শিশুদেরও ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হতে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

একটি আদর্শ কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন মানুষকে কেবল অসুস্থ হওয়া থেকেই বাঁচাবে না, বরং এটা জনসংখ্যার মাঝে ভাইরাসের বিস্তৃতিও আটকে রাখতে পারবে। এটি করার সেরা উপায় হচ্ছে যত সম্ভব বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করা।

যদি সর্বোচ্চ উপলব্ধ ভ্যাকসিন মাঝারি মানের কার্যকরী হয়, উদাহরণস্বরূপ সেটি যদি কেবল ৫০ শতাংশ মানুষের জন্যও উপলব্ধ হয়, তবে বিস্তৃতি থামাতে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও ভ্যাকসিন দিতে হতে পারে। বিশেষত যখন কভিড-১৯-এর কোনো ভ্যাকসিন শুধু শিশুদের জন্য তৈরি হচ্ছে না। তাই যদি শিশুদের ভ্যাকসিন দিতে হয় তবে তাদের সম্ভবত বয়স্কদের ভ্যাকসিনই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য আলাদাভাবে ডোজিং শিডিউল তৈরি করতে হবে। কিন্তু সেটি কেমন হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট না।

তাহলে শিশুদের জন্য কভিড-১৯-এর নিরাপদ কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়টি কেমন? ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তাদের যুক্ত করার ব্যাপারে আমরা কোথায় আছি?

কেন শিশুরা?

শিশুরা কভিড-১৯-এর সুপার স্প্রেডার-এর ভূমিকা নেয় না, যদিও তারা সংক্রমিত হতে পারে। আর যদি তারা সংক্রমিত হয়েও যায় তবে মারাত্মক অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর দিক বিবেচনায় বয়স্কদের তুলনায় তাদের ঝুঁকি কম।

এর পরও কিছু শিশু মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার জন্য সব সময় উচ্চঝুঁকিতে থাকে। বিশেষত যাদের অন্য কোনো সমস্যা আছে। এরই মধ্যে আমরা কভিড-১৯ সংক্রমণের পর কিছু শিশুর মধ্যে দুর্লভ কিন্তু মারাত্মক প্রদাহজনিত অবস্থার কথা জানতে পারছি।

পাশাপাশি আরো সমস্যা রয়েছে। ভ্যাকসিনে শিশুদের প্রবেশে আমরা যদি দেরি করি, তবে কভিড-১৯ থেকে আমাদের উদ্ধার পেতেও দেরি হবে। যা কিনা শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মহামারীর একটি গুরুতর প্রভাব হয়ে থাকবে।

শিশুরা কি ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

রোগজীবাণু বা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে শিশুদের ইমিউন সিস্টেম বয়স্কদের চেয়ে ভিন্নভাবে কাজ করে। বয়স এখানে কত ডোজ প্রয়োজন হবে তার একটি নির্ধারক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ কম বয়সী শিশুদের কখনো কখনো অধিক বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক ডোজও প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিশু কিশোরদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মৃদু জ্বর একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে।

তাই ভ্যাকসিন আবিষ্কারকদের উচিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা, যার ফলে তারা নির্দিষ্ট বয়সের ইমিউন প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কেমন দেখাচ্ছে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে সম্পর্কে তথ্য পেতে পারবে।

কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন কি এরই মধ্যে শিশুদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে?

ভ্যাকসিন ট্রায়ালগুলো সাধারণত ধাপে ধাপে করা হয়। এগুলো সচরাচর শুরু হয় স্বাস্থ্যবান, তরুণ মধ্যবয়সী মানুষদের দিয়ে। প্রাথমিক ট্রায়ালে যখন একবার এবার ভ্যাকসিনের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়, তখন আবিষ্কারকরা ভ্যাকসিন অধিক বয়স্ক অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের ওপর ব্যবহার করে।

অনেক ভ্যাকসিন আবিষ্কারকের এরই মধ্যে পরিকল্পনা রয়েছে শিশুদেরও ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করার। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষকরা থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

ফাইজারও ১২ বছর এর বেশি বয়সী শিশুদের ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে। এছাড়া চীন ভারতের একাধিক আবিষ্কারকও কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ট্রায়ালে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করছেন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ ছয় বছর বয়সী শিশুদেরও ট্রায়ালে রাখার কথা বলেছে। এসব ট্রায়াল এখন চলমান আছে এবং এগুলোর ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি।

কীভাবে অনেক বেশি শিশুকে ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা যায়?

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অনেক শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘোষণা দিয়েছে শিশুদেরও ট্রায়ালে রাখার সেটআপ নিয়ে তারা ভ্যাকসিন আবিষ্কারকদের সঙ্গে কাজ করবে।

ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ নিরাপদে কিন্তু সময় উপযোগীভাবে বাচ্চাদের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করতে গবেষকদের জন্য প্রটোকল তৈরি করছে। একটি সাবর্জনীন প্রটোকল (সেটি কী আমরা কেউ এখনো তা জানি না) পারে শিশুদের ভবিষ্যৎ ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারটিকে সহজ করতে। পাশাপাশি বিভিন্ন ভ্যাকসিনের মধ্যে তুলনা করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

কোনো শিশুকে ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে পিতামাতা কিংবা অভিভাবকদের একটি তথ্যপত্র পড়তে দেয়া হবে, যেখানে ট্রায়ালে অংশ নেয়ার সুবিধা ঝুঁকিগুলো লিপিবদ্ধ থাকবে। প্রাথমিক ট্রায়ালে বয়স্কদের কাছ থেকে পাওয়া সুরক্ষা ডাটাও সেই পত্রে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাহলে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ট্রায়ালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সচেতন হয়েই সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পাবেন।

তবে এক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা রয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে সংক্রমণের হার বেশ নিম্ন ছিল। সেসব দেশের বাবা-মায়েরা হয়তো সন্তানদের পাঠানোর ব্যাপারে রাজি নাও হতে পারেন।

যাই হোক, ভ্যাকসিন কীভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে কাজ করে তা জানা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং ধরনের গবেষণায় অংশগ্রহণ করা আমাদের সাহায্য করবে মূল্যবান তথ্য জড়ো করার জন্য।

কীভাবে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা মূল্যায়ন করতে হবে?

ভ্যাকসিন ট্রায়াল স্বতন্ত্র ডাটা এবং সুরক্ষা নজরদারি বোর্ড দ্বারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যা কিনা কঠোর প্রটোকল অনুসরণ করে এবং নিরাপত্তার কারণে দরকার হলে সেটি থামিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া গবেষকরাও আরো সক্রিয়ভাবে জনসাধারণের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখার পর্যবেক্ষণ করার জন্য, যেমনটা হয় অসভ্যাকসসেফটি সিস্টেমে। সিস্টেমে কাউকে ভ্যাকসিন দেয়ার পর তার কাছে তিনদিন পর একটি টেক্সট ম্যাসেজ আসে, যেখানে তাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং ফোন বা কম্পিউটারে একটি জরিপ সম্পন্ন করতে হয়। এটি এর আগে ফ্লু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে এবং কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহূত হতে পারে।

সার সংক্ষেপ

যদিও কভিড-১৯-এর ভ্যাককিন আবিষ্কারের অবিশ্বাস্য গতি দেখা গেছে, তারপরও অল্প কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারক এখন পর্যন্ত শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটা বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে এবং একে আরো বিস্তৃত করতে হবে। তাই আমাদের এমন প্রটোকল প্রয়োজন যা কিনা গবেষকদের কাজকে সহজ করবে।

তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মার অনুমতি সাপেক্ষে শিশুদের ট্রায়ালে আনা গেলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এটা মহামারীর ইতি টানার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দ্য কনভারসেশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন