মৃত্যুর সংখ্যা অতিরঞ্জনের দাবিটি মিথ্যা

বণিক বার্তা ডেস্ক

একটি মিথ্যাচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবিরাম প্রচারিত হচ্ছে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯- মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যান লাখ ২২ হাজারের (গতকাল দুপুর পর্যন্ত) চেয়ে অনেক কম। যে কারণে রোগের ভয়াবহতার খবরও অতিরঞ্জিত। আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি রিটুইটে দাবি করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত মৃত্যুর কেবল শতাংশ হয়েছে কভিড-১৯-এর কারণে ( টুইটটির উদ্ভব ষড়যন্ত্রতত্ত্ব কোয়াননের এক অনুসারীর মাধ্যমে) টুইটার অবশ্য মিথ্যা তথ্য সংবলিত টুইটটি মুছে দেয়, কিন্তু তার পরও ধরনের মনগড়া মিথ্যাচার থেমে যায়নি।  কানসাসের প্রতিনিধি রজার মার্শাল সেপ্টেম্বরে অভিযোগ করে জানান, ফেসবুক তার একটি পোস্ট মুছে দিয়েছে যেখানে তিনি দাবি করেছেন, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বর্ণিত কভিড-১৯- মৃত্যুর ৯৪ শতাংশ হয়েছে -৩টি বাড়তি মারাত্মক অসুস্থতা থেকে এবং অতিরিক্ত বয়সের ফলে।

এখন কিছু ফ্যাক্টের মাধ্যমে গবেষকরা কোনো ধরনের সন্দেহ ব্যতিরেকেই নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তিনটি প্রমাণ এটিকে সমর্থন করছে, যেখানে ডেথ সার্টিফিকেটও আছে। সিডিসির ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিক্টিসের প্রধান মৃত্যুসংক্রান্ত পরিসংখ্যানবিদ রকার্ট অ্যান্ডারসন বলেন, কভিডে শতাংশ মৃত্যু হয়েছে, ভুল ধারণাটি ডেথ সার্টিফিকেট কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা করে।

নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক মৃত্যুর পরিধি এখন পরিষ্কার, এমনকি মহামারী শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চূড়ান্ত সংখ্যা জানা না গেলেও। ইনফেকশাস ডিজিজ এপিডেমিওলজিস্ট জাস্টিন লেসলার বলেন, আমরা মৃত্যুর পরিমাণ এবং ক্রমের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। পরিসংখ্যানে কেন কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে তা বুঝতে কীভাবে সংখ্যা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং হিসাব করা হয়েছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।

মৃত্যুর পরিসংখ্যানের প্রথম উৎসকে বলা হচ্ছে নজরদারি। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের নির্দিষ্ট রোগের সংক্রমণ এবং মৃত্যু সম্পর্কে রিপোর্ট করা জরুরি। যেখানে হাম, মাম্পস এবং চলমান কভিড-১৯ও অন্তর্ভুক্ত রিপোর্টটি তারা করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগে। যারা এরপর তথ্য পাঠিয়ে দেয় সিডিসির কাছে, বলছিলেন অ্যান্ডারসন। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর পাবলিক হেলথ স্ট্যাটিসটিক অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের নির্বাহী পরিচালক শাওয়ানা ওয়েবস্টার বলেন, নজরদারিসংক্রান্ত পরিসংখ্যান এক ধরনের দ্রুত সাধারণ হিসাবরক্ষণ। রাজ্য রোগ সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার তথ্য যাচাই করা কিংবা হারিয়ে ফেলা ল্যাব পরীক্ষাগুলো দেখার সময় থাকে না। সেজন্য আপনাকে তথ্যের পরের উেসর দিকে তাকাতে হবে : ভাইটাল রেকর্ডস।

এই দ্বিতীয় সারির প্রমাণ আসে ন্যাশনাল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস সিস্টেম থেকে। যারা কিনা জন্ম এবং মৃত্যুর সার্টিফিকেট সংরক্ষণ করে। যখন কেউ মারা যায় তখন একটি ডেথ সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়, যেখানে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে সেখানে।  রাজ্য পর্যায়ে রেকর্ড নিবন্ধিত হওয়ার পর সেগুলো পাঠানো হয় ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিকসে। যারা জাতীয় পর্যায়ে মৃত্যুর সন্ধান রাখে। ভালোভাবে করা পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়া এবং তথ্য যথাসম্ভব সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সিস্টেমে ডেথ সার্টিফিকেট দাখিল করা হয় না।

অ্যান্ডারসন বলেন, একজন ডাক্তার, মেডিকেল এক্সামিনার কিংবা শবপরীক্ষক মৃত্যুর কারণ ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করেন। তাদের কেবল সেই শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া থাকে, যা মৃত্যুর কারণ বা মৃত্যুতে অবদান রেখেছে। একটি ক্ষেত্র মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করা ইভেন্টগুলোর ক্রম তালিকাভুক্ত করে। অ্যান্ডারসন বলেনআমরা সত্যিকার অর্থেই পাওয়ার চেষ্টা করি সেই পরিস্থিতি বা রোগ, যা মৃত্যুর দিকে চালিত করার ঘটনার শৃঙ্খলার সূত্রপাত করে। কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে এটা হয়তো কভিড-১৯-এর কারণে নিউমোনিয়ার জন্য তীব্র শ্বাসকষ্টের মতো কিছু হতে পারে।

সার্টিফিকেটের দ্বিতীয় অংশে অন্য উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো তালিকাভুক্ত হবে, যা কিনা  মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে, তবুও এটি ঘটনা ক্রমের অংশ ছিল না। এগুলোকে বলা হয় কোমরবিডিটি। এগুলো অবদান রাখলেও সরাসরি কারণে যুক্ত থাকে না এবং মৃত্যুকে প্রভাবিত করতে পারে।

আগে থেকে বিদ্যমান অসুস্থ অবস্থা যেমন ডায়াবেটিস কিংবা হূদরোগ হচ্ছে সাধারণ কো-মরবিডিটি। এগুলো মানুষকে নভেল করোনাভাইরাসের জন্য আরো বেশি দুর্বল করে ফেলে।  অ্যান্ডারসন বলেন, ব্যাপার হচ্ছে ওরা কিন্তু কোমরবিডিটির কারণে মৃত্যুবরণ করছে না।

লেসলার বলেন, যখন আমরা জিজ্ঞেস করি, কভিড কাউকে হত্যা করেছে কিনা, এর অর্থ যদি তাদের ভাইরাস না থাকে, তবে তারা দ্রুত মারা গিয়েছিল কিনা। এমনকি একজন ব্যক্তি যার জীবনকাল সংক্ষিপ্ত হওয়ার মতো কোমরবিডিটি যেমন হূদরোগ কিংবা ডায়াবেটিস আছে, তিনি হয়তো আরো , ১০ কিংবা আরো বেশি বছর বাঁচত, যদি তিনি কভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমিত না হতেন।

ট্রাম্প এবং কোয়াননের শতাংশের মন্তব্যটি এসেছে সিডিসির একটি সাপ্তাহিক রিপোর্ট থেকে। যেখানে বলা হয়, সার্টিফিকেটে তালিকাভুক্ত গণনাকৃত মৃত্যুর সংখ্যার ক্ষেত্রে কেবল শতাংশের ক্ষেত্রে একমাত্র শর্ত ছিল কভিড-১৯। অ্যান্ডারসন বলেন, পর্যবেক্ষণের অর্থ সেসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটগুলো অসম্পূর্ণ ছিল। কারণ সার্টিফিকেট কেবল মৃত্যুর অন্তর্নিহিত কারণ উল্লেখ করেছে, এটি কারণের সম্পূর্ণ ক্রম দেয়নি, যা একে চালিত করেছে। এমনকি যাদের আগে থেকে বিদ্যমান কোনো সমস্যা ছিল না এবং কভিড-১৯- মারা গিয়েছে, তাদেরও উপসর্গ রূপে কোমরবিডিটি ছিল। যেমন নভেল করোনাভাইরাসের কারণে শাসযন্ত্রের ফেইলিউর।

তবে ডেথ সার্টিফিকেটে কভিড-১৯-এর পাশাপাশি অন্য রোগের উল্লেখ থাকা মানে এমন নয় যে, মানুষটি ভাইরাসে মারা যায়নি।  নজরদারি ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ডাটা ভালো একটি চিত্র দেয় যে, করোনাভাইরাসকে মৃত্যুর জন্য কতটা দায়ী করা যায়। যদিও সেটি পুরো চিত্রকে ধারণ করতে পারে না। তাই আনা হয় প্রমাণের শেষ সারিটিকে : অতিরিক্ত মৃত্যু। ফিজিশিয়ান স্টিভেন উলফ বলেনএটা হচ্ছে সেই সময়কালের ভেতর ঐতিহাসিক প্যাটার্নের ঊর্ধ্বে এবং বাইরে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর সংখ্যা। উলফ এবং তার সহকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুর রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং সেগুলোকে প্রত্যাশিত মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারা দেখেছেন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং সব মিলিয়ে অতিরিক্ত মৃত্যু দেখা গেছে লাখ ২৫ হাজার ৫৩০টি। তিনটি প্রমাণ দিয়েই মূলত ট্রাম্প এবং ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিকদের শতাংশ মৃত্যুর দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করা যায়।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন