ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ পিছিয়ে

বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক

রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে কম সময়ে যাতায়াতের লক্ষ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয় প্রায় এক দশক আগে। প্রথম দফায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০-১৩। পরে ব্যয় সময় সংশোধন করে এখন এর মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সাল। পুরো প্রকল্পকে তিন ভাগে বিভক্ত করে কাজ শুরু হলেও সংশোধিত সময়ে পুরো প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট খবরে বলা হয়েছে, অর্থের সমস্যা না থাকলেও নির্মাণকাজ পিছিয়ে পড়েছে। কথা সত্য, করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। তবে লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত মেলেনি। নতুন দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ায় অর্থ সংকটও নেই প্রকল্পে। চলতি বছরের অক্টোবরে অংশবিশেষ চালুর লক্ষ্য থাকলেও তা পিছিয়ে নেয়া হয়েছে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। বাংলাদেশে সময়মতো প্রকল্প শেষ না করার রেওয়াজ নতুন নয়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক নয়। সংশোধিত নির্ধারিত সময়েও এসব প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, দুর্নীতির সুযোগও বাড়ছে। এমনিতেই প্রকল্পগুলোর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এমনকি সময়ও নষ্ট হয় বেশি। জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে নকশা প্রণয়নেও কালক্ষেপণের উদাহরণ রয়েছে। একাধিক দফায় নকশা সংশোধন, সাংঘর্ষিক প্রকল্প গ্রহণের মতো পদক্ষেপের কথা সবারই জানা।

রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা, বিশেষত যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কয়েকটি মেগা প্রকল্প নেয়া হয়। এর কোনোটিই এখনো সম্পন্ন হয়নি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কতটা দায়ী, তা চিহ্নিত করা জরুরি। যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থেকে প্রকল্পগুলোকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে সেখান থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাঠামোগত দুর্বলতা থেকেও ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো বের হতে পারেনি। পরিকল্পনা পর্যায়ে যতটা দক্ষতা দেখানো দরকার ছিল ততটা দেখানো সম্ভব হয়নি। প্রতিটা প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমস্যা দূরীকরণে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের মধ্যেও ধরনের কোনো তত্পরতা দেখা যাচ্ছে না। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো কেবল উন্নয়ন প্রকল্পই নয়, এসব প্রকল্পের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিও বিশেষভাবে জড়িত। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত সবাই দায়িত্বশীলতা আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা। করোনার ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি অধিকাংশ প্রকল্প। লকডাউনের পর গতি বাড়ছে ধীরে ধীরে। বিদেশীরা এখনো পুরোপুরি কাজে যোগদান করেননি। বস্তুত রাজধানী আশপাশের এলাকার গণপরিবহন সংকটের সমাধানে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে, সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

প্রকল্পের কাজে যত দেরি হয় তত এর ব্যয় বাড়েএটা জানা কথা। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি মানে জনগণের অর্থের অপচয়। এটা কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা জরুরি। শুধু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রেই নয়, ছোট-বড় সব প্রকল্পের ক্ষেত্রেই একথা সত্য। পদ্মা সেতুকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরও এর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আমরা চাই, পদ্মা সেতু বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রজেক্টের কাজ যথাযথ সময়ে শেষ করা হোক। মেগা প্রজেক্টের কাজ বাস্তবায়নের পথে সব বাধা দ্রুত দূর করতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড প্রকল্পটি পিপিপির অধীনে তৈরি হচ্ছে। ব্যক্তি খাত এটি পরিচালনা করবে।  ফলে এটি নির্ধারিত সময় ব্যয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা বেশি জরুরি। এর ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে টোল। ব্যয় বেশি হলে টোলের হারও বেশি হবে, যা জনগণের পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রকল্পটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, রাজধানীবাসী এর সুফল তত তাড়াতাড়ি পাবে। এমন প্রেক্ষাপট থেকে ঢাকা এলিভেটেড প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন