খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির এক দশকেও শুরু হয়নি নির্মাণ

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা

বাগেরহাটের রামপালে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। প্রাথমিকভাবে এটিকে ছোট বিমানবন্দর হিসেবে চালুর লক্ষ্য ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর প্রায় এক দশক পেরোলেও অর্থায়ন অনিশ্চয়তায় এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি মূল প্রকল্পের কাজ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বিমানবন্দরটির।

বেসামরিক বিমান চলাচল পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৯০ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার অর্থায়ন করছে সরকার। বাকি ৫৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্বাহ করা হবে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ফয়লায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য গৃহীত প্রকল্পটি ২০১৫ সালে অনুমোদন পেলেও এর তোড়জোড় চলছে অনেক দিন ধরেই। স্বাধীনতারও এক দশক আগে ১৯৬১ সালে খুলনার মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ফুলতলার মশিয়ালীতে প্রথম বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে খুলনা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতিতে স্থান নির্বাচন জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে তা বাতিল করে আশির দশকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালিতে বিমানবন্দর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে ৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বাগেরহাটের রামপালে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে এটিকে ছোট বিমানবন্দর হিসেবে চালুর লক্ষ্য ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর ২০১৫ সালে নিয়ে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। নতুন করে অধিগ্রহণ করা হয় আরো ৫৩৬ একর জমি। প্রাথমিকভাবে পিপিপির আওতায় ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। মেয়াদ পেরিয়ে আরো তিন মাস পার হয়ে গেলেও সীমানা নির্ধারক কাঁটাতারের বেড়া আর একটি সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো উন্নতি দৃশ্যমান হয়নি এখনো।

বিমানবন্দর নির্মাণের শম্বুকগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন। তিনি বলেন, খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত বিমানবন্দরের কাজ শুরু শেষ করা প্রয়োজন। মোংলা বন্দরকে গতিশীল করতেও বিমানবন্দরটি জরুরি।

বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের একটা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সেখানে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এয়ারপোর্ট করার জন্য নতুন করে প্রকল্প নিতে হবে। বিমানবন্দরটি পিপিপির আওতায় নির্মাণের জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরটি নির্মাণে অর্থ জোগান কীভাবে হবে সেটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে সময় ব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে দ্রুত যোগাযোগের জন্য বিমানবন্দরের প্রয়োজন হলেও পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথে রাজধানীর সঙ্গে খুলনা অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সময় অনেক কমে আসবে। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দর চালুর পর ফ্লাইট চালু হলেও যাত্রী সংকটে ভুগবে এয়ারলাইনসগুলো। ফ্লাইট না চললে বিমানবন্দরের আয়ও হবে না। কারণেই পিপিপিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বেসরকারি খাত।

অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, পিপিপির পরিবর্তে রাজস্ব খাতের অধীনে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হলে বিমানবন্দরটির কাজ অনেক গতিশীল হতো। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং রামপাল-মোংলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, পিপিপিতে নির্মাণের জন্য বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসায় দীর্ঘদিনেও খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজে কোনো অগ্রগতি নেই। রাজস্ব খাতে নিলে বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

তবে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পিপিপিতেই থাকছে বলে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নিয়ে গত কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা . মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। সে সভায় বিমানবন্দর প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য পিপিপির মাধ্যমেই এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরাও সেভাবেই এগোচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা ছাড়া দেশের আর কোথাও বিমানবন্দর লাভজনক নয়। সেজন্য প্রকল্পে পিপিপির মাধ্যমে বিনিয়োগকারী পাওয়া বেশ কঠিন। এখানে বেশ বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যৎ লাভের বিচার-বিশ্লেষণ করেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে থাকেন। সেজন্য বিনিয়োগকারী আকর্ষণে আমরা নতুন করে প্রস্তাবনা তৈরি করে শিগগিরই কাজ শুরু করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন