ইরানে রেল প্রকল্পের পর গ্যাসফিল্ডও হাতছাড়া ভারতের

বণিক বার্তা ডেস্ক

রেল প্রকল্পের পর এবার গ্যাসফিল্ড প্রকল্পের কাজ থেকে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিতে যাচ্ছে ইরান। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানিয়েছে, গ্যাসক্ষেত্রটির আবিষ্কর্তা ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেডকে (ওভিএল) পারস্য উপসাগরে আবিষ্কৃত ইরানি গ্যাসফিল্ড ফারজাদ-বি উন্নয়নের কাজ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান। সেক্ষেত্রে ইরানের জ্বালানি খাতের স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ পেতে যাচ্ছে।

এর আগে চীনের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতা চুক্তির খবর প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই ৬২৩ কিলোমিটার লম্বা একটি রেলওয়ে প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেয় তেহরান। নির্মীয়মান রেললাইনটি ইরানের চাবাহার বন্দর আফগানিস্তানের জারাঞ্জের মধ্যে সংযোগ তৈরির কথা ছিল। ইরান হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশাধিকার পেতে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রকল্পটি। ওই প্রকল্পের পর এবার ফারজাদ-বি গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থেকেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিতে যাচ্ছে ইরান।

ভারতের জ্বালানি খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশনের (ওএনজিসি) বিদেশে বিনিয়োগের জন্য গড়ে তোলা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওভিএল ২০০৮ সালে পারস্য উপসাগরে বড় গ্যাসফিল্ডের উপস্থিতি আবিষ্কার করে। পরবর্তী সময়ে গ্যাসফিল্ডটির নাম রাখা হয় ফারজাদ-বি। গ্যাসফিল্ডটির উন্নয়নকাজ গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম চালাতে হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল ওভিএল ওভিএলের অংশীদাররা।

কয়েক বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখার পর চলতি বছরেই ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানির (এনআইওসি) পক্ষ থেকে ওএনজিসিকে জানিয়ে দেয়া হয় ফারজাদ-বির কাজ ইরানি কোনো প্রতিষ্ঠানকেই দেয়ার কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এনআইওসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালানোর পথ থেকে সরে আসেনি ওভিএল। এমনকি চুক্তির সম্ভাব্য শর্তাবলি নিয়ে আলোচনার জন্য এনআইওসির সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেনদরবারও করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ইরানি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ফারজাদ-বি গ্যাসক্ষেত্রটির মোট আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গকিলোমিটার। পারস্য উপসাগরের ইরানীয় অংশের ২৯ থেকে ৯০ মিটার গভীর পানির নিচে ক্ষেত্রটি অবস্থিত। মোট মজুদের পরিমাণ ২১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য অবস্থায় আছে ৬০ শতাংশ। অসমর্থিত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসক্ষেত্রটির উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য এরই মধ্যে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করেছে এনআইওসি। যদিও এখনো আশাহত না হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ওভিএল।

২০০২ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি) অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ওআইএল) সঙ্গে নিয়ে গ্যাস ব্লক অনুসন্ধানের চুক্তি সই করে ওভিএল। চুক্তি অনুযায়ী, ওভিএল, আইওসি ওআইএলের অংশীদারিত্বের হার যথাক্রমে ৪০, ৪০ ২০ শতাংশ।

ওভিএলের অনুসন্ধানে গ্যাস ব্লকটি আবিষ্কারের পর ২০০৮ সালের আগস্টে এটিকে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য বলে ঘোষণা দেয় এনআইওসি। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে। ওই সময়ে ফারজাদ-বি গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকির ভার ইরানিয়ান অফশোর অয়েল কোম্পানিকে (আইওওসি) দিয়েছিল এনআইওসি। ২০১১ সালের এপ্রিলে গ্যাসক্ষেত্রটির উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে আইওসিসিকে একটি মাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান দেয় ওভিএল। গ্যাসক্ষেত্রটির উন্নয়ন সেবাসংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয় ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কঠোর শর্তাবলি ইরানের ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়নি।

২০১৫ সালের এপ্রিলে নতুন একটি চুক্তির আওতায় ফারজাদ-বি গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ শুরু করা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময়ে এনআইওসির পক্ষে ওভিএলের সঙ্গে দরকষাকষিতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছিল পারস অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি (পিওজিসি) পরের বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দরকষাকষি চালানো হলেও সেখান থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে নতুন এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৭ সালের মার্চে পিওজিসির কাছে একটি সংশোধিত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা জমা দেয়া হয়। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এজন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সমীক্ষা চালানো যায়নি। ফলে নিয়ে বাণিজ্যিক কোনো আলোচনা এগিয়ে নেয়াও সম্ভব হয়নি। গ্যাসক্ষেত্রটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারতীয় কনসোর্টিয়ামটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন