তবুও হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পকেই চাইছে বেইজিং

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীনকে বিভিন্নভাবেই ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন, হতাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু আগামী নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পেরই জয় কামনা করবে বেইজিং। কারণ ট্রাম্প জয়ী হলে পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যে কমছে ধারা অব্যাহত থাকবে এবং চীনের উত্থান অক্ষুণ্ন থাকবে। খবর এএফপি।

চার দশক আগে সম্পর্ক স্থাপনের পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিক্ততা বেড়েছে বেইজিংয়ের। কিন্তু বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিটির সঙ্গে আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের চরিত্র হতে নারাজ চীন।

আমেরিকা ফার্স্ট নীতির আওতায় চীনকে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প। তিনি বড় আকারের বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেন, যাতে চীনের শতকোটি ডলারের লোকসান হয়েছে। চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বিভিন্নভাবে নাস্তানাবুদ করেছেন ট্রাম্প। কভিড-১৯ মহামারীর জন্য বেইজিংয়ের প্রতিই অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করেছেন তিনি।

এতসব তিক্ততা সত্ত্বেও আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পেরই জয় কামনা করবে চীন। কারণ এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে, তা এগিয়ে নেয়া সহজতর হবে।

বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ঝিকুন ঝু বলেন, ট্রাম্প জয়ী হলে চীনের হাতে বিশ্বায়ন, বহুপক্ষবাদ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মশালটি চলে যাবে।

ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর পরই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক চুক্তি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। চীনা পণ্যে শতকোটি ডলারের শুল্ক আরোপের পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারীর চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র যেখান থেকেই পিছু হটেছে, সেখানেই সামনে এগিয়ে গিয়েছে চীন।

মুক্ত বাণিজ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনকে নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এমনকি দরিদ্র দেশগুলোতে কভিড-১৯-এর টিকা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি।

ঝু মনে করেন, আরেক মেয়াদে ট্রাম্প জয়ী হলে বিশ্ব মঞ্চে নেতা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চীনের হাতে মশাল তুলে দেবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের চীন বিশেষজ্ঞ ফিলিপে লো কোর মনে করেন, ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতি দীর্ঘমেয়াদে বেইজিংয়ের উপকারে আসবে। নীতির কারণে অনেক পুরনো মিত্রকে হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তা চীনের সম্প্রসারণের পথ সুগম করে তুলছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের উত্থানে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন চীনা জাতীয়তাবাদীরা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক হু শিজিন ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে এক সম্পাদকীয়তে লেখেন, আপনি আমেরিকাকে হাস্যকর হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকুন এবং হোয়াইট হাউজের প্রতি বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তুলুন। আপনি আসলে চীনে ঐক্য বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করছেন।

ট্রাম্প সন্দেহাতীতভাবে চীনকে অর্থনৈতিক রাজনৈতিকভাবে অনেক বিপাকে ফেলেছেন। কিন্তু জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাবে না চীন। বরং বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের নেতৃত্ব ফের দাবি করে বসবে ওয়াশিংটন। সাম্প্রতিক সময়ে উইঘুর, তিব্বত হংকংয়ের স্বাধীনতা ইস্যুতে বাইডেনের মতামত বেইজিংকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।

বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঝু বলেন, জিনজিয়াং তিব্বতে মানবাধিকার ইস্যুতে ট্রাম্পের চেয়েও শক্ত অবস্থান নেবেন বাইডেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন