ট্রাম্প-বাইডেন চূড়ান্ত বিতর্ক

শান্ত মেজাজে তীব্র ব্যক্তিগত আক্রমণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন। তবে এর আগেই তুমুল এক লড়াই হয়ে গেল বৃহস্পতিবারকথার লড়াই। নির্বাচনের আগে শেষবারের মতো সম্মুখ বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। প্রথম দফার বিতর্কের মতো এবার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ঠিকই। কিন্তু পারস্পরিক ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনো কমতি ছিল না। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা, বর্ণবাদ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একে অন্যকে ঘায়েল করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প বাইডেন। খবর বিবিসি রয়টার্স।

বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই প্রার্থীই নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনেন। বাইডেন বলেছেন, নির্বাচিত হলে আসন্ন দিনগুলোয় প্রয়োজন হলে আবার লকডাউন দেয়ার পক্ষপাতী তিনি। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাইডেন লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অন্যদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো ট্রাম্পের কর রিটার্ন-সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গ সামনে আনেন।

জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোয় বাইডেনকে ট্রাম্পের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তবে সুইং স্টেটগুলোয় দুজনের মধ্যে ব্যবধান সামান্যই। শেষ পর্যন্ত এসব রাজ্যের ফলাফল কার অনুকূলে যাবে, তার ওপরই নির্ভর করবে আগামী চার বছর কে হোয়াইট হাউজের দখল পাচ্ছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার রেকর্ড আগাম ভোট পড়েছে। ডাকযোগে সশরীরে কেন্দ্রে গিয়ে এরই মধ্যে কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ককে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রথম বিতর্কের তুলনায় বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। সেদিন দুজনই একে অন্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ অপমান করেছিলেন। ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থী যে একে অন্যকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের বিতর্কেও তা ফুটে উঠেছে।

বাইডেন তার বক্তব্যে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য যিনি দায়ী, তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয়।

বাইডেন তার বক্তব্যে ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট আখ্যা দেন। তিনি বলেন, উনি প্রতিটি বর্ণবাদী আগুনেই উসকানি দেন। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, এখানে যারা মুহূর্তে উপস্থিত রয়েছেন, আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী। সময় তিনি ১৯৯৪ সালের অপরাধ বিলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন, যার খসড়ায় বাইডেন সহায়তা করেছিলেন। ওই আইনের কারণে বিপুলসংখ্যক আফ্রো-আমেরিকানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে আসছেন।

মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বৈধ কাগজহীন অভিবাসীদের তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করার নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প উল্টো ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ওবামা প্রশাসনের আমলেও তো অভিবাসী শিশুদের আটক করা হয়েছিল।

২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে চমকে দেয়া ট্রাম্প তার বক্তব্যে বাইডেনের ছেলে হান্টারের ফাঁস হওয়া -মেইলের প্রসঙ্গ তুলে চীনের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বিষয়ে বাইডেনের কাছ থেকে ব্যাখ্যাও জানতে চান। জবাবে বাইডেন বলেন, আমি কোনো দেশের কাছ থেকে কখনো একটি পয়সাও নিইনি।

চীনা ব্যাংকে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট রয়েছেনিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে চীনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেয়া করের তুলনা করেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, চীনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার কর দেয়া হয়েছিল। এদিকে ট্রাম্প ২০১৬-১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসেরই আগের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।

প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমার অনেকগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। সারা বিশ্বেই আছে। সেগুলো সবই তালিকাভুক্ত। কারণ আমি একজন ব্যবসায়ী।

জ্বালানি নীতি নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে তেল শিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চান। জবাবে বাইডেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প টেক্সাস, পেনসিলভানিয়া, ওকলাহোমা, ওহাইওর ভোটারদের উদ্দেশ করে বলেন, সত্যিকার অর্থে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন, তা হলো তিনি তেল শিল্পকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। আপনাদের কি এটা মনে থাকবে?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন