ভ্যাকসিন নিয়ে আশাবাদের বাস্তবতা

ডেভিড সালিসবুরি

ভ্যাকসিন এলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে, কথা অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা আসলেই সঠিক নয়। ভ্যাকসিন কী করতে পারে এবং কী করতে পারে না, সে সম্পর্কে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।

ভ্যাকসিন একজন ব্যক্তিকে রোগ থেকে সুরক্ষিত করতে পারে এবং আশা করা যায় সংক্রমণ থেকেও করবে। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনই শতভাগ কার্যকর নয়। ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের পর জনগণের কত অনুপাত ইমিউন থাকবে, সেটি জানতে পারা মূলত একটি সংখ্যার খেলা।

যুক্তরাজ্যে বর্তমানে বিশ্বের ফ্লু ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার রয়েছে। প্রতি বছর ৬৫ বা তার বেশি বয়সী লোকদের প্রায় ৭৫ শতাংশকে ফ্লু ভ্যাকসিন দেয়া হয়। বয়স্কদের জন্য বেশির ভাগ দেশের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম বেশ খারাপ কিংবা একেবারেই নেই। এটা আশা করা যৌক্তিক যে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও বয়স্কদের স্তরের ভ্যাকসিন উপলব্ধ হবে। 

ফলে যদি কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ৭৫ শতাংশ কার্যকর হয়, তার অর্থ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের ৭৫ শতাংশ ইমিউন হবে। তাহলে জনসংখ্যার কেবল ৫৬ শতাংশকে সুরক্ষা দিতে পারব (৭৫ শতাংশের ৭৫ শতাংশ) তা কিন্তু ভাইরাসের প্রচলন বন্ধ করার জন্য মোটেই যথেষ্ট না। আমাদের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই এর ফলে সংবেদনশীল থেকে যাবে এবং আমরা জানি না যে তারা কারা। সেই সব ঝুঁকি মোকাবেলা করার সময় সামাজিক দূরত্বের বিধি শিথিল করা হবে জুয়ার মতো।

এখন চিকিৎসা ঝুঁকির গ্রুপগুলোতে ৬৫ বছর বয়সের নিচে থাকা মানুষদের দিকে তাকানো যাক। ভালো একটি বছরে যুক্তরাজ্য সেসব মানুষের ৫০ শতাংশকে ফ্লুর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দিতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে মানুষগুলোর কেবল এক-তৃতীয়াংশ সুরক্ষা পেতে যাচ্ছে (৭৫ শতাংশের ৫০ শতাংশ) তবে বিষয়টি আরো খারাপ হতে পারে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সির মতে, কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রার্থীগুলো ৫০ শতাংশের কম কার্যকারিতা দেখাতে পারে। যদি সেই কার্যকারিতার স্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায় তবে আমাদের ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা দ্বারা ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামকে আরো বাড়াতে হবে।

ব্যক্তিকে রক্ষা করার সঙ্গে ভ্যাকসিন দ্বারা সম্প্রদায়কেও রক্ষা করতে পারে। এটি সম্ভব হতে পারে সংক্রমণে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে। এর একটি কার্যকর উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাজ্যে ১৯৯০ দশকের মেনিনজাইটিস সি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন। যেখানে ভ্যাকসিন গ্রহণ না করা শিশু তরুণদের মাঝে সংক্রমণের হার ৬৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যদের ভ্যাকসিন গ্রহণ করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল। তাই আর সংক্রমণও অব্যাহত ছিল না।

যদি আমরা কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনেশন দ্বারা জনগণকে সুরক্ষিত দেখতে চাই, তবে আমাদের সব বয়সের জন্য উচ্চস্তরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কেবল ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেয়া নয়, যেমনটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সংক্রমণ থামাতে আমাদের অবশ্যই তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে, যারা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এর চেয়ে কম কিছু মানে সেটি কেবল ব্যক্তিকে রক্ষা করার কাজ করবে এবং তা সংক্রমণ স্থানান্তরে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।

তবে একটি দেশ যদি ব্যক্তিগত সুরক্ষা কৌশল থেকে সংক্রমণে বাধা দেয়ার কৌশলের নীতিতে চলে যায়, তার পরও সমস্যা থেকে যাবে। যা ভ্যাকসিনেশনের সফল কার্যক্রমের ওপর (সম্ভবত দুটি ডোজসহ) নির্ভর করবে। যেখানে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তরুণদের বোঝানো যে ভ্যাকসিন তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য না, অন্যদের সুবিধার্থে নিতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন