বিসিক তহবিল থেকে এমএসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের (এমএসএমই) জন্য বিসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, লক্ষ্যে বিসিককে ৮০০ কোটি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে একটি ঋণ তহবিল গঠন করতে হবে। তহবিল থেকে তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করে করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করবে বলে মনে করেন তারা।

গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ক্ষুদ্র কুটির শিল্প খাতে কভিড-১৯-এর প্রভাব এবং জাতীয় এসএমই নীতি-২০১৯ বাস্তবায়ন শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ যৌথভাবে সংলাপের আয়োজন করে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালাহউদ্দিন মাহমুদ এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।

নাসিবের সভাপতি মির্জা নুরুল গণী শোভনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পৃথকভাবে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিম উল্যাহ এবং অ্যাকশন এইডের উপব্যবস্থাপক মো. হাতেম আলী। সংলাপে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, বিসিক পরিচালক আলমগীর হোসেন, ন্যাশনাল প্রডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) পরিচালক নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পরিচালক আজগর আলী সাবরী, নাসিবের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বেলালসহ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, কভিড-১৯-এর ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাতসহ তৃণমূলের এমএসএমই শিল্প খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পণ্য বিপণন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাতের উদ্যোক্তাদের একটি বিরাট অংশ করোনাকালে চলতি মূলধন হারিয়ে ফেলেছে। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগের সক্ষমতা না থাকায় তারা প্রণোদনার সুফল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতীয় এসএমই নীতি-২০১৯ বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি বেগবান করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন তারা।

বক্তারা আরো বলেন, এমএসএমই শিল্প খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। দেশের জিডিপিতে খাতের অবদান ২৫ শতাংশ হলেও ব্যাংকিং জটিলতার কারণে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকার অধিকাংশ এখনো অব্যবহূত রয়ে গেছে। তারা দ্রুত অর্থায়ন সুবিধা নিশ্চিত করে এমএসএমই খাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের এমএসএমই উদ্যোক্তারাই দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। করোনার ফলে তাদের পণ্য বিপণন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক ধাক্কা লেগেছে। এর মোকাবেলায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ এমএসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারীর শুরুতেই লাখ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির দশমিক শতাংশ। তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাছে প্রণোদনার সুবিধা পৌঁছে দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত করতে জাতীয় এসএমই নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় গঠিত সাতটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে নীতি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি এসএমই উইং গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন