১১ দফা দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকরা। সোমবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া ধর্মঘটে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হয়েছে। শ্রমিকদের এ ধর্মঘটকে অযৌক্তিক দাবি করে যারা ‘জোরপূর্বক জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নৌযান মালিকরা।
এদিকে বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবিতে গতকাল খুলনায় ধর্মঘট শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, তার নেতৃত্বে মহানগরীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট এলাকায় গতকাল সকাল ১০টায় ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেন শ্রমিকরা।
নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ জাহাজি ফেডারেশনের শ্রমিকরা। এ সময় নদীবন্দরের সামনে নোঙর করে রাখা হয় বিপুলসংখ্যক পণ্যবাহী জাহাজ। লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটাতে দেখা যায় শ্রমিকদের। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র চালু ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে বাগেরহাটের মোংলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস ও বোঝাই বিঘ্নিত হয়।
ধর্মঘট হয়েছে বরিশালেও। ধর্মঘটের আওতায় সব ধরনের পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে গন্তব্যে যেতে না পেরে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করে রয়েছে অর্ধশতাধিক পণ্য ও জ্বালানিবাহী জাহাজ। নৌপথে পণ্য ও জ্বালানি পরিবহন বন্ধ থাকায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদপ্তরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এর আগে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি হলো ১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, ২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান, ৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস ও মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান, ৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, ৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ, ৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ, ৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, ৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন, ৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা, ১০. নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং ১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন।
অন্যদিকে গতকাল পণ্যবাহী নৌযান মালিকদের সংগঠন বালাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের এ ধর্মঘট অযৌক্তিক। তিনি অনতিবিলম্বে এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি যারা ‘জোরপূর্বক জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।