শীতে ইউরোপে সংক্রমণের গতি হবে বসন্তের চেয়ে বেশি

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম ঝড় সামলে উঠে দ্বিতীয় ঝড়ের মুখে পড়েছে ইউরোপ। এরই মধ্যে ইউরোপের অনেক দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ বিস্তার তীব্র আকার ধারণ করেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশগুলোতে বিধিনিষেধেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশ আবারো লকডাউনে অচল হওয়ার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ঝড়ের চূড়ার তুলনায় বর্তমানে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। খবর রয়টার্স।

গতকাল ফরাসি এপিডেমিওলজিস্ট আরন্যু ফন্তেনে সতর্ক করে বলেছেন, বসন্তে প্রথম ঝড়ের ফ্রান্স যখন সংক্রমণের চূড়ায়, বর্তমানে তার চেয়েও দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

কভিড-১৯ মহামারীর বিষয়ে ফরাসি সরকারের উপদেষ্টার মুখে এমন সময়ে সতর্কবার্তা শোনা গেল যখন দেশটির অর্থমন্ত্রী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ অন্যান্য বিধিনিষেধের ফলে চতুর্থ প্রান্তিকে অর্থনীতি পুনরায় সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার প্রায় ৪১ হাজার নতুন আক্রান্ত শনাক্ত রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় যা প্রায় ১৫ হাজার বেশি। সব মিলিয়ে দেশটির প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে। এজন্য নতুন করে কারফিউর আওতা বাড়ানো হয়েছে।

ফ্রান্স সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা ফন্তেনে গতকাল একটি টিভিতে দেয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, তিন মাসব্যাপী কঠোর লকডাউন ফ্রান্সে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। এতে গরমকালে সংক্রমণ হ্রাস বা সুরক্ষিত থাকার একটা মিথ্যা ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ের শেষ দিকে সংক্রমণ আবারো বাড়তে থাকে। সে সময় স্বল্পকালীন একটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া রোগটির গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

সেপ্টেম্বরে একটি হিম সপ্তাহ গেছে, তখন ইউরোপজুড়ে সব সূচক আবার উল্টোপথে চলে যায়। ভাইরাস শীতকালে আরো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ সময় মানুষ অনেক বেশি বদ্ধ পরিবেশে থাকে। এরই মধ্যে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ফের চাপের মুখে পড়েছে। যদিও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বসন্তে যখন সংক্রমণের চূড়ায় ফ্রান্স সে সময়ের চেয়ে বর্তমানে তারা আরো ভালোভাবে রোগটিকে মোকাবেলা করতে শিখেছে। আর এজন্য কভিড-১৯ রোগীদের আইসিইউতে থাকার কাল কমে এসেছে।

রাজধানী প্যারিসের সরকারি হাসপাতালের প্রধান মাতি ইর্শ সতর্ক করে বলেন, প্রথম ঝড়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঝড় সম্ভবত গুরুতর হতে পারে। আর সংক্রমণের শিখর কখন আসবে, তা কেউ বলতে পারে না।

ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স। অর্থনীতির সংকোচনের ঝুঁকির বিষয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মেয়ার চতুর্থ প্রান্তিকে মন্দা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। লন্ডনভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের ডাটা বলছে, ফরাসি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চলতি মাসে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। সংস্থাটির অর্থনীতিবিদ এলিয়ট কের বলেন, ইউরোপে শীত দ্রুত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়া অর্থনীতি পুরোপুরি খোলার বিষয়টি অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

গতকাল মধ্যরাত থেকে ফ্রান্স আরো ৩৮টি প্রশাসনিক বিভাগে কারফিউ সম্প্রসারিত করেছে। সব মিলিয়ে দেশটির কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে প্রতি রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরে বন্দি থাকতে হবে। কারফিউ ডিসেম্বরের শুরুর দিক পর্যন্ত চলবে বলেও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

তবে কারফিউর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাগুলোকে ২০০ কোটি ইউরো আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী। ধরনের কারফিউ রেস্তোরাঁ বারের মতো অতিথি সেবা খাতকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেক ব্যবসায়ী ভাইরাসের প্রথম ঝড়ের পর সীমিত পরিষেবা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই মুহূর্তে তাদের ফের দরজা বন্ধ করতে হচ্ছে।

এদিকে জার্মানিতেও প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ১১ হাজারেও বেশি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড হয়েছে। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। ইতালির রোম, নেপলস মিলান শহরেও রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। গ্রিসের রাজধানী এথেন্স আরো কিছু শহরে রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ চলছে। এছাড়া পর্তুগাল, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, স্পেন ইত্যাদি দেশেও নানা পর্যায়ে কড়াকড়ি চালু আছে এবং প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন