অস্তিত্ব সংকটে নগর অর্থনীতি প্রতিষেধক নতুন শিল্পোদ্যোগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী দেশে দেশে শহরগুলোর জীবনযাত্রাকে অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শহুরে অর্থনীতিও। অবস্থায় নগর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, পুনরুজ্জীবিত করতে হবে সেগুলোকেও। খবর ব্লুমবার্গ।

অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিত্তি বেশ মজবুত। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর আঘাত থেকে বাঁচতে পারেনি সেটিও। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারকারী শহুরে ব্যবসা-বাণিজ্য। ইয়েল্পের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মহামারীর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোয় প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এই শূন্যতা পূরণ করা না গেলে মার্কিন শহরগুলোকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা মুশকিল। মোটকথা, এখন মার্কিন শহুরে অর্থনীতিকে মহামারীর কবল থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন প্রধান ভ্যাকসিন হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে উদ্যোক্তা ঘাটতি মহামারীর আগে থেকেই রয়েছে। দেশটিতে স্টার্টআপ স্থাপনের লেখচিত্র পতনমুখী। সেখানে নতুন ব্যবসা স্থাপন গত চার দশকের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। অবস্থায় করোনা মহামারীর আঘাত এল এবং অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল। ফেব্রুয়ারি থেকে জুনকেবল এই চার মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২ লাখ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। এর ১৯ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ১০ শতাংশ লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত।

এখানে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দেয়ার কারণ হলো, দেশটির অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তিও ব্যবসা-বাণিজ্যের পতন ঠেকাতে পারেনি। তাহলে উদীয়মান কিংবা মাঝারি আয়ের দেশগুলোর কী অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। আসলে করোনার কারণে কেবল একটি-দুটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। উৎপাদন থেকে সেবামুখী সব খাতই সংকোচনের কবলে পড়েছে। অবস্থায় খাদের কিনারে থাকা ব্যবসা খাতকে টেনে তুলতে না পারলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

বিশ্বের সিংহভাগ দেশেই গ্রামীণ শহুরে অর্থনীতির ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত গ্রামীণ অর্থনীতি হয় কৃষিপণ্য উৎপাদন বিপণনকেন্দ্রিক। আর শহুরে অর্থনীতির খাতগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ। শিল্পোৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য, আর্থিক সেবা, আতিথেয়তা সেবা, অবকাঠামো নির্মাণের মতো খাতগুলোই শহুরে অর্থনীতির মূল প্রাণশক্তি। আর করোনার কারণে এসব খাতের সবগুলোই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবস্থায় তাহলে কী করণীয়? আসলে নগর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে যেমন বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় সচল করতে হবে, তেমনি নতুন নতুন ব্যবসা চালুর সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হবে, নাগরিকদের জন্য তত বেশি আয়ের সংস্থান তৈরি হবে এবং আয়বৈষম্যও দূর হবে।

মহামারী প্রতিরোধে সরকারগুলোর বড় অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো জরুরি মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার অবস্থা তাদের। অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যকে টেনে তোলা সরকারগুলোর জন্য বাড়তি চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেবল রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে তো আর দীর্ঘমেয়াদি উত্তরণ সম্ভব নয়। কারণে কর্তৃপক্ষগুলোকে পরিকল্পনা সাজাতে হবেকীভাবে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের তালিকা তৈরি করে সবাইকে কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। একজন উদ্যোক্তা যেন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে নগর অর্থনীতিতে উন্নয়ন আনা সম্ভব নয়। করোনা মহামারীর এই ক্রান্তিকলে এটি আবারো প্রমাণ হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তা তৈরি তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থার মাধ্যমে শহুরে অর্থনীতির উত্তরণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন