালাক্সি লাইনের স্মার্টফোন তৈরি করা ছাড়াও গুগলের ডাটা সেন্টার অ্যাপলের আইফোনের সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ করে থাকে স্যামসাং। 

মধ্য সিউলে অবস্থিত নিজস্ব কম্পাউন্ড থেকে কদাচিৎ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যেতেন লি। তিনি গণমাধ্যমে তেমন কথা বলতেন না আবার যখন নীরবতা ভেঙে কথা বলতেন তখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকতেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি কোম্পানির নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার কারণে নিভৃতচারী রাজা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কয়েক মাসের জন্য হাওয়াই জাপানে ছুটি কাটাতে চলে যেতেন লি।

অধীনস্থদের সঙ্গে বৈঠকে কিংবা গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি ব্যবসা খাতে মেধাবী মুখের গুরুত্বের কথা বলতেন। একবার তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের হাতে সেরা মেধাগুলো থাকবে ততদিন পর্যন্ত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অসীম প্রতিযোগিতার আজকের দুনিয়ায় জয় বা পরাজয় নির্ভর করছে ক্ষুদ্রসংখ্যক মেধাবীর ওপর। এক মেধাবী ব্যক্তি এক লাখ মানুষের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে পারেন।

ব্লুমবার্গ এএফপি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন