নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার নিয়ে ভীত অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ঝুঁকি নিয়ে অফিস খুলতে চাইছে না। এতে করে যদিও এরই মধ্যে বেশ মূল্য দিতে হয়েছে সেসব অফিসের কর্মীদের। অনেকের চাকরি চলে গেছে। অনেকের বেতন কমানো হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান হতে পারে ইসরায়েলের তৈরি একটি ডিভাইস। অফিসের সিলিংয়ে বসানো একটি স্মার্ট সেন্সরই নিশ্চিত করবে ঠিকঠাক সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা।
পয়েন্ট গ্র্যাব নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ ডিভাইসটি বানিয়েছে। তবে এ প্রযুক্তিটি তারা উদ্ভাবন করেছে মহামারী শুরুর বেশ আগেই। মূলত কর্মীরা অফিস স্পেস কীভাবে কতটা ব্যবহার করছেন সেটি যাচাই করে দেখতেই এটি তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ ইন্টেরিয়র ডিজাইনের একটি সহায়ক যন্ত্র এটি।
স্মোক অ্যালার্মের মতো ছোট্ট ডিভাইসটিতে রয়েছে অত্যন্ত সংবেদনশীল চিপ যা কোনো ভবন, অফিস, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ভেতরের প্রত্যেকটি মানুষের সংখ্যা, অবস্থান, নড়াচড়া ইত্যাদি রেকর্ড করতে পারে।
এ কোম্পানির প্রথম বড় ক্লায়েন্ট ছিল বহুজাতিক সেবা প্রতিষ্ঠান ডেলোইট। গত বছর তারা তাদের লন্ডন অফিসে ডিভাইসটি বসিয়েছিল। পয়েন্ট গ্র্যাবের সেন্সরগুলো একটি কেন্দ্রীয় স্ক্রিনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। স্ক্রিনে দেখা যায় কখন কোথায় কোন ডেস্ক ফাঁকা আছে, কোন স্থানটি একাধিক কর্মী ব্যবহার করছে ইত্যাদি। এ তথ্য পাওয়া যায় রিয়েলটাইমে। ডেলোইট জানিয়েছে, এ ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে তারা ৩ শতাংশ কম জায়গায় ৩০ শতাংশ বেশি কর্মীর জায়গা দিতে পেরেছে।
ভবনের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার প্রযুক্তিটি মূলত পয়েন্ট গ্র্যাবের আগের ধারণাটিরই উন্নয়ন। তাদের উদ্ভাবিত সেন্সর রিয়েলটাইমে বলে দিতে পারে, অফিসের ভেতরে যথার্থভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কিনা। এমনকি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিদ্যমান ইন্টেরিয়র ডিজাইন পরিবর্তন করতে হবে কিনা সে ব্যাপারেও ধারণা দেবে এটি।
অফিসের ওয়ার্কস্পেস ম্যানেজার চাইলে অ্যালার্ট সেট করে দিতে পারেন। দুজন কর্মী যদি দুই মিটারের চেয়ে বেশি কাছাকাছি ৩০ সেকেন্ডের বেশি অবস্থান করেন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দেবে।
পয়েন্ট গ্র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেন্সর নির্দেশনা অনুযায়ী সতর্কবার্তা দেবে। এখন একটি প্রতিষ্ঠান এ সতর্কবার্তা পাওয়ার পর কী করতে চায়, সে বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। চাইলে জোরে অ্যালার্ম বাজানোও যাবে। যদিও কোনো অফিস এমন ব্যবস্থা না করার সম্ভাবনাই বেশি!
রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কুশমান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের উদ্ভাবিত ‘সিক্স ফিট অফিস’ ধারণাও এ প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করেছে পয়েন্ট গ্র্যাব। মূলত কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উৎসাহিত করতেই এ ধারণার অবতারণা। নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেলজিয়ামের একটি ইনোভেশন হাবে ধারণাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
অবশ্য অফিসের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছে। যেমন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্যামিও ব্যবহার করছে ছবি শনাক্তকরণ সফটওয়্যার। এটি মূলত নজরদারিতে ব্যবহূত ক্যামেরার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করা যায়। সিএনএন