ভারতের ইস্পাত রফতানি

ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে শীর্ষ গন্তব্য এখন চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

এক বছর আগেও ভারতে উৎপাদিত ইস্পাতের শীর্ষ গন্তব্য দেশ ছিল ভিয়েতনাম। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় তৃতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ফিনিশড ইস্পাত আমদানি করেছে শীর্ষ উৎপাদক ভোক্তা দেশ চীন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জয়েন্ট প্লান্ট কমিটির প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস রয়টার্স

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় অর্থবছরের প্রথমার্ধে চীনে রেকর্ড পরিমাণ ফিনিশড ইস্পাত রফতানি হয়েছে। সময় দেশটির বাজারে ব্যবহারিক ধাতুটির রফতানি হয়েছে ১৯ লাখ টন। যেখানে গত বছরের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র আড়াই হাজার টন। অন্যদিকে সময়ে ভিয়েতনামের বাজারে রফতানির পরিমাণ পৌঁছেছে ১৬ লাখ ১০ হাজার টনে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে ১০ লাখ হাজার টন ইস্পাত আমদানি করে ভারতীয় পণ্যটির শীর্ষ গন্তব্যস্থল ছিল দেশটি।

এক বছর আগেও ভারত ইস্পাতের অন্যতম নিট আমদানিকারক দেশ ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছর থেকে দেশটির ইস্পাত খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যে কারণে অর্থবছরের প্রথমার্ধের রফতানির চিত্র আগের বছরের তুলনায় একেবারেই বিপরীত অবস্থানে চলে এসেছে।

প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভারত ইস্পাতের নিট রফতানিকারক দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। সময় দেশটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার টন ইস্পাত রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ দশমিক শতাংশ বেশি। অন্যদিকে সময়ে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটি ব্যবহারিক ধাতুটির আমদানি করেছে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৫০ দশমিক শতাংশ কম। অন্যদিকে হট-রোলড কয়েলের রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় শতভাগ। সময়ে ভারত থেকে জাতীয় ধাতুটির রফতানির পরিমাণ ৯৬ দশমিক শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টনে।

তবে ভারতের অটোমোবাইল খাতে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়ছে। যে কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মোকাবেলায় গত সেপ্টেম্বরে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাতের সরবরাহের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। মাসে দেশটি আগের মাসের অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় ১৬ দশমিক শতাংশ কমিয়ে এনেছে। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমিয়েছে ১৫ দশমিক শতাংশ। সব মিলিয়ে গত মাসে দেশটি থেকে ইস্পাতের রফতানির পরিমাণ নেমেছে লাখ ৬৪ হাজার টনে। 

অন্যদিকে লকডাউন থেকে বের হয়েই দেশটি আবার গাড়ি নির্মাণের ওপর জোর দিচ্ছে। যে কারণে খাতে ইস্পাতের চাহিদা বাড়ছে। সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্সের তথ্য বলছে, গত মাসে দেশটিতে ২৬ লাখ ২০টি গাড়ি তৈরি হয়েছে, যা তার আগের মাসের তুলনায় ২১ দশমিক শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।

এছাড়া চলতি আগামী মাসে ভারতের ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গাড়ি বিক্রির সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণে উৎসবকে সামনে রেখে দেশটিতে ইস্পাতের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারও রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

এদিকে চীন কেবল ইস্পাতের আমদানির পরিমাণই বৃদ্ধি করছে না। দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে। অটোমোবাইল অবকাঠামো খাতের দ্রুত উন্নয়নের কারণে বৈশ্বিক ইস্পাতের শীর্ষ উৎপাদক ভোক্তা দেশ চীন। বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত ইস্পাতের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করে দেশটি। গত বছর হিস্যা আরো বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১৮৬ কোটি ৯৯ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেশি। সময়ে উৎপাদিত ইস্পাতের ৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টন এককভাবে উৎপাদন করেছে চীন। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে দশমিক শতাংশ। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে গত বছর চীনের হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৫০ দশমিক শতাংশ।

ইস্পাতের উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে গত সেপ্টেম্বরেও। গত শুক্রবার প্রকাশিত ডব্লিউএসএর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বরে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে দশমিক শতাংশ। সময়ে সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি ৬৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে কেবল চীনেই উৎপাদন হয়েছে কোটি ২৬ লাখ টন। সব মিলিয়ে গত মাসে দেশটির উৎপাদন বেড়েছে ১০ দশমিক শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, চীন বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ ইস্পাত আমদানিকারক দেশ। গত বছর দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কোটি ৫৩ লাখ টন ইস্পাত আমদানি করে, যা তার আগের বছরের তুলনায় শতাংশ বেশি। মূলত অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ইস্পাত আমদানি করে দেশটি। এর মধ্যে জাপান, তাইওয়ান ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি ইস্পাত আমদানি করে তারা।

অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে চীনের ইস্পাত উৎপাদন খাত বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত শীত মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে চীন সরকার তুলনামূলক ছোট নিম্নমানের ইস্পাত কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে। দূষণের দায়ে অনেক কারখানার কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে দেশটিকে আমদানির ওপরও নির্ভর করতে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন