করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল দেশে। এ সময় ঘরের বাইরে মানুষের বিচরণ ছিল সীমিত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে অসংখ্য গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সরেজমিন লাউয়াছড়া বনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবুজ ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে পড়ে আছে কাটা গাছের গুঁড়ি। ফুলবাড়ি এলাকার বাঘমারা বন ক্যাম্পের পাশের টিলা, লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া বিটের আশপাশ এলাকায় সেগুন, আগর, বনাক, চাপালিশ, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কাটার আলামত দেখা গেছে। লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির পেছনে পান জুম লাগোয়া আগর বাগানেও কয়েকটি কাটা গাছের গুঁড়ি রয়েছে।
নানা জাতের উদ্ভিদ ও বৈচিত্র্যময় প্রাণীর আবাসস্থল লাউয়াছড়া দীর্ঘদিন ধরেই বনদস্যুদের লোভের শিকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও কিছু অসাধু বনকর্মী এ চোর চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কিছুতেই থামছে না গাছ চুরি। করোনাকালে এটি আরো বেড়েছে। এ সময়ে বনের অনেক মূল্যবান গাছ উজাড় হয়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণী।
তবে লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও শ্রীমঙ্গল রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মুনায়েম হোসেন বন বিভাগের অবহেলা ও গাছ চুরিতে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা গাছ চুরির জন্য বন বিভাগের লোকবল সংকটকে দায়ী করে জানান, চারজন প্রহরী, একজন মালি ও দুজন বুটম্যান নিয়ে সশস্ত্র গাছ চোরদের ঠেকানো কঠিন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সুযোগে সংঘবদ্ধ চোর চক্র ১৭১টি গাছ চুরি করেছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছ চুরির দায়ে ৩৫টি মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে সেগুন, আগর, বনাক, চাপালিশ, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০০ ঘনফুট চোরাই কাঠ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।