নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ

আটকা পড়েছে ২১ লাখ টন ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া প্রায় ২১ লাখ টন ভোগ্যপণ্য শিল্পের কাঁচামাল আটকে পড়েছে। এর মধ্যে বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তর করতে না পারায় ৪০টি বিদেশী সমুদ্রগামী বড় জাহাজে প্রায় নয় লাখ টন ৩৮টি ঘাটে অবস্থান করা ৮৭৪টি লাইটার জাহাজে ১২ লাখ টন পণ্য রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে সমুদ্রগামী বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকেও পণ্য স্থানান্তর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) সাগরে রেখে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। ভোগ্যপণ্য ছাড়াও নদীপথে পরিবাহিত পণ্যের বড় অংশই সিমেন্ট ইস্পাতের কাঁচামাল এবং কয়লা, সার প্রভৃতি। এসব পণ্য ধারাবাহিকভাবে দেশের ৩৮টি ঘাট শিল্পমালিকের কারখানার ঘাটে নিয়ে খালাস করা হয়। বন্দরে বড় জাহাজ থেকে নদীপথে সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহন হয় লাইটার জাহাজ বরাদ্দকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের মাধ্যমে। সংস্থাটির হিসাবে, কর্মবিরতির কারণে দেশের ৩৮টি ঘাটে তাদের অধীনে থাকা ৮৭৪টি লাইটার জাহাজে ১২ লাখ টন পণ্যের খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর বাইরে সিমেন্টের কাঁচামাল ভোগ্যপণ্য পরিবহনের জন্য দেশের ১১টি শিল্প গ্রুপের নিজস্ব লাইটার জাহাজেও পণ্য পরিবহন হয়।

লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তর কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া দেশের ৩৮টি ঘাটে আমাদের অধীনে থাকা ৮৭৪টি লাইটার জাহাজে ১২ লাখ টন পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরের বহির্নোঙরে ৪০টি বড় জাহাজে শস্যদানা, গম, চিনি, ডালজাতীয় খাদ্যপণ্য ছাড়াও সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, চুনাপাথর জিপসাম, পাথর ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। নৌ-পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে এসব খাদ্য শিল্পের কাঁচামাল মাদার ভেসেল (সমুদ্রগামী বড় জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজে (নদীপথে চলাচলকারী ছোট জাহাজ) পণ্য স্থানান্তর করে সারা দেশে পরিবহন করা যাচ্ছে না। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি আদায়ে গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা মিনিট থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং বিভিন্ন ঘাটে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরের জেটিতে কনটেইনার জাহাজে পণ্য ওঠানামা অব্যাহত আছে।

আমদানি-রফতানিতে যুক্ত ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধরনের ধর্মঘট অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকারক। এতে করে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাবে, যা সামষ্টিক ব্যষ্টিক উভয় পরিসরে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। করোনা মহামারীর আগ্রাসন থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা পুনরুদ্ধারে চলমান আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নির্বিঘ্ন রাখা, বন্দরে জাহাজজট নিয়ন্ত্রণে রাখা, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ অব্যাহত রাখা এবং আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে পরিবহন স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গতকাল লিখিতভাবে আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।

চেম্বারের পক্ষ থেকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শিল্পের কাঁচামাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। লাইটার জাহাজ চলাচল না করায় সারা দেশে এসব কাঁচামাল পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজট সংকট তৈরি করছে। জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং ওভারস্টের কারণে ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, নদীপথে লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ থেকেও পণ্য খালাস হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে আসা বড় জাহাজ সাগরে অপেক্ষা করছে। বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের এই সময়ে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ আরো চাপের মুখে পড়বে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন