রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়ক

এক বছর ধরে বন্ধ তিন ব্রিজের নির্মাণকাজ

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী

রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি সড়কে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্যাকেজের আওতায় হড়াই নদ গাইজারগাড়া বিলের পর তিনটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক জনপথ বিভাগ। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের এপ্রিল ব্রিজ তিনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ জুন শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে নির্ধারিত মেয়াদের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে তিনটি ব্রিজের পিলারের ঢালাইয়ের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রয়েছে তিনটি ব্রিজের নির্মাণকাজ। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সওজের নজরদারির অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারিতা করছে। প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ সওজ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্রিজ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে যতটুকু কাজ হয়েছে তা মানসম্মতই। বাকি কাজ সম্পন্নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে আবেদন করেছে।

রাজবাড়ী সড়ক জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির বানিবহ বাজার থেকে বহরপুর বাজার পর্যন্ত এলাকায় হড়াই নদীর ওপর দুটি গাইজারগাড়া বিলের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করে সওজ। সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমতি পায় মো. মইনউদ্দিনবাসী নামে ঢাকার ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে ২০১৯ সালের এপ্রিল নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২০ সালের ২৮ জুন শেষ করার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সময়ের মধ্যে অর্ধেক কাজও শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে রাজবাড়ীর সড়ক জনপথ বিভাগের দাবি, এরই মধ্যে ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গাইজারগাড়া বিলের ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজটিতে মাত্র দুজন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে হড়াই নদীর ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজ দুটিতে কোনো শ্রমিক বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক দেখা যায়নি।

সময় রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দিগামী অটোরিকশার যাত্রী আছাদুজ্জামান বলেন, ব্রিজ তিনটির কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। ব্যাপারে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি নিয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এমনকি সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। তাছাড়া রোগী পরিবহনেও বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই ভোগান্তি।

রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দিগামী মাহেন্দ্রচালক বিপ্লব বলেন, ব্রিজের পাশ দিয়ে তৈরি করা সড়কটির অবস্থাও বেহাল। তাছাড়া ডাইভারসন সড়কে উঠতে গিয়ে বিকল হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সড়ক জনপথ বিভাগ রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাসার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে নির্দিষ্ট সময়ে তারা ৬৫ ভাগ কাজ করেছে। যতটুকু কাজ করেছে কাজের মান যাতে ভালো হয়, সেজন্য আমরা নজরদারি করছি। তিন ব্রিজের নির্মাণ একটি প্যাকেজে হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধক্রমে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর পর নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার আশ্বাস দেন তিনি।

এসব বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি প্রকৌশলী গোলাম রসুল বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রথমে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরে বন্যার কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। নতুন মেয়াদের মধ্যেই তিনটি ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন