সংসদীয় কমিটিতে বন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন

২ লাখ ৮৭ হাজার একর বনভূমি ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জবরদখলে আছে। সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখলে আছে কক্সবাজার জেলায়। জেলায় ৫৯ হাজার ৪৭১ হাজার একর বনভূমি জবরদখলে আছে। পরিবেশ, বন জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিষয়ে আলোচনা হয়।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।

সংসদীয় কমিটি দখলদার ৯০ হাজার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর তা প্রকাশ করবে সংসদীয় কমিটি। এছাড়া বেদখল হওয়া বনভূমির বর্তমান অবস্থা কী, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বৈঠক শেষে বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা দেখতে চাই কারা এসব বনভূমি দখল করে রেখেছে। এক ইঞ্চি জমিও আমরা বেদখলে রাখতে চাই না। যারা দখল করে রেখেছে তাদের তালিকা আমরা চেয়েছি। সেটা আমরা জনসমক্ষে প্রকাশ করব।

সংসদীয় কমিটি বাংলাদেশের বনভূমির ওপর বন অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তাতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণীর মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্থার কাছে এখন পর্যন্ত লাখ ৬০ হাজার ২৪০ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, সংসদীয় কমিটি জবরদখল হওয়া জমি উদ্ধারে বন বিভাগের কর্মকাণ্ডেরও মূল্যায়ন করবে। আমরা দেখতে চাই দখলদারদের উচ্ছেদে কতবার নোটিস দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। আইনজীবী কারা আছেন। আইনি সংস্কার যদি করা লাগে তাহলে সেগুলো কী? বন বিভাগ, মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটি এখন জরুরি ভিত্তিতে জমি উদ্ধারে কাজ করবে।

বিপুল পরিমাণ বনভূমি জবরদখলের কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিএস রেকর্ড মূলে রেকর্ডভুক্ত বনভূমি পরবর্তী সময়ে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। এছাড়া এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বনভূমি (সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়া অন্যান্য যেমন রক্ষিত, অর্পিত বনভূমি) জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এছাড়া বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে এর দুই পাশে বনভূমি জবরদখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় জনগণ প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক বনভূমি দখল করে কৃষিকাজ, স্থায়ী স্থাপনা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, স্কুল, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অনেক জবরদখল করা বনভূমিতে শিল্প-কারখানাও স্থাপন করা হয়েছে।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিল্পপতি প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক বনভূমি জবরদখলের ক্ষেত্রে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে নিম্ন আদালতে মামলা আপিল এবং উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে এর মাধ্যমে স্থিতাবস্থা বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে থাকে। এছাড়া উচ্ছেদের কাজে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসহযোগিতা করে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বৈঠকে জানানো হয়, বন অধিদপ্তরের বনভূমির নিরাপত্তায় সরাসরি জড়িত কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা কর্মে উৎসাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে এইর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব পশ্চিম বন বিভাগের ১১-২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ৩০ শতাংশ হিসেবে ঝুঁকিভাতা প্রচলন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য এলাকা যেখানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় সে এলাকার কোনো কর্মচারী দায়িত্ব পালনরত থাকলে তাদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি ভাতা দেয়া যায় কিনা, সে বিষয়টিও মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন