করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব

টানা চতুর্থ দিনের মতো দরপতনে জ্বালানি তেলের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো জ্বালানি তেলের দরপতন ঘটেছে। আবার লিবিয়ার উত্তোলন বৃদ্ধিও জ্বালানি তেলের বাজারে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। খবর রয়টার্স।

ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসে এদিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৩২ সেন্ট বা দশমিক শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ ডলার ৩০ সেন্টে, যেখানে আগের দিন কমেছিল ৩১ সেন্ট। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ২৬ সেন্ট বা দশমিক শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ ডলার ৫৭ সেন্টে, যা আগের দিন কমেছিল সেন্ট।

গত সোমবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ সংক্রমণ চার কোটি ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় ইউরোপ উত্তর আমেরিকায় আবারো অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে। ফলে জ্বালানি তেলের বাজার আবারো নিম্নমুখী হওয়া শুরু করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারবিষয়ক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ভান্দানা ইনসাইটের জ্বালানি বিশ্লেষক ভান্দানা হরি মনে করেন, জ্বালানি তেলের বাজার আবারো ক্রমান্বয়ে বিষণ্নতায় ঢেকে যাচ্ছে। কারণ জ্বালানি পণ্যটির চাহিদার চিত্র এরই মধ্যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক বলেন, জ্বালানি তেলের চাহিদা এরই মধ্যে কমে গেছে। বিশেষ করে সৌদি আরব রাশিয়া আগামী জানুয়ারিতে ওপেক প্লাস জোটের উত্তোলন বাড়ানোর যে পরিকল্পনার বিষয়টি জানিয়েছে, সেটি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

এর আগে গত সোমবার ওপেক প্লাস জোটের দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জ্বালানি তেলের বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত, ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৭৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করা হবে, যা জানুয়ারি থেকে কমানো হবে ৫৮ লাখ ব্যারেল। যদিও ওপেক প্লাস জোটের তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বাধ্য করলে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসতে পারে।

ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিধিনিষেধ বলবৎ করেছে, যদিও বেশির ভাগই গুরুতর পর্যায়ের লকডাউনে যাচ্ছে না এখনই। যুক্তরাজ্যের অংশ ওয়েলসই সর্বপ্রথম করোনার দ্বিতীয় ঝড় থেকে রেহাই পেতে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে।

ওয়েলসে লকডাউন শুরু হবে শুক্রবার থেকে এবং বলবৎ থাকবে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। লকডাউনের সময় বেশির ভাগ নাগরিকই কাজ করবেন বাসায় থেকে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।

ফলে লকডাউনে জ্বালানি তেলের চাহিদায় বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা চাহিদা নিয়ে দুশ্চিন্তা উড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে দাম ৪০ ডলারের কাছাকাছি রাখতে ভূমিকা রাখছেন তারা।

ওপেক প্লাস দেশগুলোকে দিয়ে বাজিই ধরছেন ব্যবসায়ীরা। তারা ধরেই নিচ্ছেন, জ্বালানি তেল রফতানিকারক ওপেক প্লাস দেশগুলো ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন বাড়তি ২০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন না করে তারা বরং আরো কয়েক মাস ধরে উত্তোলন কমই রাখবে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ইঙ্গিত দিচ্ছে, জ্বালানি তেলের চাহিদা পুনরুদ্ধারের বর্তমান গতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ওপেক প্লাস দেশগুলো। জ্বালানি তেলের দামে আরেকবার বিপর্যয় ঘটলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না তারা। কারণ স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে, জ্বালানি তেলের বাজারে তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

এমন অবস্থায় অন্তত আরো কয়েকটি মাস জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে রাখতে আগ্রহী ওপেক প্লাস দেশগুলো এবং এর মধ্য দিয়ে সরবরাহ সংকট পরিস্থিতি তৈরি করে ওপেক প্লাস দেশগুলো বুঝাতে চায় যে তারাই বাজারের শীর্ষ খেলোয়াড়।

লিবিয়ায় তেলের উত্তোলন বাড়ছে

ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন মতে, মিলিশিয়াদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে শারারা নামের সর্ববৃহৎ তেলক্ষেত্র থেকে দৈনিক এক লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ ব্যারেল উত্তোলন করতে সমর্থ হচ্ছে আফ্রিকান দেশ লিবিয়া। লিবিয়ার উত্তোলন বৃদ্ধির খবর ওপেক প্লাস দেশগুলোর জন্য বড়ই মাথাব্যথার কারণ। কেননা তারা কম উত্তোলনের নীতিতে এগোচ্ছে। যদিও গৃহযুদ্ধের কারণে ওপেক প্লাস দেশগুলোর চুক্তি থেকে দায়মুক্ত রয়েছে লিবিয়া।

শারারার দৈনিক উত্তোলন সক্ষমতা তিন লাখ ব্যারেল। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা প্রায় লাখ ১০ হাজার ব্যারেল উত্তোলন করছে। ধীরে ধীরে ক্ষেত্রটির উত্তোলন বাড়বে। লিবিয়ায় বাড়তি উত্তোলন জ্বালানি তেলের বাজারে নেতিবাচক অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

লিবিয়া ছাড়াও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা এখন দৃষ্টি দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তোলনের দিকে। সম্প্রতি বেকার হিউজ রিগ কাউন্ট প্রতিবেদন বলেছে, জ্বালানি তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কূপ খননের সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৫-এ। এছাড়া পেট্রোলিয়াম নিয়ে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) আসন্ন সাপ্তাহিক প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেবে, যুক্তরাষ্ট্রের দেশজ তেল উত্তোলনও বাড়বে। উৎপাদন যদি উচ্চচাহিদা পূরণ করতে না পারে তবে জ্বালানি তেলের দামের ওপর প্রভাব পড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন