নওগাঁয় চতুর্থ দফা বন্যায় ৩৭ হাজার ৬১১ জন কৃষকের ৭১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার ৫ হাজার ৭৮২ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ১০৪ হেক্টর জমির শাকসবজি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান এবং শাকসবজির আর্থিক মূল্য প্রায় ৭১ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ধানের আর্থিক মূল্য ৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং সবজির আর্থিক মূল্য ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে রোপা আমন ধানের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৩৪ হাজার ৪৯৯ জন এবং শাকসবজির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ হাজার ১১২।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৭৩২ হেক্টর, মান্দায় ১ হাজার ৪৪০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২ হাজার ১৮০ হেক্টর, রানীনগরে ৭৫৪ হেক্টর, বদলগাছীতে ৮০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১২৩ হেক্টর, পত্নীতলায় ১০ হেক্টর, সাপাহারে ৩০০ হেক্টর, পোরশা উপজেলায় ৮৩ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমির ফসল চতুর্থ দফা বন্যায় নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হওয়া জমি থেকে কৃষকের ১৭ হাজার ৬৩৮ টন চাল উৎপাদিত হতো। এ চালের আর্থিক মূল্য ৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
এদিকে জেলার রানীনগর উপজেলায় চার হেক্টর, বদলগাছীতে ২৫, পত্নীতলায় ৩০, ধামইরহাটে ১৬ ও মান্দায় ৩০ হেক্টর জমির শাকসবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া শাকসবজির বাজারমূল্য ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় আত্রাই ও মান্দা উপজেলার পাঁচটি স্থানে আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এর পর থেকে ভাঙা স্থান দিয়ে আবারো পানি প্রবেশ করে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলার মান্দার কাশোপাড়া গ্রামের কৃষক সাহেব প্রামাণিক বলেন, তিন বিঘা জমিতে ২১ জাতের আউশ ধানের আবাদ করেছিলাম। ১৫-২০ দিন পর ধান কাটা লাগত। কিন্তু গত বন্যায় ভাঙা স্থান দিয়ে দ্রুত পানি ঢুকে ধানগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে পানির নিচে থাকা ধানে চারা গজিয়ে যায়। শ্রমিকরা কোমর সমান পানির নিচ থেকে ধান কেটে দিয়েছেন। আধাপাকা ধান কাটায় বিঘায় ১২-১৩ মণ ফসল পাওয়া গেছে।
নাপিতপাড়া গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, আউশ ধান লাগানোর কিছুদিন পর বানের পানিতে ভেসে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর আবারও হালচাষ করে জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। ধান লাগানোর মাস খানেকের মধ্যে বন্যায় সবকিছু নষ্ট করে দেয়।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বণিক বার্তাকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষক পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা দ্রুত প্রণয়ন করে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করা হবে।
