করোনাভাইরাস যেভাবে স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে

স্টিফানি সুদারল্যান্ড

কভিড-১৯ সংক্রমিত অনেকের লক্ষণগুলো স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। রোগীরা মাথাব্যথা, পেশি জয়েন্টে ব্যথা, অবসাদ, ব্রেইন ফগ বা স্বাদ ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণের অভিযোগ করেন। লক্ষণের সবগুলোই সংক্রমণের পর কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এছাড়া গুরুতর ক্ষেত্রে কভিড-১৯ মস্তিষ্কের প্রদাহ বা স্ট্রোক সৃষ্টি করতে পারে।

এটা এখন প্রমাণিত যে ভাইরাসটির অনস্বীকার্য স্নায়বিক প্রভাব রয়েছে। তবে এটা যেভাবে স্নায়ুকোষগুলোকে প্রভাবিত করে তা এখনো কিছুটা রহস্যে ঢাকা। প্রতিরোধক্ষমতায় অতিরিক্ত কার্যকারিতা কি এমন লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে? কিংবা করোনাভাইরাস কি সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে?

ইঁদুর মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যু পরীক্ষা করা সাম্প্রতিক প্রিপ্রিন্ট অধ্যয়নসহ কিছু গবেষণা প্রমাণ দিয়েছে, সার্স-কোভ- স্নায়ুকোষ মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। নিয়মিত বা কেবল গুরুতর ক্ষেত্রে সেটা করে কিনা এখনো অস্পষ্ট। প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক সময় অতিরিক্ত কার্যকারিতা দেখায় এবং তখন এটার প্রভাবগুলো সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এমনকি এটা মস্তিষ্কে আক্রমণের জন্য প্রতিরোধ কোষকে নেতৃত্ব দেয় এবং সেখানে এটা ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।

কিছু স্নায়বিক লক্ষণ কম মারাত্মক বলে মনে হয়, আবার কিছু খুব বিভ্রান্তিকর হয়ে থাকে। একটি লক্ষণ বা লক্ষণের গুচ্ছ মস্তিষ্কে ধাঁধার সৃষ্টি করে। এটাকে ব্রেইন ফগ বলা হয়। এমনকি মূল লক্ষণগুলো হ্রাস পাওয়ার পরে সংক্রমিত রোগীদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বিভ্রান্তি অন্যান্য মানসিক অস্বস্তি বোধ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই লক্ষণগুলোর পেছনের কারণগুলো এখনো অস্পষ্ট। কভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকেরই অবসাদ ব্রেইন ফগ সৃষ্টি হয় এবং এটা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটার কারণে ঘ্রাণশক্তি হ্রাসের মতো বিস্তৃত লক্ষণও তৈরি হতে পারে। গবেষকরা এখনো তদন্ত করছেন, ভাইরাস ঘ্রাণসংক্রান্ত অন্যান্য নিউরন কিংবা নাকের -স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ফলে কীভাবে ঘ্রাণশক্তির ক্ষতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি নিউরনকে সরাসরি সংক্রমিত না করেও স্নায়ুসম্পর্কিত রহস্যজনক লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। সংবেদনশীল নিউরনের ওপর আক্রমণ থেকে অনেক ব্যথাসম্পর্কিত প্রভাব দেখা দিতে পারে। গবেষকরা এখন বুঝতে পারেন যে কীভাবে সার্স-কোভ- ব্যথা সংবেদনশীল নিউরনকে হাইজ্যাক করতে পারে। আর এটাই কভিড-১৯-এর কয়েকটি লক্ষণ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যথা নিয়ে অধ্যয়নরত নিউরোসায়েন্টিস্ট থিওডোর প্রাইস কভিড-১৯-এর লক্ষণগুলোর নোট করেছিলেন। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীরজুড়ে পেশি ব্যথা তীব্র কাশি। ফসফুসের সংবেদনশীল স্নায়ুকোষগুলো সাধারণত কাশির জন্য দায়ী। এছাড়া কিছু রোগী কেমোথেসিস নামে একটি বিশেষ সংবেদন হ্রাসের কথা বলেন। এটা তাদের ঝালমরিচ ঝালহীন মরিচগুলো শনাক্ত করতে অক্ষম করে তোলে।

যদিও বেশির ভাগ প্রভাব ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হতে থাকে। তবে ব্যথার সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো ধারণা দেয় সংবেদনশীল নিউরনগুলো সংক্রমণের স্বাভাবিক প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার বাইরেও প্রভাবিত হতে পারে। তার মানে প্রভাবগুলো সরাসরি ভাইরাসটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। থিওডোর প্রাইস বলেন, স্নায়ুতে কভিড সংক্রমণ তীব্র লং কভিডের সৃষ্টি করতে পারে। আমরা জানি যে সংবেদনশীল নিউরনগুলো যদি কোনো ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তবে সেটার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হতে পারে; এমনকি ভাইরাস কোষগুলোতে না থাকলেও।

তিনি বলেন, আবার নিউরনগুলো সংক্রমিত না হলেও এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় কভিড সংক্রমিত রোগীদের ফুসফুসের কোষ থেকে প্রাপ্ত জেনেটিক সিকোয়েন্সিং ডাটা স্বাস্থ্যকর মানুষের ডাটার তুলনা করে দেখা গেছে, সংক্রমিত রোগীদের কাছে থেকে সাইটোকাইন নামক প্রচুর প্রতিরোধ ব্যবস্থা-সিগন্যালিং অণু পাওয়া গেছে, যা নিউরন রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায়, সরাসরি ভাইরাসে সংক্রমিত না হয়েও স্নায়ুগুলো প্রতিরোধ ব্যবস্থার অণু দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন