যশোরে আমন ধান নিয়ে উদ্বেগে কৃষক

মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহারে গোড়ায় পচন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

যশোরের মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে রোপা আমন ধানের শীষ। আর এক মাস পর কৃষকরা ঘরে তুলবেন সোনালি ফসল। কিন্তু হঠাৎ ধানের গোড়াপচা পাতা পুড়ে যাওয়ায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কৃষকের। শেষ সময়ে ধানে পচন দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা সমাধানে জমির পানি সরিয়ে পটাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা তা মানছেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরের আট উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। যশোরে আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে এবার আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল লাখ ৩৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে লাখ ৩৮ হাজার ৫১০ হেক্টর, যা থেকে উৎপাদন হবে লাখ ৯১ হাজার ৯৮৩ টন চাল। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল লাখ ৩৯ হাজার ২৫ হেক্টর। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

চলতি আমন মৌসুমে যশোরের সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, শার্শায় ২০ হাজার ৫৭০, ঝিকরগাছায় ১৮ হাজার ৫০০, চৌগাছায় ১৭ হাজার ৮৫০, অভয়নগরে হাজার ৫৫০, বাঘারপাড়ায় ১৬ হাজার ৮৯০, মণিরামপুরে ২২ হাজার ৬০০ কেশবপুর উপজেলায় হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।

আমন মৌসুমে গুটিস্বর্ণা, ব্রি-৫১, ব্রি-৮৭, ব্রি-৯০সহ নানা জাতের আমন চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবুজ গাছে ধানের শিষ দোল খাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ধানের শিষের পাতাগুলো পচে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাতাগুলো তামাটে রঙ ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও শিষ শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় পার করছেন যশোরের কয়েক হাজার কৃষক।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, দুই বছর ধরে আমন মৌসুমে ধানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তায় থাকলেও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের কোনো খোঁজ নেননি।

মণিরামপুর উপজেলার পাতনের মাঠ গ্রামের আবদুল মতিন বলেন, দুই বিঘা জমির ধানগাছ গোড়া পুড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে করেও ফল মিলছে না। দিন দিন আক্রান্তের মাত্রা বাড়ছে।

একই এলাকার আবুল হোসেন আবাদ করেছেন পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমন। তারও পুরো জমির ধানগাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে করেও রোধ করতে পারছেন না।

বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের রফিকুল বিশ্বাস বলেন, দুই বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ফলন হয়েছে ভালো। ধানগাছের পাতা পোড়া দেখা গেছে। কৃষি কর্মকর্তারা কোনো দিন মাঠে আসেন না।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার বলেন, ধানের গোড়াপচা রোধে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তাদেরকে ব্যাকটোবান, বেকট্রোল নেকসুমিন কীটনাশকের যেকোনো একটি পরিমাণমতো ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কয়েকটি উপজেলার বেশকিছু নিচু ছায়াযুক্ত জমির ধানে আগাপোড়া গোড়াপচা রোগ দেখা দিয়েছে। যেসব জমিতে বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে সেসব জমিতে সমস্যা বেশি। জমির পানি সরিয়ে দিয়ে পটাশ ব্যবহার করলে সমস্যা দূর হবে। আমাদের উপসহকারীরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকরা সেটা না শুনে বাকির আশায় কীটনাশকের দোকানে গিয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। ফলে তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন