অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া কমছে বিশ্বের ধনী শহরগুলোয়

বণিক বার্তা ডেস্ক

নিউইয়র্ক, লন্ডন, টরন্টো সিডনির মতো বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্র ধনী  শহরগুলোয় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়িয়ে থাকেন মূলত বিদেশী শিক্ষার্থীরা, যারা করোনা মহামারীর কারণে নিজ দেশে আটকা পড়ে আছেন। এছাড়া রিয়েল এস্টেটের সবচেয়ে ভ্রাম্যমাণ দল হলো তরুণ ভাড়াটিয়া। তারা এখন আর আগের মতো ভাড়া দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে থাকার মতো অবস্থায় নেই।

অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়াটিয়ার ক্ষমতায় ভারসাম্য এসেছে। প্রপার্টি খাতের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোরলজিক ইনকরপোরেশন-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান টিম ললেস বলেন, মুহূর্তে যদি কম দামের ব্যাপারে দরকষাকষি করতে না পারেন, তবে আপনি বোকা। এখন সরবরাহ অনেক বেশি, কিন্তু ভাড়াটিয়ার সংখ্যায় অনেক পতন হয়েছে।

২৬ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা চুং সুযোগটাই নিয়েছেন। সিডনি সিটি সেন্টার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরবর্তী অভিজাত এনমোর এলাকায় অন্য তিনজনের সঙ্গে একটি বাসা ভাগাভাগি করেন তিনি। কিন্তু দরকষাকষি করে ভাড়া আগের চেয়ে শতাংশ কমাতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। সপ্তাহে ৮৯৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের জায়গায় এখন তাকে দিতে হয় ৮১০ ডলার। ভাড়া কমানো নিয়ে চুং বলেন, চলতি ইজারা শেষে আমি আরেকবার ভাড়া কমানোর জন্য চাপ দেব। কারণ বাজার তো বদলে গেছে।

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে সস্তা। খালি অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাও এক বছর আগের তুলনায় তিন গুণ এবং গড়ে ভাড়া কমেছে ১১ শতাংশ। অফিসগুলো কদাচিৎ কর্মীতে ভরা, বিনোদন জগৎও সীমিত আকারে চলছেবড় ধরনের ভেনুগুলো অন্তত মে মাস পর্যন্ত বন্ধই থাকছে। শহরের ব্যয়বহুল এলাকাগুলো তার জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির নগরায়ণের অধ্যাপক বাড়ির মালিক এম ক্রিস্টিনা বয়ার বলেছেন, তিনি পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষ করেছেন। তার কথায়, ভাড়ার এই পতন গৃহায়নে আরো বেশি ন্যায়সংগত বণ্টন নিয়ে আসবে।

সানফ্রান্সিসকো: উচ্চাভিলাষী তরুণদের স্বপ্নের ঠিকানা সানফ্রান্সিকোর বে অ্যারেনা। এখানে অ্যাপার্টমেন্টের উচ্চ ভাড়ার কথা সর্বজনবিদিত। বহু মিলিয়নেয়ারের জন্ম দেয়া সানফ্রান্সিসকোয় আবাসন সংকট তীব্র থাকে। তাই তো সিলিকন ভ্যালির বহু কর্মীকে রাস্তায় পার্ক করে রাখা আরভি গাড়িতে রাত্রিযাপন করতে হয়। এখন সময় ভিন্ন। এখন প্রযুক্তি খাতের ফার্মগুলো স্টাফদের বলে দিচ্ছে, আগামী বছর তাদের অফিসে না এসে দূরে থেকে কাজ করতে হবে, সম্ভবত এটি স্থায়ীভাবেও হতে পারে। কারণে বাসাভাড়াও দ্রুত কমতে শুরু করেছে।

রিয়ালটর ডটকমের তথ্যমতে, সানফ্রান্সিসকোয় একটি স্টুডিওর গড় মাসিক ভাড়া সেপ্টেম্বরে এক বছর আগের চেয়ে ৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে হাজার ২৮৫ ডলারে; জাতীয়ভাবে যা কমেছে শূন্য দশমিক শতাংশ।

টরন্টো: নিউইয়র্কের পর উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্র টরন্টোয় বহু অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে, সংগত কারণে ভাড়াও কমছে। রিসার্চ ফার্ম আরবানেশন ইনকরপোরেশনের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় বছর তৃতীয় প্রান্তিকে ভাড়া কমেছে ১৪ দশমিক শতাংশ।

মহামারীর কারণে অভিবাসীদের ঢল থেমেছে, অন্যদিকে নগরবাসী চাইছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একটু বেশি জায়গা নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে, তাই মূল শহর ছেড়ে শহরতলি কিংবা গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে। কারণে টরন্টোয় অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদায় এমন পতন।

লন্ডন:


আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কারণে বিদেশী উচ্চ বেতনের নির্বাহীরা শহরে অস্থায়ী বাসার খোঁজ করছেন। কারণে লন্ডনে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া কমে যাচ্ছে। ব্রোকার নাইট ফ্রাংকের তথ্যমতে, লন্ডনে বিত্তশালীদের এলাকায় সেপ্টেম্বরে ভাড়া কমেছে দশমিক শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন।

সিঙ্গাপুর:


মাত্র ৫০ কিলোমিটার প্রস্থ আর আয়তনে নিউইয়র্ক শহরের চেয়েও ছোট নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত বিদেশী শ্রমিকনির্ভর। সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, যদিও ব্যক্তিমালিকানার অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া এক বছর আগের তুলনায় শতাংশ কমেছে বলে জানায় রিয়েল এস্টেট পোর্টাল এসআরএক্স প্রপার্টি। এমনকি ২০১৩ সালের রেকর্ড ভাড়ার চেয়েও এখন ১৭ শতাংশ কম। এছাড়া বাড়ি বিক্রির হারও দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সিডনি:


অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানীতে ভাইরাস সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমছে, গ্রীষ্ম ঘনিয়ে আসায় সমুদ্রসৈকতও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু শহরে এত দ্রুতই তার প্রভাব পড়ছে না। সবকিছু বদলে গেছে। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া কমছে, আর শহরতলিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। শহরে মে মাসে অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে ছিল ১৬ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ১৩ শতাংশ। অথচ কভিড-১৯ পূর্ব সময়ে হার ছিল মাত্র শতাংশ। সীমান্ত বন্ধ থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা না আসায় এই প্রভাব।

 

ব্লুমবার্গ দ্য এজ মার্কেটস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন